রাজশাহীর জাকিরের ১৯৪টি দেশের ‘কয়েন’ সংগ্রশালা

শাহিনুল আশিক:


কয়েন জমানো গল্পটা ২৫ বছর আগের। মূলত ছোট বেলায় ভালোবাসা থেকে নেশা হয়ে দাঁড়ায় কয়েন জমানো। এই ৩৫ বছর বয়সেও কয়েন জমানোর নেশা কাটেনি জাকির হাসান খানের। পৃথিবীর ১৯৪টি দেশের কয়েনের এক বিশাল সংগ্রহশালা জাকিরের। তার কাছে শুধুমাত্র সেনেগালের কয়েন নেই। সমৃদ্ধ কয়েনের সংগ্রহশালায় রয়েছে সুলতান ও মুঘল আমল ছাড়াও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার কয়েন। শুধু তাই নয়, আলেক্সান্ডার দি গ্রেটসহ রোমান, মৌর্য ও সাসানিয়ান সাম্রাজ্যের কয়েন রয়েছে।

জাকির জানান, ‘বাবা চিকিৎসক ও মা নার্স ছিলেন। কর্মসূত্রে তারা লিবিয়ায় থাকতেন। তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম। সেই দেশের কয়েনগুলো দেখতে বেশ দারুন। মূলত সেই দেশের কয়েনগুলো দিয়ে সংগ্রহ শুরু হয় ২৫ বছর আগে। তখন আমি সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিলাম।’



সরেজমিনে নগরীর কাদিরগঞ্জ ষষ্ঠিতলা এলাকার জাকির হোসেন খানের বাড়িতে দেখা যায় কয়েনের সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা। তার ঘরের একটি ওয়ারড্রোপের পুরো ডয়ার কয়েনে ভর্তি। প্রতিটি দেশের কয়েন প্যাকেটিং (কয়েন ফ্লিপ) করা হয়েছে। যাতে করে দুই পাশ থেকে কয়েনগুলো দেখা যায়। এছাড়া প্যাকেটের মাথায় দেশের নাম ও নিচে সাল উল্লেখ আছে। কয়েনগুলো ছোট ছোট প্লাস্টিকের বক্সের ভেতরে রাখা হয়েছে।

দেখা গেছে- সুইস ক্যান্টন লুজার্ন-১৮৪৪, টোঙ্গা-১৯৭৪, ভেনিজুয়েলা-১৯৫৪, কাজাখস্তান-২০১৯, গাম্বিয়া-১৯৮৭, সোয়াজিল্যান্ড- ১৯৭৫, অস্ট্রিয়া-১৯৬৪, ফ্রান্স-১৯৩৫, ম্যাকাও-১৯৯২, আর্জেন্টিনা-১৯৮৯, মালাগাসি-১৯৭৮, ভুটান-১৯৭৯, ডেনমার্ক-১৯৮৯, জার্মানি-১৯৩৮, মালি-১৯৭৫, মালাউই-২০০৪ সালের ইত্যাদি কয়েন রয়েছে।

কয়েন পাওয়া-না পাওয়ার বিষয়ে জাকির হোসেন জানান, ‘আমি দেখতে ছোট বেলা থেকে অনেক কিউট। তাই বন্ধু-বান্ধবীর মা-বাবা অনেক ভালোবাসতো। আমি কয়েন জমায়, তারা জানার পর থেকে আমাকে বিভিন্ন দেশের কয়েন দিয়ে সাহায্য করতো। এছাড়া আমি যদি জানতাম, কারো কাছে অন্য দেশের কয়েন আছে, তখন আমি চাইতাম। কয়েন চাইলে তারা কখনো ফেরাতো না।’



সংগ্রশালায় দেখা গেছে, ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ার ১০০ বেশি কয়েন রয়েছে। রোমান প্রিয়ডের (সময়ের) কয়েন রয়েছে। যা ২ হাজার শতাব্দী পুরানো। এছাড়া আলেক্সান্ডার দি গ্রেট এর সময়ের কয়েন রয়েছে। যা দুই হাজার বছর আগের পুরানো। এছাড়া ইউলিয়াম ফোর এর কয়েন রয়েছে।

জাকির হোসেন জানান, ‘কয়েনগুলো বিভিন্নভাবে জমিয়েছি। কখনও বন্ধু-বান্ধবী, কখনও আত্মীয়দের মাধ্যমে। সর্বশেষ চাকরি জীবনে এসে কলিগদের (সহকর্মী) মধ্যেমে। কলিগরা বিভিন্ন দেশে গেলে তাদের বলি- আমার জন্য সেই দেশের কয়েন আনার জন্য। তারাও কয়েন আনতো।

মজার ব্যাপার হলো অনেক সময় দেখা যেতো একটি দেশের দুইটি কয়েন হয়ে গেলো। তখন সেটি আমার ছেলে জাহিন হোসেন খানকে (১০) দিয়ে দেয়। ওরও (জাহিন) কয়েন জমানো অ্যালবাম রয়েছে। তার কাছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের কয়েন রয়েছে।’



জাকির জানায়, বর্তমান পৃথিবীর ১৯৫টি দেশের মধ্যে ১৯৪টি দেশের কয়েন আছে তার কাছে। শুধু মাত্র নেই সেনেগালের কয়েন। বর্তমান দেশ, কলোনিয়ান দেশ, দ্বীপ, বিলুপ্ত দেশ, ইত্যাদি মিলিয়ে মোট ৩৮৫ টি এলাকার কয়েন রয়েছে তার সংরক্ষণে। এছাড়া অল্প কিছু সুলতান ও মুঘল আমলের কয়েন আছে।

তিনি আরও জানান, অল্প কিছু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার কয়েন আছে। এছাড়া আলেক্সান্ডার দি গ্রেট সহ অল্প কিছু রোমান সম্রাজ্যের কয়েন, মৌর্য সম্রাজ্যের কয়েন, সাসানিয়ান সম্রাজ্যের কয়েন আছে তার সংগ্রহে।

তিনি বলেন, কয়েন জমানো শুধু ভালোলাগা হলে এতোগুলো দেশের কয়েন জমানো সম্ভব হতো না। মূলত নেশা থেকেই সম্ভব হয়েছে। অনেক সময় কয়েন কোন দেশের, নাম সাল নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তখন গুগলের সাহায্য নিতে হয়। আমার কাছে সবচেয়ে খুশির বিষয়, অপরিচিত কেউ কোনো দেশের একটি কয়েন আমাকে দিলো।

স/আ