রাজশাহীর গাঙপাড়া বসতি উচ্ছেদ: আরও এক জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী মহানগরীর গাঙপাড়া বসতির আরও এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে। তার নাম মোশাররফ হোসেন (৬৫)। আজ রোববার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।

গত ২২ ডিসেম্বর গাঙপাড়া বসতি থেকে প্রায় ২৩০টি পরিবারকে উচ্ছেদ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। মোশাররফের পরিবারের সদস্যদের দাবি, বসতবাড়ি ভেঙে দেয়ার কারণে সেদিনই ব্রেইন স্ট্রোক করেছিলেন মোশাররফ। এরপর তিনি অসুস্থই ছিলেন। রোববার সকালে তিনি মারা যান।

বসতির বাসিন্দারা জানান, ৪০ বছরের পুরনো এই বসতি উচ্ছেদের যখন কথাবার্তা যখন চলছিল তখন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে উম্মত আলী নামের এক ব্যক্তি মারা যান। এছাড়া উচ্ছেদের পর এই এক মাসে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে আবদুস সালাম, সুফিয়া বেগম, সায়েরা বেগম ও আবদুর রাজ্জাক নামে চারজন নারী-পুরুষ মারা যান। সর্বশেষ মারা গেলেন মোশাররফ হোসেন।

তার ছেলে বাইদুল ইসলাম জানান, তারা গাঙপাড়া বসতিতেই বড় হয়েছেন। হঠাৎ উন্নয়নের নামে গাঙপাড়া খালের দুই পাড় উচ্ছেদ করা শুরু হয়। সেদিনই তার বাবা স্ট্রোক করেন। এরপর অসুস্থই ছিলেন। রোববার সকালে দুরুলের মোড়ের ভাড়া বাড়িতে তার বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। সেখান থেকে রামেক হাসপাতালে নেয়ার পথেই তার বাবার মৃত্যু হয়। দুপুরে গাঙপাড়া কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।

এদিকে বসতি থেকে উচ্ছেদের পর এখনও শতাধিক পরিবার গাঙপাড়া খালের পাড়ে চটের বস্তা, চাঁটাই আর টিন দিয়ে কোনো রকমে একটি ঘর করে বসবাস করছেন। সে ঘরেই গবাদি পশু ও মানুষ গাদাগাদি করে থাকছে। এই শীতের মধ্যে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আক্রান্ত হচ্ছেন শীতজনিত রোগে।

এই শীতের মধ্যে বসতিবাসীকে উচ্ছেদ না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। উচ্ছেদের দিন দিন বসতিতে গিয়ে উচ্ছেদকারীদের কাছে কিছু দিন সময় চান। তিনি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বসে ছিলেন। যতক্ষণ ছিলেন ততক্ষণ উচ্ছেদ করা হয়নি। তিনি চলে যাওয়ার পর গুড়িয়ে দেওয়া হয় সবার বাড়িঘর।

এখন বসতির মানুষের একের পর এক মৃত্যুর জন্য উচ্ছেদকারীদের দায়ি করছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, পুনর্বাসনের আগে যারা উচ্ছেদ করেছেন তারা দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে খুবই অমানবিক কাজ করেছেন। এখন হতাশায়, শীতে একের পর এক মানুষ মারা যাচ্ছেন। এর দায় উচ্ছেদকারীদেরই নিতে হবে। আমি তাদের শাস্তি চাই।

এদিকে, পুরো বসতির মানুষই ঘরবাড়ি হারিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। এলাকার লোকজন জানালেন, ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে দেয়ার পর টেনশনে এবং শীতজনিত রোগে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

ঘর ভেঙে দেয়ার পর কেউ কেউ পাশের কারও জমিতে কিংবা কারও বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন। উদ্বাস্তু হয়ে কেউ কেউ নিয়েছেন বাড়ি ভাড়া। তবে এখনও অনেক মানুষ ভেঙে দেয়া বাড়ির ভিটায় টিনের অস্থায়ী একটা ঘর তুলে বসবাসের চেষ্টা করছেন। একটা ঘরেই গবাদিপশুর সঙ্গে থাকছেন তারা। বন্ধ হয়ে গেছে শিশুদের পড়াশোনা। নিদারুণ কষ্টে আছেন তারা।

স/অ