রাজশাহীতে ক্লিনিক ছেড়ে বাসায় রোগী দেখছেন চিকিৎসক, এলাকায় আতঙ্ক


নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনা ভাইরাসের কারণে রাজশাহীকে লক ডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। জরুরী সেবা ও পণ্য পরিবহন ছাড়া কোন যানবাহন প্রবেশাধিকারও নিষিদ্ধ রয়েছে। এক্ষেত্রে এ্যাম্বুলেন্স এবং মাইক্রোবাসই এক মাত্র ভরসা। জরুরী চিকিৎসা সেবা নিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না গিয়ে যেসকল রোগীরা প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোতে যান তারা পড়েছেন বিপাকে। কেননা চিকিৎসকগণ সেই প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে রোগী দেখছেন না। কিন্তু তাতেও নতুন এক ভোগান্তির সম্মুক্ষীন হতে হচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে আতঙ্ক।

নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে নিজ বাসায় নিয়মিত রোগী দেখছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রাসেউল কবীর পলাশ। তার নিয়মিত রোগীরা চেম্বারে দেখাতে না পেরে বাসাতেই চিকিৎসা সেবা নিতে আসছেন। প্রতিদিনই রাজশাহী বিভিন্ন জেলা উপজেলা এমনকি রাজশাহীর বাইরে থেকেও রোগীরা আসেন মাইক্রোবাসে করে। চিকিৎসা সেবা পেয়ে রোগী ও তার স্বজনেরা সুবিধা কিছুটা স্বস্তি পেলেও তাতে অসন্তোস এলাকাবাসীর। চলমান করোনার ভয়াবহ এলাকার ভেতরে যেকোন মানুষের চলাফেরা যেখানে সীমাবদ্ধ এমন পরিস্থিতে রাজশাহীর বাইরে থেকে আসা রোগী দেখা নিয়ে ক্ষোভ জন্মেছে এলাকাবাসীর।

বুধবার বিকেলেও মাইক্রোবাস এবং ভ্যানে করে চিকিৎসা নিতে আসেন বেশ কিছু রোগী। রোগীর স্বজনদের বাইরে অপেক্ষা করতে দেখে তা সন্দেহের কারণ হয় স্থানীয়দের মাঝে। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে মাইক্রোবাস রেখে রিকশাযোগে চিকিৎসকের বাসায় পৌছানো লাগে। এদের মধ্যে কোমরের ব্যাথা নিয়ে রোগী গোলাম কবীর কিবরিয়া এসেছিলেন দূর্গাপুর থেকে। একই ভ্যানে স্ত্রী দুই কন্যা সন্তান নিয়ে প্রথমে প্রাইভেট ক্লিনিকে এবং পরে চিকিৎসকের বাসায় যান চিকিৎসা করতে। মাইক্রোবাসে কুষ্টিয়া জেলা ও জেলার মেহেরপুর থেকে আসেন আরও দুই রোগী। জানা যায়, তাদের প্রত্যেকেই প্রথমে ক্লিনিকে এবং পরে বাসায় এসেছেন চিকিৎসা নিতে।

রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলে জানায়, দীর্ঘ দিন থেকে তারা ডা: রাসেউল কবীর পলাশের কাছে চিকিৎসা সেবা নিয়ে আসছেন। এই লক ডাউনের মাঝেও সমস্যা অনুভব হওয়ায় রাজশাহীতে এসেছিলেন চিকিৎসা করতে। কিন্তু বিকেল হয়ে যাওয়ায় প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসকের দেখা না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে বাসাতে এসেছেন। এতে করে ভোগান্তির সম্মুক্ষীণও হতে হয় তাদের।

মেহেরপুর থেকে আসা রোগী চুমকির স্বজন বলেন, সকালে আসার সুযোগ হয়নি। তবে ক্লিনিকে ডাক্তার বসলে আমাদের এই ভোগান্তি হতো না। এখানে রোগী দেখানো হলেও রোগীর কাতর অবস্থায় টানা হেচড়া করা লাগতো না।

একই কথা জানান দুর্গাপুরের গোলাম কিবরিয়ার স্বজনও। তার মতে চেম্বারে রোগী দেখলে ওষুধ কিনতেও সুবিধা হতো কিন্তু এখন উল্টো পথে যেতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, এই দু:সময়ে ডাক্তার রোগী দেখছেন তা খুবই ভাল উদ্যোগ কিন্তু তার জন্য নির্দিস্ট স্থান রয়েছে। যেহেতু রোগীরা জেলার বাইরে থেকেও আসছে সেহেতু এটি আতঙ্কের বিষয়। রোগীরা তাদের স্বজনদের নিয়ে চিকিৎসকের বাড়ির সামনে ভীড় করছে বিষয়টি মোটেও সুখকর নয়।

তারা আরও জানায়, এর আগেও বাসায় রোগী দেখার কারণে পুলিশের সহায়তা নেওয়া হয়। নগরীর উপশহর পুলিশ ফাড়িতে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানানোর পর তারা ওই চিকিৎসকের সাথে কথা বলেন এবং তাকে বাসায় রোগী না দেখতে অনুরোধ করেন। তবুও সকলের আড়ালে একের পর এক রোগী দেখে চলেছেন। এতে করে এলাকায় এক রকম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

তবে এই বিষয়ে জানতে চিকিৎসক রাসেউল কবীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।