রাজশাহীতে তৈরী হচ্ছে নিম্নমাণের লাচ্ছা-সেমাই

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীতে ব্যাপক হারে তৈরী হচ্ছে নিম্নমাণের লাচ্ছা সেমাই। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে স্থায়ী-অস্থায়ী সেমাই কারখানাগুলোতে এসব সেমাই তৈরী হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নোংরা পরিবেশে গোপনে এসব লাচ্ছ-সেমাই তৈরী হচ্ছে। আর এগুলোই যাচ্ছে নগরীর নামি-দামি দোকানগুলোতে। বিএসটিআই’র অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী অস্থায়ী ও স্থায়ী সেমাই কারখানাগুলো থেকে এখন নিয়মিত মাসোহারা আদায় করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু এই চারটি কারখানাতেই নয়, রোজা ও পবিত্র ঈদুল ফিতরকে ঘিরে প্রতিবারের মতো এবারও রাজশাহীর এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা নেমেছে ভেজাল ও নিম্নমাণের লাচ্ছা-সেমাই তৈরীর কাজে। নগরী এবং নগরীর উপকন্ঠের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ৪০টির বেশি মৌসুমি কারখানা এবং আরো অন্তত ১০টি স্থায়ী কারাখানায় ভেজাল ও নিস্নমাণের লাচ্ছা-সেমাই তৈরী হচ্ছে দেদারছে।
শনিবার দিনভর রাজশাহী বিসিক শিল্প নগরীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর বিসিক শিল্প নগরীর বিভিন্ন কারখানার ভেতরে এবং নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গোপনে গড়ে উঠেছে ৪০টিরও বেশি অস্থায়ী সেমাই কারখানা।

এছাড়াও রয়েছে বিশাল, বনফুল, বেলিফুল, রুচিতা, পপুলার, মিষ্টিবাড়িসহ প্রায় ১০ থেকে ১২টি নামি-দামি লাচ্ছা-সেমাই তৈরীর কারখানা। ঈদ উপলক্ষে এসব স্থায়ী এবং অস্থায়ী কারখানায় গত ৮-১০দিন ধরে লাচ্ছা-সেমাই উৎপাদন হচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বাজারজাতও শুরু করেছে। তবে যারা উৎপাদনে গেছে, তাদের মধ্য অধিকাংশ কারাখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে প্রতিদিন শতশত খাচি খোলা লাচ্ছা-সেমাই তৈরী হচ্ছে।
সরেজমিন কয়েকটি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, স্থায়ী কারাখানাগুলোতেও নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরী করে চলেছেন শ্রমিকরা। আর অস্থায়ী কারখানাগুলো গড়ে উঠেছে স্টিল, প্লাস্টিক, লোহাসহ বিভিন্ন কারাখানার ভিতরে ছোট জায়গায় অথবা অলিগলির ভিতরে। কেউ জায়গা ভাড়া নিয়ে অথবা কারখানা মালিকরা নিজেরাই এসব অস্থায়ী সেমাই কারখানা গড়ে তুলেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কারখানা মালিক জানান, প্রতি বছর ঈদুল ফিতরে রাজশাহীতে যে পরিমাণ লাচ্ছা-সেমাইয়ের প্রয়োজন হয়, তা স্থায়ী কারখানাগুলো সরবরাহ করতে পারে না। আবার স্থায়ী কারখানাগুলোর তৈরী লাচ্ছা-সেমাই নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। এর ফলে ঈদকে ঘিরে এবারও রাজশাহীতে বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী কারখানা গড়ে উঠেছে বা উঠছে।

28914
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব কারখানার মালিকরা প্রশাসনের চোখের আড়ালে বা ম্যানেজ করে সেমাই তৈরী করে যাচ্ছেন অনেকটা গোপনে। কেউ কেউ দিনের বেলা আবার কেউ রাতের আঁধারেও তৈরী করছেন খোলা বা প্যাকেটজাত লাচ্ছা-সেমাই। বিএসআটিইয়ের কোনো অনুমোদন ছাড়াই গোপনে এসব অবৈধভাবে নোংরা ও অসাস্থ্যকর পরিবেশে  নিম্নমাণের সেমাই তৈরীর দৃশ্যও দেখা গেছে। আবার তৈরীকৃত অধিকাংশ লাচ্ছা-সেমাইয়ে মেশানো হচ্ছে নিম্নমাণের উপাদান ও ক্ষতিকারক রং।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি অস্থায়ী কারখানার মালিক বলেন, ‘অস্থায়ী কারাখানা মালিকরা বছরের এই সময়টায় শুধু লাচ্ছা-সেমাই তৈরী করেন। কেউ কেউ নিজের বাড়িতেই। আবার কেউ অন্যের জায়গা মাস দুয়েকের জন্য ভাড়া নিয়ে গোপনে তৈরী করেন লাচ্ছা-সেমাই।আর এসব কারখানা থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসনসহ বিএসটিআই’র অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।
বনফুল, রুচিতাসহ আরো কয়েকটি স্থায়ী কারখানার কয়েকজন শ্রমিক নিশ্চিত করেছেন, এই সময়ে চাহিদা প্রচুর থাকার কারণে সঠিক মাণের সেমাই তারাও তৈরী করতে পারছেন না। সেই সঙ্গে অসাধু মৌসুমী ব্যাবসায়ীরাও কারখানা গড়ে তুলে ভেজাল ও নিম্নমাণের লাচ্ছা-সেমাই উৎপাদন করছেন। সবমিলিয়ে এসব কারখানাগুলোতে গড়ে প্রতিদিন তিন হাজার খাঁচি সেমাই তৈরি হচ্ছে।’
ব্যবসায়ীরা জানান, এসব কারখানায় উৎপাদিত লাচ্ছা ও সেমাই রাতের আঁধারেই চলে যাচ্ছে মহানগরীর সাহেব বাজারসহ বিভিন্ন বাজারের খুচরা ও পাইকারি দোকানগুলোতে। আবার কয়দিন পরে নগরীর বাইরে থেকেও ক্রেতারা আসবে পাইকারী দরে লাচ্ছা কিনতে। তখন চাহিদা আরো বাড়বে। সেইসঙ্গে বাড়বে উৎপাদনের মাত্রাও।
এসব প্রসঙ্গে বিএসটিআই এর রাজশাহী আঞ্চলিক উপ-পরিচালক আলতাব হোসেন বলেন, রমজান মাস শুরুর পর থেকেই নগরীতে ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছেন তারা। অসাস্থ্যকর বা অুনমোদনহীন কারাখানায় সেমাই তৈরী হলে সেখানেও অভিযান চালানো হবে।’