রাজশাহীতে শিকার করা বাদুড়ের মাংস যাচ্ছে যশোরের হোটেলে

পুঠিয়া প্রতিনিধিঃ

বাদুড় নিশাচর প্রাণী। দিনের বেলায় অন্ধকার স্থানে উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে। রাতের বেলা তারা দল বেঁধে বের হয় খাবার সংগ্রহে। এক শ্রেনীর মানুষ অভিনব কায়দায় খাদ্য সংগ্রহে বের হওয়া বাদুরগুলো শিকার করে হত্যা করছে। হত্যা করা বাদুড়গুলো তারা বিভিন্ন খাবার হোটেলে মাংস হিসেবে বিক্রি করে বলে বাদুড় শিকারীদের সুত্রে জানা গেছে।

শিকার করা বাদুড় বস্তাবন্দী করে পাচার করার সময় দু’জন শিকারীকে স্থানীয়রা আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা মৃত বাদুড় হোটেলে মাংস হিসেবে বিক্রি করেন বলে স্বীকার করেন।

ঘটনাটি ঘটেছে আজ শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা সদর ঢাকা-রাজশাহী বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। দুই বাদুর শিকারীকে এক বস্তায় আনুমানিক ২০/২৫ টি হত্যা করা বাদুড় মাংস হিসেবে যশোর হোটেলে বিক্রি করেন বলেও জানিয়েছে তারা। পরে অবশ্য তাদের ছেড়ে দেয়া হলে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

বাসস্ট্যান্ড এলাকার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী এ কথা স্বীকার করেছেন। তবে শিকারী দু’জনের নাম পরিচয় জানাতে পারেনি। সে সময় স্থানীয় সাংবাদিক কে এম রেজাও ছিলেন বাসস্ট্যান্ডে। তিনি বস্তায় রাখা মৃত বাদুড়সহ শিকারি দু’জনের ছবি তুলে তার ব্যাক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে একটি পোষ্ট শেয়ার করেন।

ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “কোথায় থেকে দুই ব্যক্তি ছোট বস্তার ভেতর ঢুকিয়ে বেশ কিছু বাদুড় শিকার করে, যশোরের বাসে উঠার চেষ্টা করছিল। তাদের ছবি উঠানোর পর, তারা দুইজন কান্নাকাটি শুরু করে এবং (বাদুর শিকার করে হত্যা করায়) ভুল স্বীকার করে।

এসময় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন, হত্যা করা বাদুড়গুলো যশোরের হোটেলে মাংস হিসাবে বিক্রি করে থাকে। তার পোষ্টটিতে অনেকেই হোটেলে বিক্রি হওয়া মাংসের গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা ছাড়াও বাদুড় হত্যা করায় বন্যপ্রানী আইনে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশসনের দৃষ্টি আকর্ষন করে মন্তব্য করেছেন।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি শীত মৌসুমে এ উপজেলায় প্রচুর পরিমানে খেজুর গুড় উৎপাদন হয়ে থাকে। বাদুরও রাতের বেলা খেজুড়ের রস খেতে খেজুর গাছে আসে। এছাড়াও গাছের বিভিন্ন পাঁকা ফল খেয়ে নষ্ট করে তারা। তবে শীত এলে প্রতিবারই হঠাৎ এলাকায় প্রচুর বাদুরের আগমন ঘটে।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও খেজুর গুড় উৎপাদনকারী শাহিনুর ইসলাম সিল্কসিটি নিউজকে জানান, দিনের বেলা বিভিন্ন আম বাগান বা অন্ধকার আচ্ছন্ন বড় বড় গাছের ডালে তারা উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে। সন্ধ্যা নামলেই সেখান থেকে বেড়িয়ে পড়ে খাবার সংগ্রহে। খেজুরের রস খাওয়া এমনকি গাছের পাঁকা ফল খাওয়া ছাড়া অন্যকোন কিছুর তেমন কোন ক্ষতি তারা করেনা বলেও জানান তিনি।

একাধিক খেজুর গাছ চাষীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক শ্রেনীর শিকারী রাতের আধাঁরে বাঁশের বড় লাঠির সঙ্গে লোহার শিক ব্যবহার করে অভিনব কায়দায় বাদুড় শিকার করে। তবে এই শিকারীদের তারা চেনেন না এমনকি তারা কোথায় থেকে আসে সে ব্যপারেও জানাতে পারেনি তারা।

বাদুড়সহ যে কোন বন্যপ্রাণী শিকার, সংরক্ষণ এমনকি হত্যা করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ওলিউজ্জামান সিল্কসিটি নিউজকে জানান, এ ধরনের ঘটনা উপজেলার কোথাও কেও ঘটালে প্রশাসনকে জানানোর আহবান জানান।

তবে তিনি বলেন, আমাদের উপজেলার কোন হোটেলে হয়তো এগুলো বিক্রি হয়না। সুনির্দিষ্ট ভাবে তথ্য দিলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

স/অ