রাজশাহীতে তামাকের অবৈধ বিজ্ঞাপনে সয়লাব, পদক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সবুজের সমারোহে সুশোভিত শিক্ষা নগরী রাজশাহী যেন এখন তামাকের বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন আগ্রাসনে ভরে গেছে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে শুধুই তামাক কোম্পানিগুলোর আইন বহির্ভুত অবৈধ বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলোর অবৈধ এসব বিজ্ঞাপন বন্ধে জেলা প্রশাসন আইনগত তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না অভিযোগ রয়েছে। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, তামাক নিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে অভিযান অব্যাহত আছে।

মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, ‘জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল-জেটিআই’ ও ‘ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ-বিএটিবি’ তামাকের বহুজাতিক এই কোম্পানি দুটি’র অবৈধ বিজ্ঞাপনে এখন পুরো নগরী ছেয়ে গেছে। ‘জেটিআই’ তাদের ‘শেখ’ ৪টা, ‘এলডি’ ৫ টাকা, ‘নেভি এখন ৭ টাকা’- এমন বিজ্ঞাপনে পুরো নগরীর আনাচে-কানাচে সয়লাব করে দিয়েছে। আবার ‘বিএটিবি’ বিজ্ঞাপন ছড়াচ্ছে ‘রয়্যালস’ এখন ৫ টাকা। অথচ ধূমপান ও তামাকজাত ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ৫ এর (ছ) ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে- ‘তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে (point of sales) যে কোন উপায়ে তামাকজাত দ্রব্যের প্রচার করবেন না বা করাবেন না। কেউ আইনের এ ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে তার তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।

এদিকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করে রাজশাহীতে জেটিআই তাদের লোগো সম্বলিত কমলা রংয়ের ‘টি-শার্ট’ পড়ে প্রোডাক্ত ডিস্ট্রিবিউট থেকে শুরু করে সকল ধরনের কার্যক্রম দেদারছে পরিচালনা করছে। বিশেষ করে রাজশাহীতে জেটিআই ব্র্যান্ড কালার সম্বলিত এক বিশেষ ধরনের ভ্যানগাড়ি ও টি-শার্ট পড়ে মার্কেটিং করছেন কোম্পানির লোকজন। কিন্তু এমন কৌশলী বিজ্ঞাপন প্রোমোশন ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এব্যাপারে ‘জেটিআই’র এএসআর মো. মিলন মিয়া বলেন, ‘আমরা জানি এমন প্রমোশন আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। কিন্ত আমরা তো চাকরি করি। কোম্পানি আমাদের যেভাবে যা করতে বলেন আমরা তাই করি।’

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে রয়েছে- বিক্রয় স্থলে তামাকপণ্যের প্যাকেট বা মোড়ক সাদৃশ্য কোন দ্রব্য, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড বা অন্য কোনোভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা যাবে না। আইনের এই ধারা অমান্যকারীকে ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক ১ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে।

অথচ মহানগরীর অধিকাংশ তামাকপণ্যের দোকানে তামাকপণ্য রাখার জন্য ‘নজরকারা’ শো-কেস উপহার দেয়া হয়েছে। আবার রাস্তার পাশে বেশ কিছু তামাকপণ্যের দোকানে উপহার দেয়া হয়েছে ছাতা। এছাড়া উপহার দেয়া হয়েছে টি-শার্ট, মগ, স্ট্রে, লাইটার ইত্যাদি।

অভিযোগ রয়েছে- তামাকের বহুজাতিক এসব কোম্পানি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করে দেদারছে তাদের কৌশলী বিজ্ঞাপন প্রমোশন চালালেও জেলা প্রশাসন তা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এভাবে তামাক কোম্পানিগুলোর রমরমা বিজ্ঞাপন বাণিজ্য চলতে থাকলে গ্রিন, ক্লিন, এডুকেশন ও সর্বপরি হেলদি সিটি গড়ার যে গৌরব রয়েছে তা কিছুটা হলেও ম্লান হতে পারে।
এব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর রাজশাহীর সমন্বয়ক সুব্রত পাল বলেন, ‘একটি নগরীকে উন্নত নগরীকে পরিণত করতে হলে কিছু উদ্যোগ নিতে হয়। ক্লিন সিটি, গ্রীন সিটি, এডুকেশন সিটির পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ যদি রাজশাহীকে ধূমপানমুক্ত নগরী ঘোষণা করে তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাজশাহীকে একটা বিশেষ জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব।’
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের জন্য মহানগরীর অভ্যন্তরে তামাকপণ্যের অবৈধ বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে হবে। পাশপাশি নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পাবলিক প্লেসে ধূমপান বন্ধের কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের এডভোকেসি অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম শামীম বলেন, ‘কিছুদিন আগে জেটিআই এর রাজশাহী আঞ্চলিক ডিপোতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ বিজ্ঞাপন সামগ্রী জব্দ ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু তারপরও ‘জেটিআই’ ও ‘বিএটিবি’সহ বেশ কয়েকটি তামাকের বহুজাতিক কোম্পানি পুরো মহানগরীতে তামাকের অবৈধ বিজ্ঞাপনে সয়লাব করে দিয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে তামাকের অবৈধ এসব বিজ্ঞাপন বন্ধে দ্রুত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা জরুরি।’
তবে জেলা প্রশাসন বলছে- তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে প্রশাসন কাজ করছে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. হামিদুল হক বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে বিশেষ করে তামাকের অবৈধ বিজ্ঞাপন বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই অভিযান আরও জোরদার করা হবে।’

স/অ