রাজশাহীতে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীতে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেধে দিয়েছে রাজশাহীর সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। এই সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হলে মামলাটি অন্য সংস্থার কাছে হস্তান্তরের দাবিও জানান তার। এটি না হলে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) কার্যালয় ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারী দেন সাংবাদিকরা।

আজ রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েনের (আরটিজেএ) আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনোত্তর বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা এমন দবি জানান।

রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান শ্যামলের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব রাশেদ রিপন, স্থানীয় দৈনিক সোনারদেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত, স্থানীয় দৈনিক সোনালী সংবাদের সম্পাদক লিয়াকত আলী, সিনিয়র সাংবাদিক ও গবেষক আহমেদ সফিউদ্দিন, বিএফইউজে’র নির্বাহী পরিষদ সদস্য বদরুল হাসান লিটন, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, রাজশাহী ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে আরটিজেএ’র সভাপতি মেহেদী হাসান শ্যামল বলেন, ‘এটিএন নিউজের ক্যামেরপার্সন রুবেলের কানের পর্দা যেভাবে ফাটানো হয়েছে যা খুবই অমানবিক। বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশীদ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই হামলার সাথে জড়িত। আপনি (আব্দুর রশিদ) যেই পদে বসে আছেন সেই পদটি আপনি অবৈধভাবে দখল করে আছেন। ৮ বছর থেকে তিনি এই পদে রয়েছেন। অথচ বিএমডিএ’র এই শীর্ষপদে থাকার কথা একজন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। বিএমডিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারিরা সেদিন এটিএন নিউজের রাজশাহী প্রতিনিধি বুলবুল হাবিবকে মারতে মারতে বিএমডিএ’র কার্যালয়ের সামনে থেকে প্রায় দেড়শত কিলোমিটার দূরে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা জনসম্মুখে ঘোষণা দিচ্ছি, যদি তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাহলে রাজশাহীর সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে আপনাদেরকে (বিএমডিএ কর্মকর্তা-কর্মচারী) টেনে-হিচড়ে দেড় হাজার কিলোমিটার নিয়ে যাবো।’

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘রাজশাহীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসার ৫ দিন অতিবাহিত হয়েছে। তিনি আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন, তদন্ত সাপেক্ষে আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু আপনি (কমিশনার) কার ছত্রছায়ায় থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করছেন না।’ আসামিকরা কে কোথায় আছেন তার তথ্য জানিয়ে পুলিশ কমিশনারের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ‘ আসামিরা কে কোথায় অবস্থান করছে, কখন কোথায় যাচ্ছে তার তথ্য আমরা আপনাকে দিয়ে দিলাম। তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। যদি না পারেন তাহলে ব্যর্থতা স্বীকার মামলাটির দ্বায়ভার অন্য কোনো সংস্থার কাছে হস্তান্তর করুন। অন্যথায় বিএমডিএ কার্যালয় ঘেরাওসহ আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।’

রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা বিএমডিএ কে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। আপনারা ঘুষ খাবেন, দুর্নীতি করবেন কিন্তু কিছু মাদকসেবী সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে ফেসবুকে মূলধারার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন। জেনে রাখুন, এই মাদকসেবী সন্ত্রাসীরা আপনাদের রক্ষা করতে পারবে না।’ পুলিশ কমিশনারসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে এই সাংবাদিক নেতা আরও বলেন, ‘মাননীয় পুলিশ কমিশনার আপনি আসামিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। আমরা সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে আপনাদের সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান করে থাকি। অন্যান্য বাহিনীগুলোকেও আমরা সহযোগিতা করি। কিন্তু একজন সংবাদকর্মীকে যেভাবে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে, কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপরও আসামিদের গ্রেপ্তারে আপনার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দিতে আমরা বাধ্য হবো।’

উল্লেখ্য, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ কার্যালয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর এটিএন নিউজের দুই সাংবাদিক হামলার শিকার হন। এ ঘটনায় সাতজনের নাম উল্লেখসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। কিন্তু এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এএইচ/এস