রাজধানীর ২৩ স্কুল এখনো দখলে

সিল্কসিটনিউজ ডেস্ক:

দখলদারদের চিহ্নিত করার পর তিন বছরেও দখলমুক্ত হয়নি রাজধানীর ২৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ের জমি ও ভবনের দখলদারদের তালিকায় ক্ষমতাবান-প্রভাবশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও রয়েছেন।

এমনকি সাতটি বিদ্যালয়ের জমিতে বসেছে ওয়াসার পাম্প, ১০টির জমিতে হয়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং পাঁচটির জমি দখল করেছে বিভিন্ন কলেজ।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ২০১৪ সালে প্রভাবশালীদের দখলে থাকা রাজধানীর ৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকা তৈরি করে। এ কমিটি ওই বছর অক্টোবরে একটি উপকমিটি করে দেয়। এরপর উপকমিটি ওই ৫১টি বিদ্যালয়ের ২৩টি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে।

গত তিন বছরে দুবার এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। তবে তাতে শুধু আলোচনা চলছে, সুপারিশ করা হয়েছে এসবই বলা হয়েছে।

এদিকে এই ২৩ বিদ্যালয়ের বাইরে তালিকার বাকি ২৮ বিদ্যালয়কে দখলমুক্ত দাবি করা হলেও বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। কিছু বিদ্যালয়ের জমি-ভবন দখলমুক্ত করার কিছুদিন যেতে না যেতে আবারো দখলে চলে গেছে।

রাজধানীর পুরান ঢাকার ইসলামিয়া ইউপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা ও ভবন দখল করে রেখেছিল একটি চক্র।

৫১ বিদ্যালয়ের তালিকায় এই বিদ্যালয়ের নামও ছিল। নাম আসার কিছুদিন পর তা দখলমুক্ত করা হয়। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের নিয়ে ওই বিদ্যালয় পরিদর্শনও করেন। এরপর নতুন ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে চলতি বছরের শুরুর দিকে পুরনো ভবন ভাঙার নিলামও ডাকা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু এরপর একটি গ্রুপ আদালতের এক বছরের নিষেধাজ্ঞার কাগজপত্র নিয়ে হাজির হয়। তখন নিলাম স্থগিত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। রাজধানীর বেদখল হওয়া ২৩ বিদ্যালয়ের ব্যাপারে সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন তৈরি করেছে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। তাতে বলা হয়, কোতোয়ালির এফ কে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলা বংশাল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দখলে রয়েছে এবং বিদ্যালয়ের নিচতলায় দোকান। ছোট কাটরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি অংশও শাহ আব্দুল কালান্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দখলে। নাজিরা বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমস্যা স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করে নিষ্পত্তি করতে হবে। গেণ্ডারিয়া মহিলা সমিতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গায় কিছু দোকান তুলে দখল করা হয়েছে; যা জরুরি ভিত্তিতে উচ্ছেদ করা প্রয়োজন।

ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সূত্রাপুরের এম এ আলীম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা কম রেকর্ড হওয়ায় ল্যান্ড ট্রাইব্যুনালে রেকর্ড সংশোধন মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া বেদখল হওয়া ৫ শতাংশ জমি থেকে উচ্ছেদের জন্য অবৈধ দখলদারদের তালিকা করে জেলা প্রশাসককে দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বাংলাবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় নিকটবর্তী স্থানে সরকারের খাস জমি বা অর্পিত সম্পত্তিতে জরুরি স্থানান্তর করার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া বলা হয়, সূত্রাপুরের শিশুরক্ষা সমিতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরনো ভবন নিলাম করা হয়েছে এবং ভাঙার কাজ চলছে। গাবতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের দোকান ও বিল বোর্ড সরাতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহযোগিতা নিতে হবে। বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) চিঠি দিতে হবে।

পল্লবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি সার্ভেয়ারের মাধ্যমে জমি মেপে সীমানা নির্ধারণ করার কথা বলা হয় ওই প্রতিবেদনে। এতে উল্লেখ করা হয়, উচ্চ বিদ্যালয়ের মালামাল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পল্লবীর আ. মান্নান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি অবাঙালিদের দখলে রয়েছে। বিদ্যালয়ের জায়গা অনুকূলে আনার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। পল্লবীর উত্তর কালশীর খলিলুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমির মালিকানা নির্ধারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয় সমন্বয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করতে হবে। পল্লবীর বনফুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি উদ্ধারে অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হতে বলা হয় প্রতিবেদনে।

সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনে দিলকুশা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গায় অবস্থিত দোকানগুলো দরপত্রের মাধ্যমে ভাড়া দেওয়ার কথা বলা হয়। আর ধানমণ্ডি ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থিত ‘ল’ কলেজটি স্থানান্তর করতে হবে। বিদ্যালয়ের জায়গায় টিনের ঘর উচ্ছেদ করতে হবে। বিদ্যালয়ের দুটি কক্ষও অবৈধ দখলে রয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মোহাম্মদপুরের শাহীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৬ শতাংশ জমি রয়েছে। তবে অবৈধ দখলদাররা একটি অংশ দখল করে রেখেছে। এ জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহযোগিতা নিতে বলা হয়।

এ ছাড়া আগারগাঁও তালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মসজিদের অজুখানা রয়েছে। মোহাম্মদপুরের বরাবো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে।

প্রতিবেদনে যাত্রাবাড়ীর ব্রাহ্মণ চিরন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দখলদারকে জরুরি ভিত্তিতে উচ্ছেদ করার কথা বলা হয়। এ ছাড়া মাতুয়াইল পশ্চিমপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়কে মৃত নূর মোহাম্মদের দান করা ২১ শতাংশ জমি খুঁজে বের করতে হবে। মাতুয়াইলের ধার্মিক পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দখলদার নজরুল ইসলামের বিষয়ে বিস্তারিত পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসককে জানাতে বলা হয়।

মতিঝিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা মতিঝিল কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের দখলে আছে। এ জন্য সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে বলা হয় প্রতিবেদনে। এ ছাড়া বলা হয়, মতিঝিলের টিএন্ডটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমির কাগজপত্র সংগ্রহ করে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে হবে। খিলগাঁও স্টাফ কোয়ার্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি সার্ভেয়ার দিয়ে জমি মাপা হয়েছে। এখন দখলদারদের উচ্ছেদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসব বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিন আরা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনেক বিদ্যালয়ের জমি উদ্ধারের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তা প্রয়োজন। এ ছাড়া বেশ কয়েকটিতে আইনি জটিলতা রয়েছে। ফলে সব বিদ্যালয় সম্পূর্ণভাবে দখলমুক্ত করতে সময় লাগছে। তবে আমরা এরই মধ্যে অনেক বিদ্যালয়ের জমিই পুনরুদ্ধার করতে পেরেছি। বাকিগুলোর ব্যাপারে আমরা নিয়মিতই সরেজমিন পরিদর্শন করে অগ্রগতি প্রতিবেদন তৈরি করছি। সেই অনুসারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ’

সূত্র: কালের কণ্ঠ