রাজশাহীতে জাহানারা জামান স্মৃতি টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামানের সহধর্মীনি মরহুমা জাহানারা জামান স্মৃতি টুর্নামেন্ট-২০১৯ এর পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের আমির উদ্দিন গ্যালারিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শহীদ কামারুজ্জামান ও মরহুমা জাহানারা জামান দম্পতির সুযোগ্য সন্তান ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন।

এরআগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর খন্দকার মোস্তাক আমার বাবা শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামানসহ জাতীয় চার নেতাকে বড় পদ দিতে চেয়েছেন। কিন্তু তাঁরা রক্ত দিলেন, জীবন দিলেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সাথে বৈঈমানি করেননি। এমন শিষ্য তৈরি করার কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধুরই।

শহীদ কামারুজ্জামানের স্মৃতিচারণ করে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বাবা বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁকে আর জেল থেকে বের হতে দেয়া হবে না। জেলে খাবার দিতে গেলে বাবা মাকে বলেছিল, আমি মনে আর জীবিত জেল থেকে বের হতে পারবো না। যেদিন বাবাকে জেলের মধ্যে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, সেদিনও মা খাবার নিয়ে জেলগেটে যান। তখন প্রহরীরা বলেছিল, আজ আর খাবার লাগবে না। সে সময় মা বুঝতে পেরেছিলেন বাবা ও অন্য জাতীয় তিন নেতা আর নেই। বাবাকে হারানোর পর আমাদের মাথার উপর থেকে যেন ছাতা চলে গেল। মা অনেক কষ্ট করে আমাদের ছয় ভাই-বোনকে বড় করেছেন।
মেয়র লিটন আরো বলেন, জামায়াত-বিএনপি অন্ধকারের কীটের অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। শেষ পর্যন্ত তারা পরাজিত হয়েছে। কিন্ত তারা তো পালিয়ে যায়নি, এদেশেই আছে। তাদের প্রশয় দেয়া যাবে না। কারণ এমন কোন সুযোগ যদি আসে, তবে তারা ৫ সেকেন্ডেই অনেক ক্ষতি করে ফেলবে।

মেয়র আরো বলেন, বাঙালি এমন একটা জাতি অনেক রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, ভাষার জন্য জীবন দিতে হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন জাতি আর নেই। বাঙালি জাতি রক্ত দিতে জানে, কিন্তু পরাজয় মানে না। ফিনিক্স পাখির মতো পুড়ে ভস্ম হয়ে আবারো জেগে উঠে। বাংলাদেশকে কেউ আটকিয়ে রাখতে পারবে না।

শহীদ কামারুজ্জামান ও মরহুমা জাহানারা জামানের নাতনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ যেভাবে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল, তেমনি আমাদের পরিবারও বিছিন্ন অবস্থায় ছিল। দাদাকে হারানোর পর দাদি ছয়টা ছেলে-মেয়েকে সুশিক্ষিত করা এবং ভালোভাবে মানুষ করার চ্যালেঞ্জটি ভালোভাবেই সামলান।
তিনি আরো বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে ছাত্রলীগ সব সময় থাকবে। যেকোনো বিপদের আপনার পরিবারের মতো আমাদের পাশে পাবেন।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান, চাঁপাইনাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী, উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. বুলবুল হাসান।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ডা. মোমিনুল ইসলাম, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজিব প্রমুখ। সঞ্চালনায় ছিলেন রামেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. মুহম্মদ সালেহ আনজুম সুজন।

পুরস্কার বিতরণ শেষে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি তুলে দেন মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনসহ অতিথিরা।
উল্লেখ্য, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে মরহুমা জাহানারা জামান স্মৃতি টুর্নামেন্ট-২০১৯ এ মাসব্যাপী ক্রিকেট, ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

স/শা