রাজশাহীতে করোনায় মুত্যুর মিছিল বাড়ছেই, চলতি মাসে রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। গত মাসের চেয়ে চলতি মাসে মৃত্যু হার আরও বেড়েছে। একদিন কমছে তো পরের দিন আবার বেড়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত কমলেই মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নানা শ্রেণী-পেশা ও বয়সের মানুষ। সর্বশেষ রামেক একদিনে (গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত) ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আগের দিন মঙ্গলবার এ হাসপাতালে ২৪ ঘন্টায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়। তার আগের দিন মৃত্যু হয় ১৪ জনের। তবে চলতি মাসে এ হাসপাতালে গতকাল বুধবারই ছিল সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। চলতি মাসে এ নিয়ে রামেক হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে মোট ২৩৬ জন মারা গেছে। ফলে চলতি মাসে এখন গড়ে প্রায় ১৭ জনেরও বেশি রোগী মারা গেছেন। অথচ গত মাসে গড়ে এ হাসপাতালে মারা গেছে ১৩ জনের মতো।

রামেক হাসপাতালের দেওয়া তথ্য চিত্রে দেখা যায়, চলতি জুলাই মাসে এ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে মোট মারা গেছে ২৩৬ জন রোগী। যাদের মধ্যে আইসিইউতে মারা গেছে মাত্র ৩২ জন। বাকি ২০৪ জনই মারা গেছে সাধারণ ওয়ার্ডে। চলতি মাসে মারা যাওয়া ২৩৬ জনের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৫ জন। আর বাকি ১৮১ জন মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে এবং করোনামুক্ত হয়েও বেশ কয়েকজন মারা গেছেন চিকিৎসাধীন অবস্থায়।

এর আগে গত জুন মাসে রাজশাহী হাসপাতালে চিকিৎসার্ধীন অবস্থায় করোনা ওয়ার্ডে মোট রোগী মারা যায় ৪০৫ জন। যার মধ্যে করোনা আক্রান্ত ছিলেন ১৯৮ জন। বাকিরা করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান।
রামেক হাসপাতালের দেওয়া তথ্য চিত্রে আরও দেখো যায়, এ হাসপাতালে মূলত গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে করোনা রোগী ভর্তি শুরু হয়। ওই মাসে মোট ২৫ জন রোগী ভর্তি হলেও কেউ মারা যায়নি। তবে পরের মাস মে থেকে করোনা আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে রোগী মৃত্যু শুরু হয়।

হাসপাতালের দেওয়া ওই তথ্য চিত্রে দেখা যায়, গত বছরের আগস্ট মাস থেকে করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু শুরু হয় এ হাসপাতালে। এর আগে এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত করোনা রোগী ভর্তি হলেও আক্রান্ত কেউ মারা যাননি। তবে উপসর্গ নিয়ে ওই চার মাসে মোট যান ১৫৩ জন। এরপর আগস্টে করোনা আক্রান্ত হয়ে এবং উসর্গ নিয়ে মারা যান ৯৭ জন। যার মধ্যে আক্রান্ত ছিলেন ২৬ জন। এরপর সেপ্টেম্বরে মোট ৫০ জনের মধ্যে করোনা আক্রান্ত ছিলেন ১৩ জন, অক্টোবরে ২৮ জনের মধ্যে আক্রান্ত ৬ জন, নভেম্বরে ৩১ জনের মধ্যে আক্রান্ত ৪ জন, ডিসেম্বরে ৩৪ জনের মধ্যে আক্রান্ত ১১ জন, জানুয়ারিতে ২৯ জনের মধ্যে আক্রান্ত ৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৭ জনের মধ্যে আক্রান্ত ১ জন, মার্চে ৩১ জনের মধ্যে আক্রান্ত ৩ জন, এপ্রিলে ৭৯ জনের মধ্যে আক্রান্ত ৩৬ জন, মে’তে ১২৪ জনের মধ্যে আক্রান্ত ৫৩ জন, জুনে ৪০৫ জনের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু গিয়ে দাঁড়ায় ১৮৯ জনে।

এদিকে গত কয়েকদিন থেকে রামেক হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তির স্যখ্যা একটু কমেছে। সর্বশেষ গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত এ হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি ছিলেন ৫০০ জন। আগের দিন মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিলো ৫০৪ জন। ৪৫৪টি শয্যার বিপরীতে এ পরিমাণ রোগী চিকিসাধীন ছিলেন। কিন্তু গত কয়দিনে এ হাসপাাতলে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা সমানে বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে গতকাল সকাল পর্যন্ত একেিদন চলতি মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার শামীম ইয়াজদানী জানান, হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। রোগী ভর্তিও হচ্ছে অনেক। এতে করে একের পর এক ওয়ার্ড বাড়াতে হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এটি খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। রোগীর সেবা দিতে আগামীতে আরও করোনা ওয়ার্ড বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে বলেও জানান তিনি।

স/আর