রাজশাহীতে একটি সিনেমা হল তবুও দর্শক খরায় বন্ধ!

শাহিনুল আশিক:


উপহার, কল্পনা, বর্নালী, অলকা, লিলি নামের সিনেমা হল অনেক আগেই বন্ধ হয়েছে। নেই শেষ চিহ্ন টুকুও। রাজতিলক বন্ধ দীর্ঘদিন ধরে। একমাত্র বাবুল সিনেমা হল চালু আছে, কিন্তু ভুগছে দর্শক খরায়।
দর্শকরা বলছেন- ভালো মানের সিনেমা আসে না হলে। তাই দেখার আগ্রহ নেই তাদের মধ্যে। আর হল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনলাইনে এখন সব ছবি দেখতে পাই দর্শক। এছাড়া করোনা ভাইরাসের কারণে দর্শক খরা দেখা দিয়েছে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটার ‘বাবুল সিনেমা’ হল। একমাত্র সিনেমা তাও বন্ধ। খোদ হল ম্যানেজার নজিবুল ইসলামের মনে নেই শেষ কবে সিনেমা চলেছে, সেই সিনেমার নাম কী? তবে দর্শকের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ অবস্থায় রয়েছে হলটি। হল সংশ্লিষ্টরা বলছেন- করোনাভাইরাসের কারণে হল ইদে খেলা সম্ভব হয়নি। এখন সিনেমা হল খোলার অনুমতি থাকলেও নেই দর্শক। তাই বন্ধ সিনেমা হলটি।

নওহাটায় ৫২ বছর বয়সের শ্রী মদন মোহন জানান, ‘বাবু আগে তো শহরের সিনেমা হলগুলোতে যেতাম। তখন হলগুলোতে ভালো ভালো সিনেমা চলতো। এই বাবুল সিনেমা হল তেমন চলতো না। শহরের সিনেমা হলগুলো একের পর এক ভাঙ্গার কারণে বাবুল সিনেমা হলে কয়েকটি ভালো সিনেমা আনায় চলছিল। সেগুলো দেখিছি। এখন এই হলটিও বন্ধ।

সরেজমিনে পবা উপজেলা নওহাটার ‘বাবুল সিনেমা’ হলে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকে তালা ঝুলানো। একজন গার্ড থাকে পাহারায়। হল বন্ধ- নেই কোনো চাপ। শুধু দেখভালের জন্য কর্মচারী রাখা হয়েছে। তবে সিনেমা হলটি বন্ধ হওয়ায় কর্ম হারিয়েছেন ১২Ñ১৫ জন। এই মানুষগুলো বিকল্প পেশা বেছে নিয়েছেন। তাদের দাবি- সিনেমা হল পুরো দমে চললে- আবার কাজে ফিরতে চান তারা।

‘বাবুল সিমেনা’ হলের ম্যানেজার নজিবুল ইসলাম জানায়, হল দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। তবে শেষ ছবির নাম এই মুহূর্তে মনে নাই। হল চললে তেমন দর্শক হয় না। হল বন্ধ, তার পরেও প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকার মত খরচ হচ্ছে।

তিনি বলেন- আমাদেরও প্রত্যাশা ভালো সিনেমা নিয়ে আসার। তাতে খরচ বেশি। তবুও দর্শক বাড়লে পর্যায়ক্রম এমন সিনেমাগুলো নিয়ে আনা হবে। ভালো সিনেমা হলে শো করতে আমাদেরও (হল মালিক) ইচ্ছে হয়। তবে বিভিন্ন কারণে তা হয়ে উঠে না।

অন্যদিকে, রাজশাহী নগরীতে কয়েকটি সিনেমা হল ছিলো। সবগুলো একের পর এক ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। শুধু অবকাঠামো রয়েছে কাটাখালীর রাজতিলক সিনেমা হলের। তবে হলটি বিক্রি হয়েছে দীর্ঘদিন আগে। এর পরে কাটাখালীতে বিদ্যুৎ স্টেশন তৈরির সময় সেখানকার শ্রমিকরা রাজতিলক সিনেমা হলটি খোলার উদ্যোগ নেয়। এরপর তারা মনপুরা সিনেমা চালায়। সিনেমা হলে প্রথম দিকে দর্শকের বেশ সাড়া থাকলেও পরের দিকে দর্শক খরায় ভুগতে থাকে। তার কিছু দিন পরে পুরোদমে বন্ধ হয় রাজতিকল সিনেমা হল।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ড. সাজ্জাদ বকুল বলেন, সিনেমা হলগুলোতে দর্শক খরা। এমন অবস্থা পুরো দেশে। তিনি বলেন, এখন হলে তেমন দর্শক নেই। দর্শক ভালো ছবি পাচ্ছে না। এছাড়া হলগুলোর পরিবেশও ভালো না। পরিবেশ ফেরাতে হলগুলো সংস্কার দরকার। এখন দর্শকের বিনোদনের অন্য মাধ্যম খুলে গেছে। সেখান থেকে দর্শক ফিরিয়ে আনতে অনেক কাজ করতে হবে। ভালো বাজেটের ছবি তৈরি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহী একটি বিভাগীয় শহর। কিন্তু একটিও সিনেমা হল বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হলো না। বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রকে উদ্যাগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। রাজশাহীতে অন্তত একটি সিনেমা হল রখার ব্যবস্থা করা দরকার।

স/আ