রাজশাহীর বাজারে ‘অতিথি’ ফল লিচু

অমিত হাসান

সদ্যই আসাছে মধুমাস। এরই মধ্যে তরমুজ, বাঙ্গী, বিভিন্ন ফলের পাশাপাশি রাজশাহীর বাজারে উঠতে শুরু করেছে ‘অতিথি’ ফল খ্যাত লিচু। তবে দেশি জাতের লিচু ছাড়া অন্য জাতের লিচু বাজারে আসেনি। আর এই লিচু আকারে ছোট, স্বাদেও টক। তাই দেশি লিচুতে মৌসুমী বেচাকেনা জমে ওঠেনি।

এদিকে, রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে লিচুর পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন, বাজারে এসেছে গুটি জাতের দেশি লিচু। মহানগরীর আশপাশের বাগানগুলো থেকে লিচু এনে বিক্রি করছেন তারা। প্রতি একশ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। দাম চড়া- এটিও মানছেন তারা। তবে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় সরবরাহ কম থাকায় দাম এবার একটু বেশি হয়েছে বলেও দাবি করছেন এ ফল ব্যবসায়ীরা। তাই মৌসুমের নতুন ফল হিসেবে তুলনামূলক একটু বেশি দামেই লিচু কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

জানা গেছে, বৃষ্টি না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রাজশাহীর ফলচাষিরা। বিশেষ করে লিচু ও আমচাষিরা রয়েছেন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। খরায় বোঁটা শুকিয়ে যাওয়ায় ঝরে পড়েছে ফল। রাজশাহী অঞ্চলে এরই মধ্যে গাছে গাছে বড় হয়েছে লিচু। কোনো কোনো গাছে পাকতে হলুদ বর্ণও ধারণ করেছে রসালো এই ফলটি। এরই মধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে লিচু। কিন্তু মন ভালো নেই লিচু চাষিদের। কারণ, এবারে তাদের প্রত্যাশিত ফলন ও ভালো মানের লিচু থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এটা অনেকটাই নিশ্চিত। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় খারাপ প্রভাব পড়েছে লিচুগাছের ওপর। সেই কারনে এবার লিচুর দামও চড়া।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, রাজশাহী জেলায় এ বছর ৫৩০ হেক্টর জমিতে লিচু গাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে ৩ হাজার ৬৯০ মেট্রিক টন লিচু পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। প্রতি হেক্টরে ৭ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে। কিন্তু সেটি এবার পূরণ নাও হতে পারে। বৃষ্টি না হওয়ায় অতি তাপমাত্রার কারণে ঝরে পড়ছে লিচু। আবার লিচুর মানও নষ্ট হয়েছে। এখন গাছ থেকে যাতে লিচু ঝরে না পড়ে সে চেষ্টাই করে যাচ্ছেন চাষিরা।

রাজশাহীর কাজলা, ধরমপুর রাবি, রুয়েটসহ বেশ কিছু এলাকার লিচু বাগান ঘুরে দেখা গেছে, খরার কারণে অনেক গুটি শুকিয়ে ঝরে পড়েছে। বড় হওয়ার পরও অনেক লিচু ঝরে যাচ্ছে। চাষিরা বলছেন, এ বছর লিচুর ফলন তেমন হয়নি। গাছে গাছে লিচুর পরিমাণ এমনিতেই কম। এর মাঝে আবার বৈরী আবহাওয়ার শিকার হচ্ছেন তারা। বৃষ্টি না হওয়ায় গাছে যেসব লিচু আছে সেগুলোও ঝরে যাওয়ায় চিন্তাও বেড়েছে।

বাগান মালিকরা বলছেন, রাজশাহী অঞ্চলে মূলত উন্নতমানের জাত হিসেবে বোম্বাই, মাদ্রাজি, কাদমি, মোজাফফরপুরী, বেদানা, কালীবাড়ি, মঙ্গলবাড়ি, চায়না-৩, বারি-১, বারি-২ ও বারি-৩ জাতের লিচু উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে বোম্বাই লিচুর চাহিদা বেশি। সবচেয়ে বেশি গাছ রয়েছে বোম্বাই লিচুরই। এবার বৈরী আবহাওয়ায় এই জাতের লিচুরই বেশি ক্ষতি হয়েছে।

গাছে লিচুর গুটি আসার আগেই বাগান কিনে নেন রাজশাহী নগরীর ব্যবসায়ী হকসেদ আলী। তিনি জানান, কয়েকদিন ধরে তিনি রাজশাহীর বাগানে বাগানে ঘুরছেন। লিচু দেখে মন ভরছে না। বাগানে এবার অর্ধেক লিচুও উৎপাদন হবে না বলেই জানান তিনি।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন বলেন, ‘গত বছর গাছে প্রচুর লিচু ধরেছিল। তাই এ বছর এমনিতেই লিচু কম ধরার কথা। এর ওপরে এবার ফুল থেকে গুটি আসা পর্যন্ত নানারকম বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে পড়েছে লিচু গাছ। তাই ফলন কম হবে।

স/অ