সোমবার , ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১লা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

যৌন হেনস্থা ও কাস্টিং কাউচ নিয়ে সরব পশ্চিমবাংলার বিনোদন জগৎ

Paris
সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪ ৯:৩২ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের প্রতিবাদে যখন উত্তাল ভারত, সেই সময়ই কেরালার অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কে হেমার নেতৃত্বাধীন কমিটির রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে দক্ষিণ ভারতের মালয়ালম চলচ্চিত্র জগতে ‘কাস্টিং কাউচ’ এবং নারীদের যৌন হেনস্থার একের পর এক ঘটনা।

এরপর শুধুমাত্র কেরালাই নয় উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের বিনোদন জগতও। দাবি জানানো হয়েছে, হেমা কমিটির মতো তদন্ত কমিটি সেখানেও হোক।

সেই ছোঁয়াচ এড়াতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা পাড়া টলিউডও।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর কাছে হেমা কমিটির মতো তদন্তের আবেদনও জানিয়েছেন টলিউড অভিনেত্রীদের কেউ কেউ।

টেলিঅ্যাকাডেমি, ইস্টার্ন ইন্ডিয়ান মোশান পিকচারস-সহ সংশ্লিষ্ট সংগঠনের শীর্ষকর্তাদের চিঠি লিখে হেমা কমিটির আদলে কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন বাংলার বহু কলাকুশলী। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের তালিকায় অভিনেত্রী বিদীপ্তা চক্রবর্তীও রয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ”আরও আগেই হওয়া উচিৎ ছিল এই কমিটি যাতে যাদের এমন নারকীয় ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে তারা অভিযোগ জানাতে পারতেন। যাই হোক এখন অন্তত হচ্ছে।”

তারপরই পশ্চিমবঙ্গের ‘ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিসিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’ নারী নিরাপত্তার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে।

ফেডারেশনের সভাপতি ও তৃণমূল নেতা স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, ”ফেডারেশনের আওতায় থাকা গিল্ডের সিনিয়র নারী সদস্য এবং আইনজীবীদের নিয়ে সুরক্ষা বন্ধু নামে কমিটি তৈরি হয়েছে। সমস্যার সম্মুখীন হলে কমিটিকে জানানো যাবে। কোথায় ও কীভাবে অভিযোগ দায়ের করতে হবে এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি পরামর্শও দেওয়া হবে।”

”যদি (নির্যাতিতার) কাউন্সেলিং বা অন্যান্য চিকিৎসাগত সাহায্য দরকার হয় তাহলে তা তিনি বিনামূল্যে পাবেন।”

কিন্তু এর আগে কী কোনও অভিযোগ আসেনি? তার উত্তরে বিবিসি বাংলাকে মি. বিশ্বাস বলেন, ”কয়েকজন অভিনেত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকজন পরিচালক এবং প্রোডিউসারের নামে অভিযোগ করেছেন। এর আগে ফেডারেশনে এসে কেউ এমন অভিযোগ করেননি। যখন দেখলাম তারা এগিয়ে আসছেন এবং বলছেন আমরা এগুলো (অভিযোগ) কোথায় বলব? তখনই সুরক্ষা বন্ধুর কথা আমরা ভাবি।”

ফেডারেশনের এই পদক্ষেপকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন। আবার অনেকেই মনে করেন টলিউডে এমন ঘটনা রুখতে আরও কড়া পদক্ষেপ দরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিনেত্রী বলেন, ”যে ইন্ডাস্ট্রি কাস্টিং কাউচ হয় বলে স্বীকারই করে না সেখানে কমিটি কী করবে? এখানে সমস্যাটা অনেক গভীরে।”

কিন্তু ‘সমস্যা’ ঠিক কতটা গভীরে?

