রাজশাহীতে প্রশাসনের নামে ইটখোলা থেকে বিপুল চাঁদাবাজি করছে মালিক সমিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রশাসনের দোহাই দিয়ে রাজশাহীর ১২৫ ইটভাটায় চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি। এবার প্রতিটি ইটখোলাগুলো থেকে ৫০ হাজার টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করছে একটি মহল। রাজশাহী ইটভাটা মালিক সমিতির নামে এই চাঁদা উত্তোলন করা হয়েছে। তবে চাঁদা প্রদানকারী ইটভাটা মালিকদের দেয়া হয়নি কোনো রকম রশিদ। এরই মধ্যে অর্ধ কোটিরও বেশি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে এই বছরে।

ইটখোলা মালিকদের অভিযোগ, কোনো প্রমাণপত্র ছাড়াই এই পরিমাণ টাকা করে উত্তোলন করা হয়েছে এবং হচ্ছে প্রতিটি ইটভাটা থেকে। এর আগের বছরগুলোতে ৩২ হাজার টাকা করে উত্তোলন করা হলেও এবার সেটি এক লাফে বেড়ে গিয়ে ৫০ হাজার টাকায় ঠেকেছে। এরই মধ্যে অন্তত ৫০-৬০ জন ব্যবসায়ী চাঁদা প্রদান করেছেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর এ নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে রাজশাহী ইটখোলা মালিকদের মাঝে।

তারা জানেন না এই টাকা কি কাজে ব্যবহার করা হবে। তবে জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে শুরু করে পরিবেশ অধিদপ্তর, থানা পুলিশসহ বিভিন্ন দপ্তরকে ম্যানেজ করার জন্য এই টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ইটভাটা মালিক সমিতির নেতারা।

ইটখোলা মালিকরা অভিযোগ আরো জানান, চাঁদা যারা দিতে চান না তাদেরকে নানা রকম ভাবে হয়রানি করা হয়। এমনকি এবারো নির্ধারিত টাকা না দিলে প্রশাসন নানাভাবে হয়রানি করবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। ফলে ভয়-ভীতির কারণে ইচ্ছের বিরুদ্ধেই চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছেন ইটখোলা মালিকরা।

নাম না জানাতে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইটখোলা মালিকরা বলেন, এর আগের বছরগুলোতে ৩২ হাজার টাকা করে নেয়া হলেও এ বছরে ৫০ হাজার টাকা করে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো বারই এই টাকার হিসাব দেওয়া হয় না। কোন কোন খাতে ব্যয় করা হয় তার কোনো হিসেব পাওয়া যায় না। কিন্তু বছরের শুরুতে এবারও বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে কোনো কারণ ছাড়াই। তবে চাঁদা উত্তোলনের সময় মালিক সমিতির থেকে বলা হয়েছে ডিসি অফিসের এলআর ফান্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় পুলিশকে দিতে হবে এই টাকা।

ওই মালিকরা আরো বলেন, স্থানীয় পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনকে তারা নিয়মিত মাসিক চাঁদা দেন। এর বাইরেও যে টাকা দিতে হচ্ছে মালিক সমিতিকে, সেটি একেবারে তাদের অনিচ্ছাকৃত।

তবে জানতে চাইলে রাজশাহী ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি সাদরুল ইসলাম বলেন, নির্দিষ্ট করে কোনো চাঁদা নেওয়া হয় না। স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দিবস পালনসহ নানা উদ্যোগের জন্য চাঁদা দিতে হয় এটা সঠিক। সেক্ষেত্রে ইটভাটা মালিকরা নিজেরাও কখনও কখনও দিয়ে আসে আবার কখনও সমিতির মাধ্যমে দেয়া হয়। এ কারণে যখন যেটা প্রয়োজন, তখন সেভাবে মালিকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। কাজেই ৫০ হাজার টাকা করে চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক একেএম হামিদুল হক বলেন, এই ধরনের চাঁদা নেওয়ার ঘটনাটি আমার জানা নেই। যদি হয়ে থাকে তাহলে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।