যৎসামান্য টাকা পাচার হয়, নজর দেওয়ার মতো নয়

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বিদেশে টাকা পাচার হয় না একথা আমি বলবো না। তবে যা পাচার হয় তা অতি যৎসামান্য। এটা নজরে নেওয়ার মত নয়। সুইচ ব্যাংকে টাকা পাচারের বিষয়টি বাস্তবে মোটেই তেমন কিছু নয়। টাকার যে হিসাব গণমাধ্যমে বেরিয়েছে ওইগুলো সুইস ব্যাংকের সঙ্গে এদেশের লেনদেন হিসাব ও সম্পদের হিসাব। কিন্তু আমাদের সাংবাদিকরা অত্যন্ত অন্যায়ভাবে এই টাকা পাচার বলে দিয়েছেন। সেজন্য দেশে একটা ভুলবুঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে।

সুইস ব্যাংকে অর্থ পাচার নিয়ে জনমনে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করতে আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দেন অর্থমন্ত্রী। ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিবৃতি দিতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সংবাদ মাধ্যমে সুইচ ব্যাংকের টাকা পাচারের কাহিনি ফলাও করে প্রচারিত হচ্ছে, হয়েছে।

বলা হয়েছে যে, ২০১৬ সালের শেষে বাংলাদেশিদের জমাকৃত অর্থের পরিমাণ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে ২০১৬ সালে ৬৯৪ মিলিয়ন ডলার ১৫ সেন্টে উন্নীত হয়েছে। যা ২০১৫ সালে ছিল ৫৮২ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন ডলার। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিটেলিজেন্স ইউনিট অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

সুইস ব্যাংকের লেন-দেনের হিসাব দুটি ছকে উল্লেখ করে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশের খাতে সুইস ব্যাংকগুলোর সম্পদ। আর এক ছকে বাংলাদেশের খাতে সুইস ব্যাংকগুলোর দেনা। ব্যাংকের সম্পদ যেসব অর্থ তারা ঋণ দেয়। তাদের ঘরবাড়ি আছে বলেই তো তারা ঋণ দেয়। আর দেনা হচ্ছে তাদের কাছে ডিপোজিটরা যে টাকা রাখেন, সেটা দেনা। ডিপোজিটদের টাকা ফেরত দিতে হয়।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের খাতে সুইস ব্যাংকের সম্পদ হচ্ছে ২০১৬ সালে এক হাজার ২৩ কোটি টাকা। এই সময়ে তাদেরও দেনা ৫ হাজার ৫৬০ কোটি। অর্থাৎ এক হাজার ৮২৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে এবং তাদের কাছে জমা হয়েছে ৫ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী বলেন, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকের হিসাব ব্যক্তি খাতে মোট দেনা ৩৯৯ দশমিক ৮ কোটি। যা মাত্র ৭ শতাংশ। ব্যক্তি সম্পদ এক হাজার ৮২৩ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ১৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, বাস্তবে মোটেই অর্থ পাচার নয়। এটা নিয়ে অনেকের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। আমি মনে করি এই বিবৃতিতে তার অবসান হবে। ব্যক্তিখাতে অনেক হিসাব আছে। যারা বিদেশে চাকরি করে অথবা স্থায়ীভাবে বিদেশে কাজ করে। তাদের হিসাব এতে অন্তভর্ক্ত আছে। তাদের কত টাকা আছে সেই তথ্য দিতে পারছি না। কারণ তাদের পাসপোর্টের হিসাব আমাদের কাছে নেই।

পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে সুইস ব্যাংকে টাকা পাচার নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, অর্থমন্ত্রীর এই বিবৃতি আগে দেওয়া হলে জনমনে এমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতো না। ভ্যাট প্রণয়ন ছিল যে ভুল এই সত্যতা উনি স্বীকার করেছেন। এটা স্বীকারের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রীর মহত্বই প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ জানে যে অনেকেই সেকেন্ড হোম করে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। দেশের ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে কোন বিবৃতি দেওয়া হয়না। এ কারণে জনগণ ধরেই নেয় যে, এসব টাকা লুটপাট হয়েছে। সরকারি বাতিগুলো লালবাতি জ্বলছে।