রাজশাহীতে নৌকার হাল ধরতে ছুটে বেড়াচ্ছেন লিটন, বসে নেই স্ত্রী-কন্যাও

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীতে ৬টি সংসদীয় আসনের সবকটিতেই বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ও শরিকদের প্রার্থীরা এমপি হয়ে আছেন। ৫টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আর একটি আসনে ওয়াকার্স পার্টির প্রার্থী বর্তমান এমপি। এবার নির্বাচনে এই ছয়টি আসনের এমপিদের মধ্যে ৫ জনই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপি প্রার্থীদের সঙ্গে। আর একজন রাজশাহী-৫ আসনের এমপি কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি এবার। তাঁর পরিবর্তে এই আসনে আওয়ামী লীগ নতুন মুখ বেছে নিয়েছেন।

এই নতুনমুখসহ অন্য ছয়টি আসনেও আওয়ামী লীগের এবারো বিজয় নিশ্চিত করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। কিন্তু এই ছয় প্রার্থীর পাশাপাশি এবার রাজশাহীতে নৌকার কাণ্ডারী হয়ে দেখা দিয়েছেন সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সেই সঙ্গে প্রচারণায় চালাচ্ছেন লিটন পত্নী শাহীন আক্তার রেনী, তাদের মেয়ে অর্ণা জামানও। তারাও থেমে নেই। রাতদিন বিভিন্ন প্রার্থীর হয়ে মাঠচষে বেড়াচ্ছেন। সর্বশেষ গত শনিবার লিটন বাগমারায়, অর্ণা জামান দুর্গাপুরে এবং শাহীন আক্তার রেনী নগরীতে প্রচারণায় অংশ নেন। এভাবে প্রতিদিনই তারা ছুটে বেড়াচ্ছেন রাজশাহীর এপ্রান্ত-থেকে অপ্রান্ত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে একেকটি আসনে ছুটে বেড়াচ্ছেন নৌকার বিজয় ছিনিয়ে নিতে গভীর রাত পর্যন্ত রাজশাহীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন এ জনপ্রিয় নেতা। তিনি প্রার্থী নন, কিন্তুনৌকার জন্য প্রচারণা চালাতে গেলে ভোটাররা শহীদ কামারুজ্জামানের পুত্র সিটি মেয়র লিটনকে এক নজর দেখতে ছুটে আসছেন তাঁর কাছে।

লিটনের ঘোনিষ্ট সূত্র গেছে, গত ১০ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার আগ থেকেই রাজশাহীর ৬টি আসনে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে একেবারে মাঠে নেমে কাজ করে যাচ্ছেন রাসিক মেয়র লিটন। রাজশাহীজুড়ে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা নৌকার প্রার্থীদের কাজে আসবে-এমনটি ভেবেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাও লিটনকে ছাড়ছে না বলে জানা গেছে। ফলে প্রতিদিনই কোনো কোনো আসনে প্রার্থীদের পক্ষে গণসংযোগের সময়সূচি দিতে হচ্ছে লিটনকে। আবার তিনিও ছুটে চলছেন প্রার্থীদের হয়ে ভোটারদের দ্বারে। কখনো কখনো প্রার্থীদের সঙ্গে। আবার কখনো নিজেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নেমে পড়ছেন নির্বাচনী প্রচারণায়।

রাজশাহী নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রতন সরকার বলেন, ‘রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহীতে এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছেন। এ কারণে রাজশাহী নগর শুধু নয়, তিনি জেলার যে আসনেই যাচ্ছেন না কেন, তার পেছনে শতশত নেতাকর্মী ছুটে আসছেন। সাধারণ ভোটাররা লিটনকে কাছে আনন্দে মেতে উঠছেন। তিনি প্রচারণায় নামার কারণে নৌকার প্রার্থীরা অনেকটায় সুবিধা লাভ করছেন। যেসব এলাকায় নৌকার প্রার্থীদের দুর্বলতা রয়েছে, লিটন প্রচারণায় নামার কারণে ওই এলাকার মানুষের মাঝেও চাঙ্গা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে রাতদিন ছুটে বেড়াচ্ছেন নৌকার বিজয় ধরে রাখতে এই নেতা।’

দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, রজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহী ১ আসন থেকে শুরু করে ৬টি আসনেই প্রায় প্রতিদিনই গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। একেকটা দিন তিনি একেটি আসনে গণসংযোগ করছেন। কখনো কখনো সাধারণ ভোটার ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে করছেন মতবিনিময়। এর বাইরে যেসব আসনে বা যেসব নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রার্থীদের মতানৈক্য রয়েছে, সে মতানৈক্য নিরসনেও কাজ করে যাচ্ছেন লিটন। ফলে প্রতিটি আসনেই নৌকার ৬জন প্রার্থীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের তৃণমূল বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর বিরোধ থাকলেও এখন প্রায় শূণ্য অবস্থানে নেমে এসেছে।

রাজশাহী-১ আসনে এমপি ফারুক চৌধূরীর সঙ্গে দলীয় মনোয়ন চাওয়া অপর ৭ পার্থীর সঙ্গে দূরুত্ব, রাজশাহী-২ আসনে ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দূরুতনিরসন¡, রাজশাহী-৩ আসনে বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিনের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও তাঁর গ্রুপের নেতাকর্মীদের দূরুত্ব নিরস, রাজশাহী-৪ আসনে এমপি এনামুলের সঙ্গে পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টুর দূরুত্ব নিরসন, রাজশাহী-৫ আসনে দ্বিধা-বিভক্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের ঐক্যমতে পৌছানে এবং রাজশাহী-৬ আসনে এমপি শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে পৌর মেয়র আক্কাস ও অন্য নেতাদের দূরুত্ব নিরসনেও বড় ভূমিকা রেখেছেন রাসিক মেয়র লিটন। ফলে রাজশাহীতে ৬টি আসনের বর্তমান ৬ এমপিদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের দ্বন্দ্ব এখন আর প্রকাশ্যে নাই বললেই চলে।

রাজশাহী-৩ আসনের এমপি প্রার্থী আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘লিটন ভাই রাজশাহীর রাজনীতিতে এক অন্যন্য নাম হয়ে উঠেছেন। তাঁর আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা এখন আমাদের নির্বাচনে কাজে দিচ্ছে। তিনি প্রচারণায় নামায় আমাদের অনেকটা কাজে দিচ্ছে। তাঁর জনপ্রিয়তা সাধারণ ভোটারদের অনুপ্রানিত করছে। এ কারণে আমরা তাকে প্রচারণায় মাঠে নামাচ্ছি।’

জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘নৌকার বিজয় মানে শেখ হাসিনার বিজয়। তাঁর বিজয় মানে বাংলাদেশের বিজয়। এই দেশের বিজয় এবং উন্নয়ন ধরে রাখতে রাজশাহীর ছয়টি আসনেও নৌকার প্রার্থীদের বিজয় ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। ফলে সকল ভেদাভেদ ভুলে রাজশাহীর আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীদের ঐকবদ্ধভাবে মাঠে নামতে হবে। সেই চেষ্টাই আমি করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে নেতাকর্মীরা সকলেই ঐক্যব্ধভাবে নৌকার হয়ে মাঠে নেমেছে। আশা করছি এবারো আমরা রাজশাহীর ছয়টি আসনেই বিজয়ী হব।

স/আর