রাজশাহীতে বাইপাশে গাড়ী থামিয়ে হিজড়াদের চাঁদাবাজি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দুপুর ১২টা। আটফাটা রোদ। এরই মধ্যে রাজশাহীর বাইপাশে প্রতিটি গাড়ী থামিয়ে ছয়জন হিজড়া গণহারে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। রাজশাহীর হরিয়ানের বিলের মধ্যে বাইপাশে দাঁড়িয়ে হিজাড়ারা গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এ চাঁদাবাজিতে মেতে উঠে। বাইপাশ দিয়ে যাওয়া গাড়ীর সামনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে জোর করে তাঁরা এ চাঁদাবাজিতে মেতে উঠে। তবে প্রশাসন এ নিয়ে কোনো পদক্ষে নিতে দেখা যায়নি। ফলে বাধ্য হয়ে তাঁদের ২০-৫০ টাকা হারে প্রতিটি গাড়ীর চালককে চাঁদা দিতে হয়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহীর নওদাপাড়া গোলচত্তর হয়ে পুঠিয়ার বেলপুকুর পর্যন্ত বাইপাশ দিয়ে যেসব গাড়ী গতকাল সকাল থেকে চলাচল করেছে, সবগুলো গাড়ী থেকেই চাঁদাবাজি করেছে হিজড়ারা। ছয়জন হিজড়া প্রতিটি ট্রাক, বাস, মাইক্রো, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহনের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ীতে উঠে বা নিচে থেকেই জোর করে টাকা আদায় করতে থাকে। কখনো কখনো গাড়ীর সামনে শুয়ে পড়েছিলেন ওই হিজড়াদের কেউ কেউ। আবার হঠাৎ করে চলন্ত গাড়ীর সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর ফলে চালক এবং যাত্রীরা যেমন ঝুঁকির মুখে পড়ছিলেন, তেমনি ঝুঁকিরমুখে পড়ছিলেন ওই হিজড়ারাও।

এই পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে হোসন আলী নামের একজন ট্রাক চালক কালের কণ্ঠকে বলেন, এভাবে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে কখনো চাঁদাবাজি দেখিনি। রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় আমাদের টাকা দিতে হয় সেটা ঠিক আছে। তাই বলে চলন্ত গাড়ীর সামনে হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে চাঁদাবাজি করাতে আমাদের জীবন যেমন ঝুঁকির মুখে পড়ছে, তেমনি হিজড়াদেরও জীবন শঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এটি বন্ধ হওয়া দরকার। এভাবে কোনো রাস্তায় মাঝখানে দাঁড়িয়ে চাঁদাবাজি করতে দেওয়া ঠিক নয়।

আরেক ট্রাক বাস চালক মুনসুর রহমান বলেন, মনে হচ্ছিলো কয়েকজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তারা হটাৎ রাস্তার মাঝখানে এসে যখন বাস থামিয়ে চাঁদা দাবি করলো, তখন বুঝলাম তারা হিজড়া। কিন্তু হঠাৎ গাড়ী থামাতে গিয়ে অনেকটায় ঝুঁকি নিতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৩০ টাকা দিয়ে পার হতে পেরেছি তাদের সামনে থেকে। তাছাড়া কোনো মতেই বাসের সামনে থেকে সরছিলো না। টাকা না দিতে চাওয়ায় বাসের সামনে শুয়েও পড়েছিলো কেউ কেউ।’

হিজড়াদের দলনতা নিলিমা খাতুন বলেন, ‘সামনে ঈদ তাই আমরা গাড়ী থামিয়ে টাকা আদায় করছি। আমাদের কে টাকা দিবে? এ কারণে গাড়ী থামিয়ে টাকা আদায় করছি।’

জানতে চাইলে নগরীর কাটাখালি থানার ওসি ‘নিবারণ চন্দ্র কালের কণ্ঠকে বলেন, হিজড়াদের একটি গ্রুপ এমনটি মাঝে মাঝেই করে। তবে তারা এবাবে চাঁদাবাজি করবে না বলে অঙ্গিকার করেছিল। কিন্তু তার পরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বা যানবাহন ঝুঁকিতে ফেলে এমন চাঁদাবাজিতে মেতে উঠলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।