রাজশাহীতে কোনো সমস্যা ছাড়াই নির্বিঘ্নে করোনার টিকা প্রয়োগ

করোনার ভ্যাকসিন নিচ্ছেন সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা

আমজাদ হোসেন শিমুল:

মহানগরীতে ৩টিসহ রাজশাহীতে মোট ১৩টি কেন্দ্রে প্রথমদিন নির্বিঘ্নে করোনার টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা কিংবা যারা টিকা নিয়েছেন তাদের কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি। আজ রবিবার সকাল ১০টায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রে রাজশাহীতে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছেন সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। আর দুপুর ১২টায় পুলিশ লাইন হাসপাতাল কেন্দ্রে রাজশাহীতে করোনার টিকা প্রদানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

বিভাগীয় পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে করোনা টিকা প্রদানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করছেন রাসিক মেয়র লিটন

এদিকে সরেজিমনে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রামেক হাসপাতাল (৩১ নম্বর ওয়ার্ড) কেন্দ্রে করোনার টিকা প্রদান বিষয়ে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) সকল নিয়ম মেনেই টিকাপ্রদান করা হচ্ছিলো। তিন ঘণ্টায় এই কেন্দ্রের ৪টি বুথে মোট ১২০ জনকে করোনার টিকা প্রদান করা হয়। টিকা প্রদানের পর প্রত্যেকে নিয়ম অনুযায়ী ৩০ মিনিট বিশ্রামে রাখা হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে টিকা নেয়ায় কারও কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি।

এই কেন্দ্রে এমপি বাদশার টিকা নেয়ার পর তার সহধর্মিনী অধ্যাপক তসলিমা খাতুন, রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আদিবা আনজুম মিতা, রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী, উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস এবং সিভিল সার্জন ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার করোনার টিকা গ্রহণ করেন। কারও কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানান তারা।

করোনার ভ্যাকসিন নিচ্ছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল

রামেক হাসপাতাল কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকায় ছিলেন রাজশাহী সিটি রেডক্রিসেন্টের সদস্য মো. আব্দুল্লাহ আল মুরশিদ। তার দায়িত্ব ছিল যারা টিকা প্রদান করেছেন তাদের ৩০ মিনিট বিশ্রাম নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী টিকা নেয়ার পর সবাইকে ৩০ মিনিট বিশ্রাম নেয়ার কথা বলা হয়েছে। আমিসহ কয়েকজন ভলিন্টিয়ার রয়েছি যাদের দায়িত্ব হচ্ছে- টিকা গ্রহণকারীদের ৩০ মিনিট বিশ্রাম নিশ্চিত করা।’

রামেক হাসপাতাল কেন্দ্রের ৩ নম্বর (পুরুষ) বুথের টিকাপ্রদানের দায়িত্বে থাকা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. শাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার টিকা প্রয়োগের জন্য রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন থেকে আমাদের দুই দিনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। সেই প্রশিক্ষণের আলোকে স্বাস্থ্য সংস্থার সকল নিয়ম-কানুন মেনে এই বুথে সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মোট ৫২ জনকে টিকা প্রদান করা হয়েছে। টিকা নেয়ার পর নির্দিষ্ট সময় বিশ্রামে থেকে তারা চলে গেছেন। কারও কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি।’

ওই কেন্দ্রের দুই নম্বর বুথে (মহিলা) টিকা প্রদানের দায়িত্বে থাকা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. আজাদুজ্জামান বলেন, “করোনার এই টিকার নাম ‘কভিশেল্ড’। এই শিশির মধ্যে ৫এমএল ভ্যাকসিন রয়েছে। প্রত্যেকে ০.৫ এমএল করে হাতের মাংশপেশীর গভীরে টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী- একটি শিশির ভ্যাকসিন মোট ১০ জনের ওপর প্রয়োগ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কারও কোনো সমস্যা দেখা যায়নি।’

রামেক হাসপাতাল কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা ডা. আ.ন.ম. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে অনেকে রিউমার ছড়াচ্ছে। কিন্তু এই রিউমার ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এই টিকা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আমার স্ত্রীসহ আমি টিকা নিয়েছি। টিকা নেয়ার পর আমার কোনো ধরনের খারাপ অনুভূতি নেই। তাই গুজবে কান না দিয়ে নিয়ম অনুযায়ী সকলকে করোনার টিকা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’

টিকা গ্রহণকারী রামেক হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. প্রবীর মোহন বসাক বলেন, ‘টিকা গ্রহণের জন্য আমি রেজিস্ট্রেন করেছিলাম। গত রাত ১১টার দিকে টিকা গ্রহণের এসএমএস পাই। সেখানে টিকার প্রখস ডোজ গ্রহণের কেন্দ্র, তারিখসহ টিকা কার্ড ও এনআইডি কার্ড সঙ্গে আনতে হবে বলে উল্লেখ ছিল। এসএমএস পাওয়ার পর প্রথম দিনই এসে টিকা নিলাম। আমার মধ্যে কোনো ধরনের খারাপ লাগা কিংবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

রামেক হাসপাতাল কেন্দ্রেই রাজশাহীতে প্রথম করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন রাজশাহী-০২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। ভ্যাকসিন গ্রহণের পর নিজের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ভ্যাকসিন আমার কাছে নিরাপদ মনে হয়েছে। কোন ধরনের ব্যাথা অনুভব করিনি। ভ্যাকসিন নেয়ার পর কোনরকম অস্বাভাবিকও মনে হয়নি। তাই ভয় না পেয়ে সবাইকে করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। আমার আমার, এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের মধ্যদিয়ে করোনাকে পরাজিত করে করোনামুক্ত সুস্থ্য একটি বাংলাদেশ তথা বিশ্ব গড়ে তুলতে পারবো।’

শুধু সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, ডা. মোজাম্মেল কিংবা ডা. প্রবীরই নন; এই কেন্দ্রে টিকা গ্রহণকারী প্রায় ২৫ জনের সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়। টিকা গ্রহণে তাদের কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি বলে জানান।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘করোনার টিকা প্রদানের জন্য আমরা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। প্রশিক্ষিত হয়ে তারা করোনার টিকা প্রদান করছে। কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা পরিলক্ষিত হয়নি।’

রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, ‘রাজশাহীতে উপজেলা পর্যায়ে ১০টি কেন্দ্রে টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ৯ উপজেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। এর বাইরে গোদাগাড়ী উপজেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও গোদাগাড়ী ৩১ শয্যাবিশিষ্ট বিশেষায়িত হাসপাতালে টিকা দেয়া হচ্ছে। প্রথমদিন টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা কম থাকার কারণে সীমিত আকারে বুথ আছে। তবে পযার্য়ক্রমে চাপ বাড়ার সাথে সাথে বুথের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। প্রথম ধাপে রাজশাহীর ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব। আপাতত যারা অ্যাপে নাম নিবন্ধন করেছিলেন তাদের টিকা দেয়া শুরু হয়েছে।’ এই মূহুর্তে ১৫টি ক্যাটাগরির নাগরকিরদের টিকা দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এএইচ/এস