রাজশাহীতে বাড়ছে পদ্মার পানি, নগরীর নিম্নাঞ্চলের ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

উজান থেকে আসা ঢলের কারণে রাজশাহীর পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে রাজশাহীতে বিপদসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজশাহী মহানগরীর  ২৪, ২৮ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের পদ্মার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২০০০ থেকে ২২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে উচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রাজশাহীর কার্যালয় জানা গেছে, রাজশাহীতে বুধবার (১৮ আগস্ট) বিকাল ৩টায় পদ্মায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৭৪ সেন্টিমিটার। রাজশাহীতে পদ্মার পানির বিপদসীমা হচ্ছে ১৮ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার। সেই  হিসেবে বুধবার রাজশাহীতে বিপদসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এর আগে বুধবার সকাল ৬টায়  পদ্মায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৭১ সেন্টিমিটার। মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার। আর ওই দিন সকাল  ৬টায় পদ্মার পানি ছিল ১৭ দশমিক ৫৯ মিটার উচ্চতায়। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রাজশাহীতে ১৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে পাউবো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

রাজশাহী পাউবোর গেজ রিডার এনামুল হক বলেন, ‘আগস্ট মাসের শুরু থেকেই পদ্মায় পানি বাড়তে থাকে। গত ৩-৪ দিন ধরে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে পদ্মার রাজশাহী পয়েন্টে পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে।’ আগস্ট মাসজুড়েই পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান তিনি।

বুধবার (১৮ আগস্ট) বিকালে নগরীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে- পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় আইবাধ থেকে শুরু করে জাহাজঘাট এলাকা পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া নগরের রানীনগর এলাকায় অবস্থিত প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত আলোর পাঠশালার ভেতরে পানি ঢুকে গেছে। বিদ্যালয়টির আশেপাশে যত বাড়িঘর রয়েছে সবই আজ পানির নিচে। প্রায় সব বাড়িতেই হাঁটু থেকে কোমড় পানি।

নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আরমান আলী বলেন, ‘পঞ্চবটি এলাকা থেকে হাদির মোড় পর্যন্ত আমার ওয়ার্ডের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।’

এদিকে পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় যৌবন ফিরে পেয়েছে প্রমত্তা পদ্মা। ইতোমধ্যেই রাজশাহী নগরীর ওপারে চর খিদিরপুর এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে নৌকায় করে এপারে আসছেন। রাজশাহীর বাঘা এবং গোদাগাড়ী উপজেলায় পদ্মার ওপারের চর ভাঙছে। নতুন করে গোদাগাড়ীর নিমতলা এলাকায় পদ্মার এপার ভাঙছে। এই এলাকাটি আগে কখনও ভাঙেনি। এবার ভাঙন দেখে এলাকাবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। কয়েকদিন আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলম এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন।

পাউবোর রাজশাহীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রিফাত করিম বলেন, রাজশাহী নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। টি-গ্রোয়েন এবং আই বাঁধ ও কেশবপুর এলাকায় এই কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। তালাইমারী শহিদ মিনারের যে এলাকায় পানি ঢুকেছে সেখানে প্রতিরক্ষামূলক কিছু করার উপায় নেই। পদ্মার ওপারের চর খিদিরপুরেও কিছু করার নেই। তবে বাঘার ভাঙনরোধে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এএইচ/এস