রাজশাহীতে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ নির্মাণে তুঘোলকি কাণ্ড, অনিয়মের প্রতিবাদ করায় পিডি পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহী নগরীর তালাইমারী মোড়ে এলাকায় নির্মাণ হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’। এর ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। নানা অনিয়মের মাধ্যমে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজটি দেওয়া হয় বলে শুরু থেকেই অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে কালের কণ্ঠে দুটি অনুসন্ধানী খবরও প্রকাশ হয়েছে। সেই কাজটি করতে গিয়ে শুরুতেই ঠিকাদারকে দেড় কোটি টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। আর এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় প্রকল্পটির পরিচালকও হঠাৎ বদলি করা হয়েছে।

আগের পিডি ও নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিককে পরিবর্তন করে তাঁর স্থলে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুর্নীতির মামলায় চার্জসিটভূক্ত আসামি সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামানকে। একটি বৃহৎ প্রকল্পের শুরুতেই এমন তুঘোলকি কাণ্ড নিয়ে আরডিএ জুড়ে চরম অস্থিরতা তৈরী হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্র মতে, রাজশাহী নগরীর তালাইমারী এলাকায় ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ নির্মাণের জন্য পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হয় নানা শর্তজুড়ে দিয়ে। আর সে অনুযায়ী ওই ‘দি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আর্কিটেক’ নামের ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া সরকারের ক্ষতি হবে অন্তত তিন কোটি টাকা। ঠিকাদার কার্যাদেশ পাওয়ার পরে গত জান মাসের শেষের দিকে কাজটি শুরু করেন। কিন্তু কয়েকদিনের মাথায় নামমাত্র কিছু কাজ করেই দেড় কোটি টাকার বিল দাখিল করেন আরডিএ কর্তৃপক্ষের কাছে। তবে তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ আল তারিক ওই বিল দিতে অস্বীকার করেন।

আরডিএর সূত্র মতে, ঠিকাদার এখন পর্যন্ত যে কাজ করেছেন তাতে এক কোটি টাকার কাজ হয়নি। কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার পর পরই গত জুন মাসেই প্রায় দেড় কোটি টাকার বিল দাখিল করে সেই বিল উত্তোলনের জন্য প্রভাব খাটাতে থাকেন। কিন্তু কাজ না করেই সেই টাকা দিতে অস্বীকার করেন তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ আল তারিক। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রভাবশালী ওই ঠিকাদার মন্ত্রণালয়ে তদবির করে আব্দুল্লাহ আল তারিককেই বদলির ব্যবস্থা করেন। শেষে এই প্রকল্পের জন্য পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব হওয়া আরডিএর সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামানকে। অথচ এই কামরুজ্জামানের নামে দুর্নীতির মামলা এখনো চলমান। তিনি সেই মামলায় চার্জসিটভূক্ত আসামি।

নিয়ম অনুযায়ী চার্জসিটভূক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার কথা। কিন্তু সেটি না করে তাঁকে বৃহত্তর এই প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর এ নিয়ে আরডিএজুড়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে চরম অস্থিরতা তৈরী হয়েছে।

সূত্র মতে, ‘দি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আর্কিটেক’ নামের ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি কাজটি পাওয়ার জন্য শুরু থেকেই নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে চলেছিলো। ফলে টেন্ডারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে বাড়তি অন্তত সাতটি শর্তজুড়ে দেয় আরডিএ কর্তৃপক্ষ। এরপর কাজটি শুরু করার পরেই অতিরিক্ত বিল উত্তোলন নিয়ে তৈরী হওয়া জটিলতার জের ধরে প্রকল্পের পরিচালককে বদলির ঘটনায় আরও উত্তেজনা তৈরী হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২০ নভেম্বর আরডিএ ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চত্তর’ নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে। ইজিপিতে দেওয়া এই টেন্ডারটিতে পছন্দের ঠিকাদারের বাইরে অন্য কোনো ঠিকাদার অংশ নিতে না পারেন সে কারণে অন্তত সাতটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। ফলে একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান অংশ সেসব শর্ত পূরণ করে ওই টেন্ডারে অংশ নেয়। শেষ পর্যন্ত তাঁকেই দেওয়া হয় কাজটি।

এদিকে পিডি পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে বর্তমান পিডি শেখ কামরুজ্জামান বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে আমি কাজটির তদারকি করছি। এরই মধ্যে ঠিকাদার গত জুন মাসে প্রায় দেড় কোটি টাকা বিল উত্তোলন করেছেন বলে জানি। তবে কাজটি চলমান রয়েছে।’

স/আর