রাজশাহীর শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র যাচ্ছে নাটোরে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ছেলে শিশুদের নাটোরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রাজশাহীর এই শিশুদের ঠাঁই হবে নাটোরের দুস্থ ও ভবঘুরে প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন রাজশাহীবাসী। তারা এ প্রতিষ্ঠানের স্থানান্তর বন্ধে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন।

রাজশাহী নগরীতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের দুটি শাখা আছে। এরমধ্যে নগরীর উপশহরে তিনতলা এক ভাড়া ভবনে ছেলে শিশুদের রাখা হয়। অন্য আরেকটি শাখায় থাকে মেয়ে শিশুরা। দুটি শাখাতেই ১০০ জন করে অসহায় শিশুকে রাখার অনুমোদন রয়েছে। এখন দুটি শাখাতেই প্রায় ৬৫ জন করে শিশু রয়েছে। ছেলেদের ভবনের ভাড়া বাঁচাতে তাদের শাখাটি নাটোরে দুস্থ ও ভবঘুরে প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিজস্ব ভবনে নেওয়ার হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সমাজসেবা অধিপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক সৈয়দ মোস্তাক হাসান গত ২৭ ফেব্রæয়ারি অধিদপ্তরকে একটি চিঠি দেন। এ চিঠিতে তিনি রাজশাহীর শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ছেলে শিশুদের নাটোরে স্থানান্তর করার অনুরোধ জানান। রাজশাহীর ভবনের প্রতিমাসে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা ভাড়া সাশ্রয় করতে এ অনুরোধ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ নভেম্বর অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) সৈয়দ মো. নুরুল বাসির নাটোরে স্থানান্তরের অনুমতি দিয়ে একটি চিঠি দেন।

এখন এই শিশুদের নাটোরে নিয়ে যাওয়ার শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি চলছে। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে রাজশাহীর সচেতন নাগরিকরা। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শনিবার সকালে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে একটি মানববন্ধন কর্মসূচিও পালিত হয়েছে। কর্মসূচি থেকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানানো হয়।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, নব্বইয়ের দশকে একবার রাজশাহী থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সদর দপ্তর স্থানান্তর করে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তখন জন্ম হয়েছিল রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের। এই সংগঠনের ব্যানারে দল-মত নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। শেষ পর্যন্ত বিএনপি সরকার ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। তখন থেকেই রাজশাহীর নানা দাবি আদায়ে মাঠে নামে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। এবারও শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থানান্তরের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসা পর্যন্ত এ সংগঠন কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।

বক্তারা বলেন, এখন নির্বাচন নিয়ে সবাই ব্যস্ত। সরকারও রুটিন কাজের বাইরে কিছু করছে না। এ অবস্থায় সবার দৃষ্টি এড়িয়ে এক শ্রেণির কুচক্রী কর্মকর্তা শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নাটোরে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। রাজশাহীবাসী এই ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না।

কর্মসূচিতে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু সমাজসেবা অধিপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক সৈয়দ মোস্তাক হাসানের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনার রাজশাহী ভাল না লাগলে নাটোরে চলে যান। কিন্তু প্রতিষ্ঠান নাটোরে যাবে না। আমরা প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ে যাব। প্রতিষ্ঠানকে আমরা নাটোরে নিয়ে যেতে দেব না। আমাদের শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত রাজশাহী থেকে একটা প্রতিষ্ঠানও কোথাও যেতে দেব না।’

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘একসময় রাজশাহীর রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতার কারণে বিভাগীয় শহর থেকে অনেক প্রতিষ্ঠান বগুড়া চলে গেছে। এখন আর তা হবে না। কীভাবে ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হয় রাজশাহীর মানুষ তা জানে।’

কর্মসূচিতে পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকা এক শিশুর মা লাকি খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমরা দিনমজুরি করে খাই। একমুঠো ভাতও জোটে না কাজ না করলে। আমার সন্তান পুনর্বাসন কেন্দ্রে আছে। তাকে যেন নাটোরে নেওয়া না হয়। আমরা রক্তের বিনিময়ে হলেও এই প্রতিষ্ঠান রাজশাহীতেই রাখব।’ তিনি রাজশাহীর জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

উন্নয়নকর্মী আবদুর রহিমের সঞ্চালনায় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মো. লিয়াকত আলী। মানববন্ধন শেষে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থানান্তর না করার দাবিতে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

শিশুদের স্থানান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের রাজশাহীর উপ-প্রকল্প পরিচালক কামাল চৌধুরী বলেন, ‘প্রত্যেক জেলায় নিজস্ব ভবন তৈরি করে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র হবে। এখন রাজশাহীবাসীর উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এখন অর্থনৈতিক সংকট। ভাড়া সাশ্রয় করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

সমাজসেবা অধিপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক সৈয়দ মোস্তাক হাসান বলেন, ‘এই প্রকল্পের পরিচালক নিজে এসে ঘুরে গেছেন। নিজস্ব ভবন করতে অনেক দিন ধরে জমিও খোঁজা হচ্ছিল। কিন্তু জমি পাওয়া যায়নি। আবার ভাড়া ভবনে অনেক টাকা লাগছিল। তাই নাটোরের পরিত্যক্ত স্থায়ী ভবনে এই শিশুদের স্থানান্তর করার ব্যাপারে আমি চিঠি দেই। সম্প্রতি সেটি অনুমোদন হয়েছে। এখন শিশুদের স্থানান্তর করে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’