নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের নামে প্রবর্তিত ‘ঋত্বিক ঘটক সম্মাননা পদক-২০১৭’ গ্রহণ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ও প্রখ্যাত অভিনেতা ব্রাত্য বসু এবং বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মিলনায়তনে ঋত্বিক ঘটকের জন্মভিটায় ব্রাত্য বসু ও জয়া আহসানের হাতে সম্মাননা পদক তুলে দেওয়া হয়।
এদের মধ্যে সংষ্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারায় তার হয়ে পদক গ্রহন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর সাইদুর রহমান খান।
পদক পেয়ে ব্রাত্য বসু বলেন, একজন সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক ভাবে প্রথম পুরুষ্কার পেয়েছি তাতে অত্যান্ত গর্বিত। আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর আমার ভাষা নেই। এ ধরনের পুরস্কার সামনের দিনে তার যে অবসাদ, বিষণ্নতা এবং যে উৎসাহ- এ সব মিলিয়ে এমন কোনো রসায়নে পৌঁছে দেবে যার জন্য আরও একদিন, আরও একবার, আরও এক মুহূর্তের জন্য আরও একটি কাজ করার উৎসাহ দিবে।
জয়া আহসান বলেন, রাজশহী পূর্ণ ভূমি তা ঋত্বিক ঘটক ও হাসান অজিজুল হক স্যারের কারণে। তারা দুই সংস্কতিকে জোড়া লাগিয়েছে। অমি একজন ক্ষুদ্র সংস্কৃতিকর্মী। নূর ভাই ও ব্রাত্য বুসুর সাথে নাম জরিয়েছে এ পদককে তাই আমি অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, আমি যে এ সম্মাননা পেয়েছি তার উপর আর কিছু নেই। রাজশাহীর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
ঋত্বিক সম্মাননা পদক প্রদান শেষে ঋত্বিক কুমার ঘটকে নিয়ে অধ্যাপক ফজলুল হক এর লেখা “এক বিরলপ্রজ প্রতিভার নাম” বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি ডা.এফ.এম.এ জাহিদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেব উপস্থিত ছিলেন, কথাসহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ব্রাত্য নিজেকে ছোটবেলা থেকে নিজেকে সংস্কৃতি কর্মে নিজেকে লিপ্ত রেখেছে সেটা এখন ফলে-ফুলে ও কিন্ত একটা বিশাল বৃক্ষ হয়ে উঠেছে। তার ছবি আমি দেখিনি কিন্তু তার নাটক কয়েকটি দেখেছি আমি। সেই ব্রাত্য আজ এসেছে। এটা আমাদের সৌভাগ্য যে তাকে আমারা একটা পদক উপহার দিতে পারছি।
জয়া আহসান সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এই যে এত অল্প বয়সে আসাধারণ প্রতিভার অধিকারী এটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। একদিন আকরাম খান ফোন দিয়ে বলেন আপনার খাঁচা গল্পটা আমরা করতে চায়। খাঁচা গল্পে তাই হয় যেদিকে যাওয়া যায় একটা বেড়া থাকে পার হওয়া যায় না, এটাই খাঁচার নিয়ম।
এছাড়া অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন, সাবেক হাই কমিশনার , যুক্তরাজ্য সাবেক উপাচার্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ আওয়ামীগের উপদেষ্টা ড. সাইদুর রহমান খান, সহকারী ভারতীয় হাইকমিশনার, রাজশাহী অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের কাউন্সিল সদস্য প্রেমেন্দু মজুমদার, রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি আহসান কবির লিটন, ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মাসুদসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দরা।
পরে তারা ঋত্বিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী দেখতে রাজশাহী মাহনগরীর লালন মঞ্চ পদ্মা পাড়ে যান।
এর আগে, ৪ নভেম্বর ঋত্বিক ঘটকের ৯২তম জন্মদিনে তার জন্মভিটা রাজশাহীতে ভিকে জোসেফ, অধ্যাপক ফজলুল হক ও অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামানিকের হাতে ঋত্বিক ঘটক সম্মাননা পদক তুলে দেওয়া হয়।
এবার ভারত-বাংলাদেশ থেকে পুরস্কার পাচ্ছেন, ভিকে জোসেফ, আসাদুজ্জামান নূর, ব্রাত্য বসু, অধ্যাপক ফজলুল হক, অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামানিক ও জয়া আহসান।
থিয়েটার ও সিনেমায় ভূমিকা রাখার জন্য সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রতি বছর ‘মেঘে ঢাকা তারা’ খ্যাত নির্মাতা ঋত্বিক কুমার ঘটকের নামে পুরস্কার দেওয়া হয়।
ঋত্বিকের পুরো নাম ঋত্বিক কুমার ঘটক। তিনি ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন, মারা যান কলকাতায় ১৯৭৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। বর্তমানের রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজটিই চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈত্রিক নিবাস। ঋত্বিক ঘটক চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ শেষ করেন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে। ১৯৪৬ সালে আইএ পরীক্ষা দেন রাজশাহী কলেজ থেকে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পরপরই পরিবারের সঙ্গে চলে যান ভারতে। তার নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো এখনও দর্শকদের বিমোহিত করে।
ভিন্নধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণের কারণে তিনি আজো স্মরণীয়, তার সিনেমাগুলো বহুল প্রশংসিত। ঋত্বিক নির্মিত সিনেমা হলো— নাগরিক, অযান্ত্রিক, বাড়ী থেকে পালিয়ে, মেঘে ঢাকা তারা, কোমল গান্ধার, সুবর্ণরেখা, তিতাস একটি নদীর নাম ও যুক্তি তক্কো আর গপ্পো।
উল্লেখ্য, গত বছর ঋত্বিক ঘটক এর ৯১তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে দুই বাংলার পাঁচ চলচ্চিত্রকার ও গবেষককে ঋত্বিক ঘটক সম্মাননা পদক দেয়া হয়। তারা হলেন, দাশগুপ্ত (ভারত), মোরশেদুল ইসলাম (বাংলাদেশ), চলচ্চিত্র গবেষক প্রেমেন্দ্র মজুমদার (ভারত), অনুপম হায়াৎ (বাংলাদেশ) ও আলোকসম্পাতক আবু তাহের (বাংলাদেশ)।
২০০৯ সাল থেকে এ পদক দিয়ে আসছে ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি।
স/অ