রাজশাহীতে বৃষ্টির কারণে বিনোদনপ্রেমীদের ঈদ আনন্দে পড়েছে ছেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

করোনার কারণে গেল দুই বছর এমনিতেই ফিকে হয়ে গেছে দেশের মানুষের ঈদ আনন্দ। কিন্তু ভাবনা ছিল এবার করোনা মহামারীর কিছুটা ভাটা পড়ায় ঈদুল ফিতরের দিন বিনোদনপ্রেমীদের উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হবে। কিন্তু না রাজশাহীতে আজ মঙ্গলবার ঈদের দিন  সকাল থেকেই অঝোর ধারায় ঝরেছে বৃষ্টি। ফলে জনজীবনে স্বস্তি নেমে আসলেও ঈদ আনন্দে ছেদ ঘটেছে। সকাল থেকে বৃষ্টিবন্দি ঈদ কাটছে মহানগরবাসীর। প্রচণ্ড খরার পর অবশেষে বর্ষণমুখর হয়ে উঠেছে রাজশাহী।

তাই টানা তাপদাহ আর তীব্র গরমে পর এই বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরেছে ঠিকই, তবে বিড়ম্বনারও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ একটাই ‘ঈদ’। বাঁধন ছেড়া উচ্ছ্বাস আর বাঁধ ভাঙা আনন্দ সবকিছুই ঘুরে বেড়ানোতেই নিহিত। মানুষ যেমন ভিড়ের মধ্যে থেকে শেকড়ে ফিরতে চায়, আবার মনের একাকীত্ব ঘোচাতে ভিড়েও হারাতে চায়। আর ঈদের মত উৎসব হলে তো কথাই নেই। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেই ঈদ আনন্দ এখন নিরান্দ হয়ে পড়েছে। ঘরবন্দি অবস্থায় ঈদ কাটাচ্ছেন মানুষ।

তবে শেকড়ে টানে ফেরা মানুষগুলোর জন্য ঈদের দিন থেকেই বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। শেষ পর্যন্ত ঘটলোও তাই। কখনো রোদ, কখনো মেঘ, আবার কখনো বৃষ্টি। এভাবেই কাটছে ঈদুল ফিতরের সকাল-বিকেল। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের রেইন গেজ (বৃষ্টি পরিমাপক যন্ত্র) বলছে আজ দিন ৫৭ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে।

এতে একরকম ভালোই হয়েছে। টানা তাপদাহের হাত থেকে পরিত্রাণ পেয়েছে রাজশাহীবাসী। তবে বৃষ্টিতে ভেসেছে রাজশাহী মহানগরীর ঈদগাহে আয়োজন করা ঈদুল ফিতরের নামাজ। ভোর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় নামাজের সময়ের আগে প্রতিটি ঈদগাহ কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায়। ঝড়ো হাওয়ায় লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় হযরত শাহ মখদুম (রহ.) কেন্দ্রীয় ঈদগাহসহ প্রতিটি ঈদগাহের প্যান্ডেল। ভেজা কর্দমাক্ত মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ওপরে বাঁধা বাঁশ এবং সামিয়ানার কাপড় ও ত্রিপল।

ফলে ঈদগাহ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয় মসজিদে মসজিদে। করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে দুই বছর পর ঈদগাহে নামাজ আদায় করতে চাওয়ার আনন্দ মুহূর্তে ম্লান হয়ে যায় বৃষ্টিতে। এছাড়া আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হন ঈদগাহ এবং মসজিদ কমিটিও।

সকালের পর কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি কখনো মুষলধারে বৃষ্টি চলে বেলা ৩টা পর্যন্ত। এতে মহানগরীর অনেক নিচু এলাকার সড়কে পানি জমে যায়। রাস্তায় রিকশা, সিএনজি চলাচল কম থাকায় ঈদ বিনোদনের জন্য বাইরে যেতে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

মঙ্গলবার (০৩ মে) ভোর থেকে শুরু হয় বর্ষণ। বৃষ্টিতে তাই ঈদের ছুটিতে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন রাজশাহীবাসী। বৃষ্টিতে মহানগরীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, শহীদ জিয়া শিশু পার্ক, শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পার্ক, পদ্মাপাড়সহ মহানগরীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোও প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে। ঈদের ছুটিতে এমনিতেই পথঘাট ফাঁকা, যানবাহন চলাচল কম। এর ওপর বৃষ্টি চলায় প্রধান প্রধান সড়কগুলোও এখন প্রায় জনশূন্য। ঘরবন্দি বিনোদন পিয়াসু মানুষগুলোর একমাত্র অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ইনস্ট্রোগ্রাম, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, অনলাইন নিউজপোর্টাল ও টেলিভিশন।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাজিব খান বলেন, মঙ্গলবার ভোর ৫টা ১০ মিনিট থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। দুপুর ১টা পর্যন্ত রাজশাহীতে ৫৭ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরপর থেমে থেমে বেলা ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়। তবে তার পরিমাণ নিরূপণ করা হয়নি। আজ রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ৮ বছর পর গত ১৫ এপ্রিল রাজশাহীতে তাপমাত্রার অতীতের রেকর্ড ভাঙে। ওইদিন বিকেল ৩টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরও আগে ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এএইচ/এস