মালয়ালম সিনেমা জগতের ভয়াবহ চিত্র সামনে এনেছে যে হেমা কমিটি, সেরকম একটি তদন্ত কমিটি চাইছে টলিউডের অনেকে।

‘এমন কাজের জায়গা চাই যেখানে কেউ আমায় ছোঁবে না’

“কলেজে পড়াকালীন মডেলিং-অভিনয়কে পেশা করতে চেয়েছিলাম। নবাগতা বলে জানানো হয়েছিল, আমার গ্রুমিংয়ের প্রয়োজন। একদিন গ্রুমিংয়ের নাম করে ডেকে যৌন হেনস্থার চেষ্টা করে একজন। কোনওমতে বেঁচেছিলাম,” বিবিসি বাংলাকে বললেন এক তরুণী।

কিছুক্ষণ থেমে যোগ করলেন, “পরের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা মডেলিংয়ের সময়। সেদিন কিন্তু বন্ধুকে নিয়ে গিয়েছিলাম। স্টুডিওর বাইরে ছিল বন্ধু।”

“যে শুট করছিল সে তার সামনেই পোশাক পরিবর্তন করতে বলে। রাজি হইনি। এরপর আমাকে যৌন হেনস্থার চেষ্টা করে। বাইরে বন্ধু বসে আছে বলে ভয় দেখানোয় ছেড়ে দিয়েছিল। বেরিয়ে এসে ডুকরে কেঁদেছিলাম। আমি শুধুমাত্র এমন কাজের জায়গা চাই, যেখানে কেউ এভাবে ছোঁবে না।”

জানা গিয়েছে অডিশন, কাজ নিয়ে আলোচনা বা স্ক্রিপ্ট পড়ার নামে ডেকে পাঠানো হয় অভিনেত্রীদের। অন্তরঙ্গ দৃশ্য মহড়ার নাম করেও হেনস্থা হয়।

“কারণ সাধারণত মহড়ার কথা বললে সন্দেহ হবে না। মডেল ও অভিনেত্রীরা বলেছেন, কীভাবে বাইরে শুট করতে গিয়ে তাদের জানানো হয়েছে হোটেলে একটাই কামরা বুক করা আছে। তাকে সেটা অন্য পুরুষদের সঙ্গে ভাগ করে থাকতে হবে,” বলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিনেতা।

তার অভিযোগ, “মডেলদের ক্ষেত্রে স্বল্প পোশাক পরতে বলা হয়, পোশাক পরিবর্তনের সময় লুকানো ক্যামেরায় সেই দৃশ্য বন্দি করে তাকে ব্ল্যাকমেল ও যৌন সংসর্গের জন্য বাধ্য করা হয়।”

প্রচলিত ধারণা

হেমা কমিটির প্রতিবেদনে উঠে আসা উল্লেখযোগ্য বিষয়ের মধ্যে একটা হলো এই প্রচলিত ধারণা যে অভিনয়ের প্রতি ভালবাসা থেকে নয়, অর্থ এবং খ্যাতির জন্য মেয়েরা বিনোদন জগতে আসেন এবং তারা তা পাওয়ার জন্য ‘সবকিছু মেনে নিতে প্রস্তুত’।

“আমি যখন প্রথম প্রথম এই দুনিয়ায় এসেছিলাম তখন টেকনিশিয়ানদের বলতে শুনতাম- অমুকে সিনেমায় নেমেছে। মানে সিনেমায় ওঠা হয় না, নামা হয়। এই পেশা নিয়ে প্রচুর প্রচলিত ধারণা আছে যা শুনলে মনে হয় মুখ লুকোই। কী করি জিজ্ঞাসা করলে প্রতিবেশীদের কী বলব?” বলছিলেন আইভি চ্যাটার্জী।”

হেমা কমিটির রিপোর্টে জানানো হয়েছে এর জন্য দায়ী ‘পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা’।

ছবি- লীনা গাঙ্গুলি

এই প্রসঙ্গে মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন এবং পরিচালক ও লেখিকা লীনা গাঙ্গুলি বলেন, “আমি বাংলার পাশাপাশি মুম্বইয়ের টেলিভিশন জগতে কাজ করে বুঝেছি এখন মেয়েরা অনেক বেশি সোচ্চার। অনেক শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা বিনোদন জগতে আসছেন তারা হয়তো অন্য যে কোনও পেশায় যেতে পারতেন কিন্তু ভালবেসে এই জগতে এসেছেন তাদের দমিয়ে রাখা সহজ নয়। আর উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকা তো ভাল।”

“কিন্তু আবার কাজের তাগিদ এমন হওয়া উচিৎ নয় যে আমি সব কিছু মেনে নিলাম।”

এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অন্যদিকও তুলে ধরেছেন অভিনেতা টোটা রায় চৌধুরী । তার কথায়, “পিতৃতান্ত্রিক এই চিন্তাধারা ভারতসহ এই উপমহাদেশের সর্বত্র দেখা যায়। যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু আর একটু এগিয়ে, অনেক বেশি প্রতিবাদী এবং সঙ্গবদ্ধ। শুধু তাই নয় সেখানে আইনি ব্যবস্থায় দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয় যে কারণে মানুষ জানে তাদের দিনের পর দিন লড়তে হবে না।”

“কিন্তু এখানে কেউ এগিয়ে এসে অভিযোগ করলে তাকে দিনের পর দিন আদালতের যেতে হয়। যিনি অভিযোগকারী ভয় পান তার সময় চলে যাবে এবং কেরিয়ারও শেষ হয়ে যাবে। এই ভয়েও অনেকে এগিয়ে আসেন না।”

‘একটা লাশের জন্য অপেক্ষা করছে টলিউড?’

“সাত বছর আগে যখন ঘটনাটা ঘটেছিল তখন প্রায় কেউই এগিয়ে আসেননি আমার দু’এক জন বন্ধু ছাড়া। যে আমাকে অডিশনের নাম করে ডেকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল সেই পরিচালক আজ দিব্যি কাজ করে বেড়াচ্ছে। কী পরিবর্তন আশা করছি আমরা?” বিবিসিকে বলেছিলেন এক অভিনেত্রী। ঘটনাটা ২০১৭ সালের।

ওই পরিচালকের নামে একাধিক অনুরূপ অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগকারী বলেন, “ওই পরিচালক কিছুদিন জেলেও ছিল, টলিউড লোক দেখানোর জন্য কয়েক মাস তাকে ব্ল্যাকলিস্ট করেছিল। দুঃখের বিষয় অন্যান্য অভিনেত্রীরা সব জানা সত্ত্বেও কাজ করেছে ওই পরিচালকের সঙ্গে। শুধুমাত্র একজন প্রতিবাদ করেছিল।”

একটু থেমে তিনি যোগ করেন, “কীসের অপেক্ষা করছে টলিউড? অভিযোগগুলোই কী যথেষ্ট নয়? তবে কি একটা লাশের জন্য অপেক্ষা করছে ওরা?”

ছবি- মডেল ও অভিনেত্রী দর্শনা বণিক।

যে অভিনেত্রী প্রতিবাদ করে ওই পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেননি তার নাম দর্শনা বণিক, টলিউডের নাম করা মডেল-অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন।

বিবিসি বাংলাকে দর্শনা বণিক বলেছেন, “একটা ওয়েব সিরিজে কাজের সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু যখন জানতে পারি পরিচালক নোন অফেন্ডার, আমি কাজ করতে চাইনি।”

“আমাকে অনেকে বলছিলেন- এমন কাজের সুযোগ হাতছাড়া করতে নেই, ওইটুকু মেনে নিতে হবে ইত্যাদি। আমি রাজি হইনি। ওয়েব সিরিজের কাজটা কিন্তু থেমে থাকেনি। আমার বদলে অন্য কেউ কাজ করেছিলেন। মেয়েরাই যদি সমবেত হয়ে এগিয়ে এসে এদের একঘরে করি, তাহলে আর সাহস পাবে না। কিন্তু বাস্তবে কাজ হারানোর ভয়ে কেউ এগিয়ে আসে না।”

কাস্টিং কাউচ

টলিউডে কাস্টিং কাউচের কথা জনসমক্ষে স্বীকার করেন এমন মানুষ কম। না প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিনেত্রীর কথায়, “সবাইকে বলতে শুনবেন, তার সঙ্গে এমন ঘটনা হয়নি। তিনি অন্যদের কাছে শুনেছেন এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সমস্যা এখানেই।”

হেমা কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই নবাগতাকে সরাসরি না বলে অন্যভাবে বোঝানো হয় ‘আপোষ না করলে টেকা যাবে না।’

টলিউডেও ‘কম্প্রোমাইজ’, ‘কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হবে’, ‘কাজের জন্য কিছু ক্রাইটেরিয়া আছে’ এমন অনেকভাবেই বুঝিয়ে দেওয়া হয় নবাগতাকে।

