রাজশাহীতে চালু হয়নি বাস: শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক-দাবি যাত্রীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দুই জেলার বাস মালিকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে রাজশাহী থেকে আজও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অঘোষিত বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রাজশাহীর হাজার হাজার যাত্রী।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ করে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে কবে নাগাদ শুরু হবে এ নিয়ে এখনো খোলাসা করে কেউ কিছু বলতে পারছে না। অন্যদিকে নাটোর মিনি বাস মালিক সমিতি গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন।

এর মধ্যে সমাধান না হলে তারা নাটোরের ওপর দিয়ে সখল ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দিবেন। ফলে সমস্যা সমাধানের উপায় এখন পর্যন্ত রাজশাহী ও নাটোরের বাস মালিক-শ্রমিকরা বের করতে না পারলেও সঙ্কট আরো ঘোনিতভূত করেছে উভয়পক্ষ।

যদিও এর জন্য রাজশাহীর শ্রমিক নেতাদেরই বেশি আকারে দায়ী করছেন সবাই। তারা শ্রমিক নেতার আড়ালে নিজেরাও রাস্তায় বাস নামিয়ে মাস্তানি করার কারণে এবং নাটোরের বাস থেকে অবৈধ চাঁদাবাজির প্রতিবাদেই এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলেও দাবি করেছেন নাটোরের বাস মালিক-শ্রমিকরা।

তারা রাজশাহীর বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কামাল হোসেন রবি ও সাধারণ সম্পাদক এবং নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা মাহাত হোসেন শ্রমিক নেতার আড়ালে নিজেরাই রাস্তায় গাড়ী নামিয়ে মাস্তানী করছেন বলেও অভিযোগ০ তুলেন।

এদিকে এই দুই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন রাজশাহীর যাত্রীরাও। রাজশাহীর আবুল কালামসহ একাধিক যাত্রী যারা নিয়মিত বাসে চলাচল করেন, তারা অভিযোগ করে  সিল্কসিনিটি নিউজকে জানানন, মাহাতাব-রবির কারণেই রাজশাহীতে কথায় কথায় বাস ধর্মঘট ডাকা হয়। তাদের দুজনের ব্যক্তি স্বার্থের কাছে জিম্মি এখানকার বাস মালিক-শ্রমিকরা। ফলে তারা দুজন বাস বন্ধ করার হুকুম দেওয়ামাত্র আর দেরি করেন শ্রমিকরা। লাঠি-সোঠা নিয়ে মাস্তানি করতে রাস্তায় নেমে পড়েন বাস শ্রমিকরা।

তাদের সঙ্গে কিছু ভাড়াটেদেরও রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয় বলেও ওই ‍দুই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। বাস বন্ধ হয়ে গেলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ যাত্রীদের।

যাত্রীদের অভিযোগ, এই দুই নেতার কাছে রাজশাহীর প্রশাসনও জিম্মি হয়ে পড়েছে। ফলে কথায় কথায় বাস ধর্মঘট ডেকে বা বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়ে তার পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে রাজশাহীতে বাস ধর্মঘট বা বাস নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে নৈরাজ্য করার সাহস কেউ দেখাবেন না। তাই দ্রুত এই দুই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা।

এদিকে বুধবার সকালে রাজশাহী বাস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, শত শত মানুষ বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে এসে ব্যাগ-পোটলাসহ বাসের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন। কিন্তু বাস চলাচলের কোনো আশ্বাস পাচ্ছেন না যাত্রীরা। আবার কাউন্টারগুলো বন্ধ থাকায় অনেকেই দিশেহারা হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

মাসুমা খাতুন নামের একজন যাত্রী সিল্কসিনিটি নিউজকে জানান, অনেকেই বাস না পেয়ে ছুটছেন ট্রেনের দিকে। কিন্তু সেখানেও যায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় আবার ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে। এতে করে জরুরী প্রয়োজনেও বিভিন্ন গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়েও শুধুমাত্র বাস না পেয়ে ফের বাড়ির পথেই যেতে হচ্ছে হাজার হাজার যাত্রীদের।

অনেকেই বিভিন্ন স্থান হতে রাজশাহীতে এসে আটকা পড়েছেন বলেও সিল্কসিটি নিউজের কাছে দাবি করেন মাহমুদ আলী নামের এক যাত্রী। তিনি কুমিল্লা থেকে গত শনিবার রাজশাহীতে তার এক নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। মঙ্গলবার দুপুরে তার বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও বাস বন্ধের কারণে তিনি আর যেতে পারছেন না-জানান মাহমুদ।

এসব নিয়ে বুধবার সকালে রাজশাহী বাস শ্রমিক নেতা কামাল হোসেন রবি ও মাহাতাব হোসেনের ফোনে একাধিবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।

তবে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ইফতে খায়ের আলম মঙ্গলবার রাতে সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘বাস মালিক-শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে। দ্রুতই সমাধান হবে বলে আশা করছি।’

স/আর