রাজশাহীর উন্নয়ন থমকে আছে, মানুষ এখনো ফিল করে আমাকে-বুলবুল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সরকার ক্ষমতায় থাকলে কাজ হয়, আর ক্ষমতায় না থাকলে কোনো জনপ্রতিনিধি কাজ করতে পারে না-এটা ভুল ধারণা। একজন জনপ্রতিনিধির ইচ্ছেশক্তি থাকলে তিনি অবশ্যই কাজ করতে পারবেন। সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণ করতে পারবেন। সেই কাজটিই আমি করে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। ফলে মাত্র এক বছরে রাজশাহী নগরীর অনেক উন্নয়নও করতে পেরেছি। কিন্তু সেখান থেকে আমাকে বিচ্যুতি করা হয়েছে। এতে করে রাজশাহী নগরবাসীও তাদের কাঙ্খিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এখনো হচ্ছে। তবে নগরবাসী এখনো আমাকে ভালবাসেন, আমাকে ফিল করেন।

কথাগুলো রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বহিস্কৃত মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের। শনিবার রাতে নগরীর রেলগেট এলাকায় ফুটপাতে দাঁড়িয়ে চা পান করতে করতে সিল্কসিটিনিউজের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন মিষ্টভাষি বুলবুল।

45ওই আড্ডায় উঠে আসে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে দেশে চলমান বিএনপি-জামসায়াতের নাশকতা চলাকালীন সময়ে তিনি কেন গা ঢাঁকা দেদিয়েছিনে, তার অবর্তমানে রাসিকের কাজগুলো কিভাবে চলেছে, তার মামলাগুলো বর্তমান কি অবস্থা-এমন নানা প্রশ্নের উত্তর। সিল্কসিটি নিউজের পাঠকদের জন্য এ পর্বে সেসব তুলে ধরা হলো।

রাজশাহী মহানগর মহানগর যুবদলের আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর দ্রুত আটক হলে আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো নিয়ে আমি সঠিক পথে এগুতে পারতাম না। কারাগারে থেকে মামলাগুলো দেখভালের সুযোগ হতো না। সঠিক আইনজীবিও নিয়োগ দিতে পারতাম না। যেটি আমি বাইরে পলাতক থেকে অনায়াসে করতে পেরেছি। ঢাকায় পলাতক থেকে উচ্চ আদালতে নিয়মিত যাতায়াত করতে পেরেছি। মামলাগুলো নিয়ে সঠিক আইনজীবীর মাধ্যমে আইনগতভাবেই লড়তে পেরেছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে বুলবুল তিনি সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘আমাকে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। তবে এখন আর চাইলে মামলা দায়ের হওয়ার পরে রায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধিকে সরকার বরখাস্ত করতে পারবে না। আইন তার অনুমতি দিবে না। এই আইনটি নিয়েই আমি আদালতে লড়েছি। আশা করেছি আমাকে অবৈধভাবে বরখাস্তের আদেশটি বাতিল করে দেওয়া উচ্চ আদালতের রায়ের কপিটি দ্রুত হাতে পাব।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, রায়ের কপি হাতে পেলেই আমি আবার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব ফিরে পাব। সে পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করছি। আশা করছি দ্রুতই রাজশাহীবাসীর কাছে আবার মেয়র হিসেবে ফিরে আসবো। তাদের চাওয়া-পাওয়াগুলো নিয়ে বাকি সময়টুকু কাজ করতে পারবো।

বুলবুল বলেন, যখন কাজ শুরু করেছিলাম, ‘তখনোই আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। 47তবে আবার জনগণের চাহিদামতো কাজ করতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। যদিও বাকি সময়টুকু নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েই আমাকে কাটাতে হবে। তবে আমি প্রস্তুত আছি সেসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে।’

আরকে প্রশ্নের জবাবে বুলবুল বলেন, ‘প্রায় এক বছর ঢাকায় ছিলাম। ওই সময়ে চাইলে প্রশাসন আমাকে আটক করতে পারতো, কিন্তু তারা হয়তো চেয়েছিল, আমি রাজশাহীর বাইরে থাকি। রাজশাহীর বাইরে থাকায় তারা সে কারণেই আমাকে হয়তো গ্রেপ্তার করেনি।’

আত্মসমর্পণের পর কারাগারে বসে কেমন কেটেছে সময়গুলো, জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকটা সময় কেটেছে বই পড়ে। সবমিলিয়ে ৪০টি বই পড়েছি আমি। তবে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে বইগুলো রাজশাহী কর্তৃপক্ষকে উপহারে দিয়ে এসেছি।’

রাজশাহীর বিএনপির রাজনীতি কোনপথে? জানতে চাইলে বুলবুল বলেন, এখন সারাদেশ আন্তজার্তিক রাজনীতির দিকে তাকিয়ে আছে। আমরাও সেদিকেই তাকিয়ে আছি। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির দিকেই রাজশাহীর রাজনীতি তাকিয়ে আছে।

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে দাবি করে বুলবুল বলেন, ‘একজন কাউন্সিলর দায়িত্ব পেয়ে নগরীর কোনো উন্নয়ন করতে পারছেন না। তিনি পারবেনও না। কারণ তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভবও না। এ কারণেই রাজশাহীর উন্নয়ন এখন থমকে আছে। মাত্র এক বছরের মধ্যে যেসব প্রকল্পগুলো আমি সরকারের নিকট থেকে পেয়েছিলাম, সেগুলোও এখন স্থগিত হয়ে আছে।’

রাজশাহী নগরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে বুলবুল বলেন, ‘তারা আমাকে ভালবাসেন বলেই আমি মেয়র হতে পেরেছি। এখনো আমার প্রতি এ নগরবাসীর দৃঢ় আস্থা রয়েছে। আমি সেই আস্থার প্রতিদানও দিতে চাই। রাজশাহীর উন্নয়নে আমি কাজ করে যেতে চাই।’

স/আর