“এখানে শোষণ অন্যভাবেও হয়। সরাসরি না বলে প্রকান্তরে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। একে বলে স্মার্ট মুভ। অনেকটা ক্যাচ ছোঁড়ার মতো ছুঁড়ে দেওয়া, যদি সেই শিল্পী কোনও রকম সাড়া দেন,” বলেছেন আইভি চ্যাটার্জী।

টলিউডের পরিস্থিতি নিয়ে নিজের মতামত জানিয়েছেন অভিনেতা খরাজ মুখার্জী।

কলকাতার বিনোদন জগতে কর্মরত কলাকুশলী এবং মডেলরা জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে সহ-অভিনেত্রীকে বা মেকআপ আর্টিস্টকে মধ্যস্থতা করতে বলা হয়। কারণ একজন নারী সহজেই অন্য নারীর বিশ্বাস অর্জন করতে পারে।

অভিনেতা খরাজ মুখার্জী বলেছেন, “বিষয়টা হলো কাকে প্রাধান্য দিচ্ছি- আমার হেনস্থার ঘটনাকে নাকি কাজের সুযোগকে। যে অভিনেত্রী শোষিত হতে হতে একটা সময় লাইম লাইটে চলে আসছেন তাকে আর ওইদিনটা ফিরে দেখতে হচ্ছে না।”

“ততদিনে ঘোলা জলটা পেরিয়ে চলে এসেছেন। পরের জলটা পরিষ্কার। এখন তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে সামনে দিকের ঘোলা জল তিনি পেরবেন কি না।”

‘প্রভাব’

হেমা কমিটির রিপোর্টে ‘মাফিয়া রাজের’ কথা বলা হয়েছে যেখানে প্রভাবশালী অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজকরা ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। টলিউডের ক্ষেত্রেও চিত্রটা এক জানিয়েছে ওয়াকিবহাল মহল।

লীনা গাঙ্গুলি বলেন, “আমাদের (মহিলা কমিশন) কাছে এমন মামলা আসে। বিভিন্ন কেসের মেরিট বিভিন্ন, সেখানে যৌন হেনস্থার ঘটনাও আছে। সমস্যা হলো মেয়েরা মুখ বুজে থাকে। ভয় পায়, হয়ত যিনি দায়ী তিনি অনেক ক্ষমতা সম্পন্ন। কিন্তু তারা না বললে কোনও কমিটিরই কিছু করার নেই।”

বাংলার বিনোদন জগতের অনেকেই অভিযোগ জানিয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের অনেকেরই রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে। যে কারণে মুখ খুলতে ভয় পান ভুক্তভুগীরা। আবার রাজনৈতিক ‘ছত্রছায়ায়’ থাকার আশায় অনেকেই ‘মেনে নেন’ এই ‘প্রভাবশালীদের প্রভাব’।

এই প্রসঙ্গে খরাজ মুখার্জী বলেছেন, “রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কাছে থাকাটা সবসময় সুবিধাজনক। এখন বিষয় হলো সেই ক্ষমতা কে কীভাবে ব্যবহার করবে।”

তবে সোচ্চার হওয়া নারীদের যে আর ‘দমিয়ে’ রাখা যাবে না তেমনটা মনে করেন অনেকেই। অভিনেতা টোটা রায় চৌধুরী বলেন, “রাজনৈতিক দলের কাছে ভাবমূর্তি বড় বালাই। একবার যদি নামগুলো সামনে চলে আসে তাহলে কেউ তাদের দলে রাখতে চাইবে না। মেয়েরা যদি সাহস করে এদের না বলে এবং তাদের দু’একজনের নামও সামনে আনে তাহলে রাজনৈতিক দলগুলো এদের বার করে দেবে।”

“শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে একটা পোস্ট ভাইরাল হতে সময় লাগে না। আমি অনুরোধ করব ভয় না পেয়ে মেয়েরা এইবার বলেদিক সবকিছু।”

