রাজশাহীর পথে পথে বই বিক্রেতা শিশু রহিম!

নূপুর মাহমুদ:

হাতে যখন খাতা কলম থাকার কথা, তখন তাকে জীবনের তাগিদে ছুটতে হয় পথে পথে বই হাতে নিয়ে। শিশুকাল থেকে ক্ষুধার তাড়নায় এমনভাবে ছুটে চলা শিশু রহিমের। বয়স কম হলেও, থেমে নেই বই বিক্রি করে তার এই পথ চলা।

এ যেন অন্যরকম এক বই বিক্রেতা। চাইলেও বলতে পারেন বইয়ের ফেরিওয়ালা। রাজশাহীর পথে-ঘাটে, হাট-বাজারে, ট্রেনে, পায়ে হেঁটে প্রায় ৩ বছর ধরে বই বিক্রি করছে শিশু আব্দুর রহিম (১০)।

সে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর এলাকার জামিরুল ইসলামের ছেলে। ছোটবেলা থেকে দারিদ্রতার সাথে বেড়ে ওঠায় পড়ালেখা করার সুযোগ হয়নি তার। তিন ভাই বোনকে নিয়ে অভাবের সংসারে রহিমকে কাজে বের হতে হয়েছে।

রহনপুর থেকে ট্রেনে করে এসে রাজশাহীর অলিতে গলিতে স্কুল-কলেজের বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে বই বিক্রি করে। ছোট বেলার পেটে ক্ষুধা আর ছেড়া বস্তা দিয়ে চালাতে হতো জীবন। সে অনেক সময় ভিক্ষা করেছে পেটের দায়ে। তবে এখন সেই ছোট শিশু ভিক্ষা না করে, বই বিক্রি করছে।

বয়স অনেক কম হলেও থেমে নেই বই বিক্রির জন্য তার এই পথচলা। শ্রমকষ্টকে মেনে নিয়েই বই নিয়ে ছুটছে সে।  পথে-ঘাটে পায়ে হেটে বই বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে। রাজশাহীতে তার একমাত্র ঠিকানা রেল স্টেশন। সারাদিন বই বিক্রি করে সেখানে গিয়ে রাতটা কাটায়। আবার সকাল থেকে শুরু হয় তার পথচলা।

রহিম পড়াশোনা করতে পারেনি তবে তার বই বিক্রির তালিকায় রয়েছে- কবিতা, ধর্মীয়, বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও শিশুতোষসহ নানা ধরনের বই। এছাড়া অনেক শিক্ষণীয় বইও আছে তার বিক্রির তালিকায়।

শ্রমকষ্টকে মেনে নিয়েই বই নিয়ে ছুটছে ছোট শিশুটি। রাজশাহীর বিভিন্ন পথে পায়ে হেঁটে কখনো ট্রেনে, কখনো স্কুল কলেজের সামনে, তো কখনো আবার জনসমাগম স্থানে গিয়ে বই বিক্রি করছে সে। আর বই বিক্রি করে যে অর্থ উর্পাজন হচ্ছে তা থেকেই আসছে সংসার চালানোর খরচ।

তার জীবন যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে চাইলে রহিম বলে, আমি আগে খেতে না পেয়ে ভিক্ষা করতাম। সে সময় মানুষের কাছে টাকা চাইলে অনেকে দিতো আবার দিতো না। তবে এখন যখন বই নিতে বলি তখন দেখার পর আমার থেকে তাদের প্রয়োজনীয় বই কিনে নেয়। বই বিক্রি করতে করতে পায়ে হেঁটে বিভিন্ন জায়গাতে ঘুরে বেড়ায়।

জানতে চাইলে রহিম আরো বলে, ‘বই বিক্রি ছাড়া আর উপায় নাই। বই বিক্রি করেই যে আমাকে সংসারে টাকা দিতে হয়, আমাদের নিজেদের কোনো বাড়ি নাই। ভাড়া বাড়িতে থাকি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে।’ অনেক কষ্ট হয় স্টেশনে ঘুমাতে। তারপরও সারাদিন হেঁটে বই বিক্রি করি। বই বিক্রির টাকা দিয়ে একটু খাইতে পাই। বাড়িতে দিতে পারি কিছু টাকা। ২ দিন পর পর বই কিনি আর বিক্রি করি।

বই কিনতে দেখে সাদ্দাম হোসেন নামে এক ক্রেতার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোট একটা শিশু সামনে বই ধরে যখন বলে ভাইয়া একটা বই নেন তখন দেখে কষ্ট হলেও ভালো লাগে, এই ভেবে যে ভিক্ষা না করে সে একটা কাজ করে জীবন চালাচ্ছে।

এদিকে শীতের আবহাওয়ায় তাকে বই নিয়ে পথ চলতে দেখা যায়। আর চলবেই না কেন বই বিক্রিই যে তার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম।

 

স/অ