রাজশাহীর ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান অনিন্দ্য’র জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা!

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মোন্তাসির মেহেদী হাসান ওরফে অনিন্দ্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান অনিন্দ্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি নিহত রেজাউল করিমের বিভাগেরই শিক্ষার্থী। রাবির ইংরেজী বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিন্দ্য।
পুলিশের ভাষ্য মতে, গত শনিবার রাতে রজাশাহী মহানগর অনিন্দ্য’র বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। অনিন্দ্য মহানগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ও মহানগর বিএনপির সহসভাপতি শফিউল আলম লাটকুর ছেলে।

লাটকুর ভাই মাহফুজুল আলম লোটন হলেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি। তাদের নিকটাত্মীয় হলেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা। বলা যায় অনিন্দ্যর বাবা ও তার পরিবার বাদে তাদের নিকটাত্মীয়রা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত দীর্ঘদিন ধরে।

রাজশাহী নগরীতে এই পরিবারটির নাম-ডাক অনেকটা সুনামের। আবার ধনাঢ্য পরিবার বলেও পরিচিতি। নগরীজুড়ে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তিও রয়েছে বেশ। সেই পরিবারের সন্তান অনিন্দ্য এখন জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কারাগারে আটক। এ নিয়ে নগরজুড়ে শুরু হয়েছে বেশ আলোচনা-সমালোচনা।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মূখপাত্র ইফতে খায়ের আলম সিল্কসিটি নিউজকে জানান, শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অনিন্দ্যকে অনেক আগ থেকেই পুলিশ নজরদারিতে রাখে। এরই মধ্যে অনিন্দ্য ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে অনেকটা নিশ্চিত হয়েই তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ।’

ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলছিলেন, ‘রেজাউল করিম হত্যা মামলায় অনিন্দকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত রবিবার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলে তাকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে রিমান্ড শুনানী হয়নি।’

এদিকে অনিন্দ্য’র একাধিক সহপাঠি নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিল্কসিটি নিউজকে জানান, ২০০৯-১০ শিক্ষা বর্ষে ইংরেজী বিভাগে ভর্তি হওয়া রাবির এই শিক্ষার্থী শুরু থেকেই অনেকটা সাদা-মাটা জীবন-যাপন করতে থাকেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই তাকে ছাত্রলীগের রাবি কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়। আহমেদ-বিপুর নেতৃত্বাধীন ওই কমিটির উপ-আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক করা হয় অনিন্দ্যকে। এরপর থেকেই অনিন্দ্য’র জীবনের মোড় ঘুরতে থাকে।

তিনি রাবিতে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে বিভিন্ন সময়ে মারপিটের নেতৃত্ব দিতে থাকেন ওই সময়ে। আবার রাবিজুড়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত হয়ে পড়েন।

পরবর্তিতে অনিন্দ্য ধিরে ধিরে নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকেন। তিনি দাড়ি-টুপিওয়ালা অনিন্দ্য হয়ে ওঠেন একপর্যায়ে।

এরপর থেকেই অনিন্দ্য অনিয়মিত হয়ে উঠেন রাবিতে। মাঝে মাঝে ক্লাসে যেতেন আবার যেতনও না। কাঁধে একটি ব্যাগ নিয়ে চলা-ফেরা করতেন। যার মধ্যে থাকতো ইসলামিক বইপত্র। এভাবেই অনিন্দ্য’র জীবনের পরিবর্তন ঘটতে থাকে বলেও দাবি করেন তার ঘনিষ্টজনরা।

অনিন্দ্য’র ঘোনিষ্টজনরা আরো দাবি করেন, অনিন্দ্য জঙ্গি হয়ে উঠবেন এখনো অনেকেই বিশ্বাস করতেও পারছেন না। তারমতো ধনাঢ্য পরিবারের একটি ছেলের জীবনে এরকম পরিবর্তন কিভাবে ঘটলো বা কারা তাকে এই পথে ধাবিত করতে সহায়তা করলো-তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ এপ্রিল নিজ বাসার সামনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বগুড়ার শিবগঞ্জ থেকে জেএমবি সদস্য মাসকাওয়াত হাসান সাকিব ওরফে আব্দুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। আব্দুল্লাহ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এছাড়াও আরো ৫ জনকে এ মামলায় এর আগেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এর মধ্যে হাফিজুর রহমান নামের এক শিবিরকর্মী মারা যান।

স/আর