রাজশাহীতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, মাথায় হাত আমচাষিদের

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে। বিশেষ করে মাথায় হাত পড়েছে আমচাষিদের। এবার এমনিতেই দাম নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন আমচাষিরা। এর মধ্যে ঝড়ে আমের ডাল-পালাও ভেঙে গেছে। ঝরে পড়েছে গাছের আম। আমবাগানগুলোতে বৃহস্পতিবার সকালে যেন ঝরে পড়া আমের স্তুপ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এতে করে এবার আমচাষিদের ব্যাপক ক্ষতি করে গেলো ঝড়ে। এর বাইরে কলা, ভুট্টা, পেঁপে ও ধানসহ অন্যান্য ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের চাষিরা।

রাজশাহীর পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট, পবা, বাগমারা, গোদাগাড়ী, মোহনপুর ও তানোরেও ঝড়ের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার সকালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাঘা-চারঘাট, পুঠিয়া ও দৃর্গাপুরের আমচাষিদের। এই চারটি উপজেলাতেই আমচাষ সাধারণত বেশি হয়।

চারঘাটের আমচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ঝড়ে সব শেষ। এবার হয়তো আম পাড়তে যেতেই হবে না গাছে। যেন সব আম ঝরে পড়েছে। দুই-চারটা থাকলেও সেগুলোরও বেশিরভাগ ঝড়ের কারণে ফেটে যাবে। ফলে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবার। আমচাষিদের পাশে সরকার না দাঁড়ালে এবার তার বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বেন। অনেকই পুঁজি হারিয়ে পথে বসবেন।’

দুর্গাপুরের আমচাষি সোহাগ বলেন, ‘গাছের আম অর্ধেক পড়ে গেছে। দুইটা গাছও উপড়ে গেছে। এই অবস্থায় আমের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ফসলেরও।

পুঠিয়ার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কলা বাগানের কলাগাছগুলো মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। কলা, ভুট্টা, পেঁপেসহ ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুশিয়ে উঠতে পারবেন না অনেকেই।’

এছাড়াও রাজশাহীর বাইরে নাটোর, পাবনা, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ আশেপাশের জেলাগুলোতেও আমসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমচাষ হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সেখানে আমের বাগানগুলোর মালিকরা অনেকটা ক্ষতিরমুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

এদিকে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাত ২টা ৫৫ মিনিটে আম্ফান প্রবেশ করে এই অঞ্চলে। ওই সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। বাতাসের এই গতিবেগ ছিল মাত্র তিন মিনিট। এরপর ধীরে ধীরে কমে আসে বাতাসের বেগ।

এরআগে আম্ফানের প্রভাবে বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাজশাহীতে শুরু হয় দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৮১ মিলিমিটার।

এদিকে আম্ফানে রাজশাহী ছাড়াও নওগাঁ ও চাপাইনবাবগঞ্জে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছ থেকে ঝরে পড়েছে বেশিরভাগ আম। বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে এখনও প্রাণহানীর কোনো খবর মেলেনি।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন বলেন, আম্ফানের যে গতিবেগ ছিল তা রাজশাহী পৌঁছার আগেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। ঝড় হিসেবেই রাজশাহী ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রবেশ করে আম্ফান। এর স্থায়িত্ব ছিলো আধা ঘণ্টার মতো। এর প্রভাবে রাজশাহী অঞ্চলে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। সেইসঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতও হয়।

 

স/আর

আরও পড়ুন:

আম্ফানের থাবায় লণ্ডভণ্ড বিদ্যুৎ সরবরাহ, অন্ধকারে গোটা রাজশাহী