রাজশাহীতে প্রকাশ্যে নৌকা বিরোধীদের পদে বসানোর চেষ্টার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজশাহীতে প্রকাশ্যে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করা ব্যাক্তিদের আবারও দলীয় পদে বসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) বেলা ১১ টার দিকে রাজশাহী সাংবাদকি ইউনিয়ন কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করে হারানোসহ, বর্তমান সভাপতি সোহরাব আলী ও সাধারণ সম্পাদক নবীবুর রহমানের নানা অনিয়ম দূর্নীতি বিভিন্ন অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পবার পারিলা ইউনিয়নের মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গত দুই বারের আওয়ামী লীগের মনোনিত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী ফাহিমা খাতুন।

সংবাদ  সম্মেলনে আওয়ামীলীগ নেত্রী ফাহিমা খাতুন লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ তুলে বলেন, আগামী ১৯ জুন রবিবার রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক সম্মেলন অনুষ্ঠিত যাচ্ছে। এই সম্মেলনে নৌকার বিরোধীতাকারি সোহরাব আলী ও নবীবুর রহমানকে আবারও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এমপি আয়েন উদ্দিনসহ উপজেলার নেতাদের বিরুদ্ধে।

তিনি বলেন, আগামী ১৯ জুন পারিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে; এই সম্মেলনে আমি সভাপতি প্রার্থী হিসেবে আছি। তবে আমরা জানতে পারলাম যে আমাদের এমপি আয়েন উদ্দিন আবারও নৌকার বিরোধীতাকারি সোহরাব আলী সভাপতি ও নবীবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করার জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এতে করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও ভোটাররা হতাশ ও ক্ষুদ্ধ।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, আমি ২০১৬ সালে ও ২০২১ সালে পারিলা ইউনিয়ন নির্বাচনে আমি আওয়ামী লীগের মনোনিত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী হয়ে ভোট করেছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়ে
সম্মানিত করেছে। কিন্তু সেই সময় গুলোতে পারিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাব আলী ও সাধারণ সম্পাদক নবীবুর রহমানসহ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা বর্তমান সংসদ সদস্য গোপনে মিটিং করে আমাকে পরাজিত করে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীকে বিজয়ী করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা সেই সময়ে সরাসরি নৌকার বিরোধীতা করে এমপি আয়েন উদ্দিনসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বেশ কিছু নেতা আমাকে পরাজিত করে। ফলে আমি এসব নেতাদের কারণে বিজয়ী হতে পারিনি। যা দল, নৌকা ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে সরাসরি বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে । এমন বিশ্বাস ঘাতকতাকারীরা ক্ষমার অযোগ্য।

সেই সময়ে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে লিখিত অভিযোগ দিলে নেতারা ভোটারদের উৎসাহিত করতে মাঠে আসেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিন্নাতুন নেসা তালুকদার, জেলা আওয়ামীলীগ সিনিয়র সহ-সভাপতি এ্যাডঃ ইব্রাহিম হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক অ্যাডঃ লায়ের উদ্দিন লাভলু, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রভাষক এ.কে.এম আসাদুজ্জামান আসাদ, উপদপ্তর সম্পাদক আব্দুল মান্নান,  জেলা মহিলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মর্জিনা বেগমসহ আরো অনেক নেতা নেত্রীবৃন্দ। সোহরাব আলীর বাড়ীতে দেখা করে। তারা সোহরাব আলীকে নৌকার পক্ষে কাজ করার অনুরোধ জানালেও তিনি নৌকার পক্ষে কাজ করবে না বলে সরাসরি জানিয়ে দেন। তার এমন কথায় নেতৃবৃন্দ তার বিরুদ্ধে সংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানালে তিনি পাল্টা হুমকি দেন যা ইচ্ছে করতে পারেন। তাদের এমন কর্মকান্ডের কারনেই বারবার আমি নৌকা প্রতীক পেয়েও পরাজিত হয়েছি।

তিনি বলেন, নেতাদের এমন অসদাচরণ ও কর্মকান্ড বহাল রাখলেও আমি সর্ব সময় জনগনকে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগের সকল কর্মকান্ড পালন করে আসছি। কোন কাজে গাফলতি বা পেছনে সরে যায়নি। প্রকৃত আওয়ামী লীগ কর্মী সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ  করে দলের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, আমাদের এমপি আমার সাথে ভালো ব্যবহার করেন না। প্রতিহিংসা মূলক আচরণ করেন। আমাকে তারা বারবার অবহেলার চোখে দেখে বঞ্চিত করেন। গত ১৩ জুন এমপি আয়েন উদ্দিনকে বারবার ফোন দিয়ে ব্যর্থ হয়। দিন শেষে তিনি ফোন ব্যাক করলে নিজের পরিচয় দিলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেন, আপনি আর আমাকে কোনদিন ফোন দিবেন না বা যোগাযোগ করবেন না বলে জানান। এমপির সাথে কোন আমার দ্বন্দ্ব বা বিরোধীতা নেই । তবে কি করনে আমাকে অপমান করে তা আমি নিজেও বুঝতে পারিনা।

তিনি এসবের অবসান চেয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তা ক্ষতিয়ে দেখার অনুরোধ জানান এবং প্রকৃত তৃণমূল আওয়ামী লীগের কান্ডারীদের মূল্যায়নের আবেদন জানান। পাশাপাশি তিনি আগামী ১৯ জুনের পারিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানান।

এই বিষয়ে পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নওহাটা পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, আমি পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নতুন দায়িত্ব নিয়েছি, তাই আমার কাছে পূর্বের কোন অভিযোগের কাগজ নেই। যদি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কোন অভিযোগ পারিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাব আলী ও সাধারণ সম্পাদক নবীবুর রহমানের বিরুদ্ধে থাকে তাহলে দল অবশ্যই ব্যবস্থা নিবে। তিনি আরো বলেন, আগামী ১৯ জুন পারিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, এই সম্মেলনে কে সভাপতি আর কে সাধারণ সম্পাদক হবে তা নির্ধারণ করবেন ওই ইউনিয়নের কাউন্সিলরেরা। প্রকাশ্যে ভোট অথবা সর্ব সম্মতিক্রমে সমঝোতার ভিত্তিতে । কারো একক সিদ্ধান্তে নয়।

এই বিষয়ে জানতে রাজশাহীর পবা-মোহনপুরের এমপি আয়েন উদ্দিনের মোবাইলে কয়েক বার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এস/আই