রাজশাহীতে নতুন ঠিকানায় শামুকখোলের দল, আহারের খোঁজে পবার বিলে


নিজস্ব প্রতিবেদক :

এক সময়ে ওদের ঠিকানা ছিল রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের বিশালাকৃতির কড়াই, মেহগেুনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। তবে উন্নয়নের নামে সেই গাছগুলো কাটতে শুরু করায় গাছগুলোতে আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার পরিজায়ী পাখি শামুখখোল বেকায়দায় পড়ে। ওরা তখন নতুন ঠিাকানা হিসেবে গড়ে তুলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেহেগুনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছে। সেখানেও উন্নয়নের কোপ পড়ে কর্তৃপক্ষ। গত বছর হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে একটি গাছ কেটে ফেলায় মরে অন্তত শতাধিক শামুকখোলের বাচ্চা। এ নিয়ে আন্দোলনেও নামেন পরিবেশবাদীরা। হাসপাতালের পরিচালকের নামে আদালতে মামলা পর্যন্তও গড়ায়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শত শত শামুখখোল পাখি উড়ে উড়ে এসে পড়ছে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর মেহেগুনি, আমসহ বিভিন্ন গাছের ডালে। আবার কেউ একটু উড়ে আবার অন্য ডালে গিয়ে পড়ছে। কেউ কেউ নিজ নিজ বাসায় গিয়ে বসছে। পাখিদের ডাকে ওই এলাকার পরিবেশটাও যেন একটা ভিন্ন রুপ লাভ করেছে। পথচারীদের কেউ কেউ তাকিয়ে দেখছেন পাখিগুলো।


জানতে চাইলে স্থানীয় পান ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বলেন, ‘আগে হাসপাতালের গাছের ডালে পড়ত। তখন পাখিদের শব্দে এলাকা মেতে থাকত। হাসাপাতালের অনেক গাছ কেটে ফেলায় এখন পাশেই লাইব্রেরীর গাছে বসছে শামকুখোল পাখি। এখনো দারুন লাগে। শত শত পাখি সন্ধ্যায় যখন বাসায় ফিরে আসতে শুরু করে, তখন যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়-তা না দেখলে বুঝানো যাবে না। মনের মাঝে অন্যরকম এক অনুভ’তি কাজ করে তখন।’

তিনি আরও জানান, প্রতিদিন সকালে বড় পাখিগুলো খাবারের সন্ধ্যানে বিভিন্ন খাল-বিলে ছুটে যায়। আবার সন্ধ্যা নামার আগে আগে বাসায় ফিরতে শুরু করে। গতকাল এই পাখিগুলোর একটি দল ছুটে যায় রাজশাহীর পবা উপজেলার দারুসা কৈকুড়ি বিলে। সেখানে কৃষকরা ধানচাষ করছিলেন একদিকে। আরেকদিকে পোকা-মাকড় আর শামুকের সন্ধ্যানে শত শত শামুকখোল উড়োউড়ি করছিলো। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল পাখিগুলো যেন সাদা বনের আভা তৈরী করে রেখেছে।


স্থানীয় কৃষক দবিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় সেখানে ধানছাষ শুরু হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও হালকা পানি আছে এখানো। যেসব স্থানে পানি শুকিয়ে গেছে, সেসব স্থানে বোরো ধানের চাষ শুরু হয়েছে। ধানের জমির পানিতেও ছোট ছোট শামুকের খোঁজে শামুকখোল পাখিগুলো দল বেধে উড়ে আসে প্রতিদিন। দেখতে সুন্দর লাগে।’

আরকে কৃষক মাজদার হোসেন বলেন, ‘ধানচাষের জন্য এখন প্রতিদনই বিলে আসতে হয়। আর এলেই চোখে পড়ে সুন্দর সুন্দর এ পাখিগুলো। আমরা কোনো পাখি শিকারীকে পাখিগুলোকে মারতে দেয় না। এ কারণে গত কয়েকদিন ধরেই এ বিয়ে নির্বিঘেœ এসে আহার করে আবার সন্ধ্যার মধ্যে চলে যায়।’


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মোঃ সালেহ রেজা জানান, শামুকখোল এশিয়া মহাদেশের বাংলাদেশ, ভারত ছাড়া দক্ষিণ এশিয়া বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে এদের দেখা মেলে। এদের প্রধান খাবার হলো শামুক ও ঝিনুক। এরা এদের পরিবেশ অনুক’লে থাকলে সাধারণত একা জায়গা থেকে সহজে নড়ে না। এদের অদ্ভুত লম্বা ঠোটের সহজেই অন্য পাখির থেকে আলাদা করা যায়। এদের শারীরিক আকারও হয় বেশ বড়। এরা ধান খেত, ছোট নদী নালার অল্প পানিতে নেমে ঠোঁট ডুবিয়ে ডুবিয়ে আহার সংগ্রহ করে। রাজশাহীতে এ পাখিদের বিচরণ অনেক আগ থেকেই।’
স/আর