রাজশাহীর সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তিতে জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি, কয়েজনের বাতিল


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীতে সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির লটারিতে জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি করায় একই শিক্ষার্থীর নাম একাধিকবার আসার ঘটনারদ ঘটেছে। জন্মনিবন্ধন নম্বর জালিয়াতি ধরা পড়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন আব্দুল জলিল এঁর সভাপতিত্বে ভর্তি সংক্রান্ত কমিটির সভায় এই শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার কারণে তারা রাজশাহীর কোনো সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে না এবং কমিটির ভর্তির সুযোগ পাওয়া সব শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন নম্বর এখন যাচাই করবে।

উল্লেখ্য, সরকারি বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) লটারি করে। এতে কারিগরি সহায়তা দেয় টেলিটক। গত ৬ ডিসেম্বর অনলাইনে লটারিতে ভর্তির আবেদনের শেষ তারিখ ছিল। ১২ ডিসেম্বর লটারিতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এরপর রাজশাহীর সাতটি সরকারি বিদ্যালয়ের মধ্যে চারটির ফলাফলে দেখা যায়, একজন শিক্ষার্থীর নাম একাধিকবার এসেছে। কোনো শিক্ষার্থীর সকালের শিফটেও আছে আবার দিনের শিফটেও আছে।

আবার একজন শিক্ষার্থীর নাম তিনবার পর্যন্ত এসেছে। ভর্তি সংক্রান্ত কমিটি বিষয়টি অনুসন্ধন করতে গিয়ে দেখতে পায় যে শিক্ষার্থীদের নাম ফলাফলে একাধিকবার এসেছে, তাদের নাম বাবার ও মায়ের নাম একই থাকলেও জন্মনিবন্ধন নম্বরের কয়েকটি ডিজিট আলাদা। কিমিটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এই শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে একাধিক নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে তারা একাধিকবার আবেদন করেছে। এর জন্য লটারিতে তাদের নাম একাধিকবার এসেছে।

ভর্তি মেধা তালিকায় দেখা যায়, রাজশাহী প্রমথনাথ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে একটি বাচ্চার নাম সকালের শিফটে রয়েছে। দিনের শিফটেও রয়েছে। একবার তার জন্মনিবন্ধন এসেছে ২০১৪৮১৯৬৬০২৭০১৩৫২। তার বাবার নাম মিলন ভট্টচার্য ও মায়ের নাম রাখী রানী ভাট্টাচার্য। আরেক বার এসেছে, যেখানে সবই ঠিক আছে নিবন্ধন নম্বর এসেছে ২০১৪৮১৯৬৬০৮১০১৩৫২। দুটি নম্বরের শেষে চারটি ডিজিট একই। শুধু চার ডিজিটের আগের তিনটি ডিজিট পাল্টে দেওয়া হয়েছে। একবার লেখা হয়েছে ২৭০। পরের বার লেখা হয়েছে ৮১০। গভ. ল্যাবরেটারি হাইস্কুলের একজন শিক্ষার্থীর বাবার নাম নূরুন্নবী মিয়া ও মায়ের নাম ফেনসি আক্তার। শিশুটির নামসহ তার বাবা মায়ের নাম দুই জায়গায় একই আছে। শুধু জন্মনিবন্ধন নমম্বরটি তিন রকম পাওয়া গেছে। প্রথমবার ২০১৪৮৫১৭৪৪২১১৬১২২। পরের বার ২০১৪৮৫১৭৬৪৮১১৬১২২। প্রথম বারের সঙ্গে দ্বিতীয় বারের নম্বরের শেষে পাঁচটি ডিজিট একই আছে।

একইভাবে রাজশাহী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ফলাফলে একজন শিক্ষার্থীর একইভাবে জন্ম নিবন্ধন পরিবর্তন করে তিনবার ও রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে দুইবার এসেছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ভর্তি সংক্রান্ত কমিটির সভায় এই শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে এক অভিভাবক সোনার দেশকে বলেন, তার বাচ্চার ভর্তি নিশ্চিত করার জন্য একাধিকবার আবেদন করেছেন। এর আগে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে আরো অনেকে ভর্তি হয়েছে। তাই আমিও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আবেদন করেছি।

জানতে চাইলে অভিভাবক মিলন ভট্টচার্য বলেন, তার বাচ্চার নাম দুইবার এসেছে কি না তিনি জানেন না। তিনি দাবি করেছেন, একবার আবেদন করেছেন।

ভর্তি কমিটির সভাপতি ও রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে এই শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা একাধিক জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে একাধিকবার আবেদন করেছিলেন। লটারিতেও তাদের বাচ্চার নাম একাধিকবার এসেছে। ভর্তি সংক্রান্ত কমিটির সভায় তাদের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। তারা কোনো সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না। এছাড়া লটারিতে যারা ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে তাদের সবার নিবন্ধন নম্বর যাচাই করা হবে। জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের ভর্তিও বাতিল করা হবে।

ভর্তি কমিটির সদস্য রাজশাহী সরকারি প্রমথনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তৌহিদ আরা বলেন, সভায় তিনি উপস্থিত ছিলেন। যাদের একাধিবার নাম এসেছে, তাদের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু চিন্তার বিষয় হচ্ছে কীভাবে জন্মনিবন্ধন নম্বর জাল হচ্ছে সেটি।

স/আর