রাজশাহীতে সম্প্রীতি সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণের আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীতে সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার বিকেল নগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে বড় মসজিদের সামনে সম্প্রীতি বাংলাদেশের আয়োজনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে সম্প্রীতি বাংলাদেশ’র আহ্বায়ক অভিনেতা পিযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই ভূখন্ডে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা এবং বঙ্গপোসাগরের কোলে কোলে যে জনগোষ্ঠীর বাস, সেই জনপদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে, সৌহার্দ, ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্ত আমরা দেখেছি এই ইতিহাস ও ঐতিহ্যের উপরে বারবার একটি কুচক্রি মহল, ষড়যন্ত্রকারী মহল আঘাত হানে। বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে এদেশের সকল মানুষকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন এবং আমরা সেই মুক্তিযুদ্ধে সবাই ঝাপিয়ে পড়েছিলাম। সেখানে কে মুসলমান, কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ্য, কে খ্রিস্টান সেটা আমরা বিচার করিনি। আমরা সমানভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছিলাম, প্রত্যেকে হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সোনার বাংলাকে মুক্ত করেছিলাম, স্বাধীন করেছিলাম। তার মানে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের দর্শনে যদি আমরা দাঁড়াই তাহলে আমাদের সম্প্রীতির বন্ধনে থাকতে হবেই হবে। যে যেই দলের রাজনীতি করুক না কেন, একাত্তর ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দাঁড়াতে হবে। তা না করলে আপনার এই দেশে রাজনীতি করার অধিকার নাই।

তিনি আরো বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে আমরা কতগুলো আশঙ্কা করছি, যে সম্প্রীতি বিনষ্টকারীরা, সাম্প্রদায়িক শক্তিরা বিগত দিনের নির্বাচনে যেমন করেছে, এই নির্বাচনেও তেমন পেছন থেকে ছোবল মারতে পারে। আসুন আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শে একসাথে হই এবং হাজার বছরের ঐহিত্যকে ধারণ করে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে জোটবদ্ধভাবে আমরা একসাথে হবো।

পিযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় আরো বলেন, নতুন ভোটারদের বলতে চাই, বাংলাদেশের ইতিহাস যদি জানেন, মুক্তিযুদ্ধের ও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস যদি জানেন, তাহলে আপনাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে যারা নির্বাচন করবেন তাদেরকে ভোট দিতে হবে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াস করে না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দর্শনকে ধ্বংস করতে চায়, তরুণ সমাজকে সাথে নিয়ে সম্প্রীতি বাংলাদেশ তাদের রুখে দিবে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াস করি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করি, এই বাংলাদেশটা আমাদের। এই বাংলাদেশ রাজাকারের না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানবতাবিরোধীদের নয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস একটু জানলে আমাদের মন আরো পরিস্কার হতে পারে। কারণ আমরা একাত্তর সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে আলো জ¦ালাতে পেরেছি বটে, কিন্তু সেই আলো ঘরে ঘরে, বাড়িতে বাড়িতে, মানুষের হাতে হাতে জুড়িয়ে দিতে পারিনি। তা পারতে হলে এমন একটা সমাজ গড়া দরকার, যে সমাজে কোনো নিরক্ষতা থাকবে না, সম্পদের মোটামুটি সুষম বন্টন থাকবে।

এসময় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা সংগ্রামের আগে যে স্বপ্নগুলো বাঙালির মনের মধ্যে, চেতনার মধ্যে রোপন করেছিলেন, তার মধ্যে একটি ছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনা অর্থাৎ বাংলা নামক দেশটি সকল প্রকার সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প থেকে অনেক উপরে থাকবে। আমাদের সংবিধানে পরিস্কারভাবে বলা আছে, রাষ্ট্র সকল নাগরিকদের প্রতি সমান আচরণ করবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার জন্যে নিরসলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর সেই হাতকে শক্তিশালী করে আগামী দিনে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যহত রাখার স্বার্থে আরেকটিবার দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে।

ভাষা সৈনিক আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম আব্দুস সোবহান, ভাষা সৈনিক মোশাররফ হোসেন আকুঞ্জি, কবি ও সংগঠক অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামাণিক, কলামিস্ট প্রশান্ত কুমার সাহা, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্য সাবেক সহ-সভাপতি ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্না, রাজশাহী জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি কল্পনা রায় প্রমুখ। সমাবেশে ইসলাম, খ্রিস্টান, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।

স/শা