রাজশাহীর একটি ক্লিনিকে নরমাল ডেলিভারিতেও অস্বাভাবিক বিল আদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কথা ছিলো নরমাল ডেলিভেরির ক্ষেত্রে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হবে। আর সিজারিয়ানের ক্ষেত্রে ২২ হাজার টাকা দিতে হবে। সেই অনুযায়ী প্রসূতি আঁখির (২০) স্বামী মো. মিলন প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। কিন্তু ভর্তির কিছুক্ষণ পরেই ওই গর্ভবতি আঁঁখি সন্তান প্রসব করেন। তবে স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধপত্র কিনেতে হয়েছে রোগীর স্বামীকেই।

তার পরেও কয়েক দফা ধন্না দেওয়ার পরে ২২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে রাজশাহী মডেল হাসপাতালে বিল করেছে ১৫ হাজার ৬০০ টাকা।

ভুক্তভোগী মিলন জানান, গত শনিবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে প্রসব বেদনা নিয়ে রাজশাহী মডেল হাসপাতালে ভর্তি হন নাটোরের লালপুর থেকে আসা মিলন দম্পতি। এর পরে হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, নরমাল ডেলিভেরিতে প্রায় ৬ হাজার টাকা খরচ হবে। আর সিজারিয়ানের জন্য ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকা খরচ হবে। আপনারা রোগিকে ভর্তি করান।

তিনি বলেন, এর পরে আমি (মিলন) রোগিকে ভর্তি করায় রাজশাহী মডেল হাসপাতালে। ভর্তির কয়েক ঘন্টা পরে একটি স্যালাইন নার্স দিলে কিছুক্ষণ পরে আঁখি সন্তান প্রসব করেন। এর পরে স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধ একের পর কিনে দেয় আমি। হাসপাতাল থেকে কোনো ওষুধ-স্যালাইন দেয়নি। তার পরে রোববার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় তাদের মোট বিল ২২ হাজার ৫০০ টাকা।’

মিলন তাদের কাছে জানতে চান, নরমাল ডেলিভেরিতে এতো টাকা কেনো? আপানারা তো ভর্তির সময় বলেছিলেন, পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা লাগবে। তাহলে এতো টাকা কেনো? এমন কথার উত্তরে মামুন অর রশিদ জানায়, ২২ হাজার ৫০০ টাকা আপনাদের বিল। এই টাকা দিতে হবে। কাছে সম্পন্ন টাকা না থাকায় মিলন ওই রাতে ১৫ হাজার টাকা দেয় কাউন্টারে। সকালে লোক ধরাধরি করায় ফের বিল করে ১৫ হাজার ৬০০ টাকা।

মিলন অভিযাগ করে বলেন, সম্পূর্ণ ওষুধ কিনে সরবারহ করা হয়েছে। দুই দিনে রাজশাহী মডেল হাসপাতাল থেকে লেখে দেওয়া ৯টি স্লিপে (ওষুধে প্রেসকিশন) ৩৩টি ওষুধপত্রাদি কিনে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরও বিলের কপিতে মেডিসেন বাবদ ২ হাজার ৫০০ টাকা ধরেছে। এছাড়া সার্জন চার্জ ধরেছে ৮ হাজার, এসিস্টেন ফি ১ হাজার টাকা, ওটি চার্জ ২ হাজার টাকা, ক্যাবিন চার্জ ১ হাজার ৬০০ টাকা ও সার্ভিস চার্জ ৫০০ মিলে ১৫ হাজার ৬০০ টাকার বিল ধরিয়েছে রোগীর স্বামীকে।

ভুক্তভোগী মিলন আরও বলেন, এই ধরনের হাসপাতালগুলো মানুষের সাথে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করছে। প্রতিটি মানুষের আর্থিক অবস্থা এক না। অনেকেই আছেন হতদরিদ্র। তাদের নরমাল ডেলিভেরি হলেও ২২-২৩ হাজার টাকা বিল করলে তারা কি করবে। রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়াতে কিছু না কিছু বিক্রি করে টাকা দিতে হবে। তা ছাড়া উপাই নেই। চিকিৎসার নামে প্রতারণাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আনা দরকার।

রাজশাহী মডেল হাসপাতালের ম্যানেজার মামুন অর রশিদ জানান, নরমাল ডেলিভেরির ক্ষেত্রে ৬ থেকে সাত হাজার টাকা নেওয়া হয়। আর সিজারিয়ান ১৫ হাজার। রোগি আঁখির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সার্জনের উপরে নির্ভর করে চার্জ। সিনিয়ররা চিকিৎকদের ক্ষেত্রে বিল বেশি আছে।’ আঁখির সব ওষুধপত্র কিনে দেওয়ার পরে ১৫ হাজার ৬০০ টাকা বিলের বিষয়ে জানতে চাইলে ম্যানেজার মামুন কোন মন্তব্য ছাড়ায় কল কেটে দেন।

স/আর