তবে অভিযুক্ত যে সবসময় প্রভাবশালী ব্যক্তি তাও নয়।

“এখানে পাওয়ার প্লে অন্যভাবে হয়। বিরাট প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিই যে হেনস্থা করেন তা নয়। স্টুডিওতে একজন সামান্য কাজ করা লোকের হাতেও নবাগতারা হেনস্থা হন। কারণ বিনোদন জগতের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় স্টুডিওর বাইরে বসা লোকটা আসলে কী কাজ করে বা তার উদ্দেশ্য কী,” বলেছেন মডেল-অভিনেতা অনমিত্র বটব্যাল। জানিয়েছেন সহশিল্পীদের উপর এজাতীয় ঘটনার প্রভাবও।

“আমি দেখেছি এই ঘটনার সম্মুখীন হয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে মেয়েরা, দ্বিধায় ভুগেছে বাড়িতে বাবা-মাকে কী বলবে কারণ অভিভাবকেরা হয়ত জানেনই না মেয়ে অভিনয় বা মডেলিং করে। এই পেশা ছেড়ে চলে যেতেও দেখেছি আর নতুন প্রতিভাদেরও নিরুৎসাহ করে এমন ঘটনা,” বলেছেন মি. বটব্যাল।

প্রবীণ অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তী।

কিন্তু বরাবরই এমন চিত্র ছিল?

প্রবীণ অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তী যিনি ভারতীয় সিনেমার স্বর্ণযুগের সাক্ষী, বিবিসি বাংলাকে তার কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তার কথায়, “বাংলা বিনোদন জগতের এই অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। আমিও একসময় নবাগতা ছিলাম, কিন্তু তখন একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন শিল্পীরা। আমরা কাজ করেছি, তার জন্য অনেক কষ্টও করতে হয়েছে, তখন তো এত সুযোগ সুবিধাও ছিল না কিন্তু এই দুরবস্থা ছিল না। ভাবতে লজ্জা হয়।”

“এমনটা চলতে থাকলে কী অভিভাবকেরা চাইবেন আদৌ অভিনয়কে তাদের সন্তান পেশা হিসাবে বেছে নিক?”

সুরক্ষা কমিটি নিয়ে ভিন্ন মতামত

হেমা কমিটির আদলে কোনও কমিটি গঠন হলে তা বাংলার বিনোদন জগতের জন্য ভাল বলে মনে করেন অনেকে।

পরিচালক সুদেষ্ণা রায় বলেছেন, “এই ঘটনা চিরকাল ঘটে এসেছে কিন্তু আগে আমরা সোচ্চার হতাম না। এতদিন মুখ বুজে মেনে নিয়েছে এখন তারা আর মানতে রাজি নয়। এটা খুব ইতিবাচক একটা দিক। আর কমিটি গঠনের পদক্ষেপকে আমি সাদরে স্বাগত জানাই।”

একই কথা জানিয়েছেন টোটা রায় চৌধুরীও। তিনি বলেন, “হেমা কমিটি যে দরজা আমাদের সামনে খুলে দিয়েছে সেটা প্রশস্ত করার দায়িত্ব কিন্তু আমাদের সবার। এই অপরাধীদের কোনও ক্ষমা নেই। একজনকে ক্ষমা করলে বাকিরা সুযোগ পেয়ে যাবে।”

বাংলা বিনোদন জগত যে সোচ্চার হচ্ছে সে বিষয়ে আশাবাদী তিনি।

ছবি- টোটা রায় চৌধুরী।

“আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কিন্তু ইতিমধ্যে এর বিরুদ্ধে একটা পদক্ষেপ শুরু হয়েছে এবং সেটা যদি আগামী তিন-চার বছর চলতে থাকে এবং সকলে সমবেত ভাবে এইলোকগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তাহলে এটা বন্ধ করা যেতে পারে।”

“কারণ অভিনেত্রী এবং নারী কলা-কুশলীরা এখানে সুরক্ষিত নন সেই বার্তা বাইরে যাক সেটা কেউ চাইবে না। এতে শুধু মাত্র ইন্ডাস্ট্রির ভাবমূর্তিই খারাপ হয় না ব্যবসাও প্রভাবিত হয় এইটা তারা বুঝতে পারবে।”

“মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রি যাদের ছবি সর্বত্র একটা সমাদরের জায়গায় চলে গিয়েছে তখন এমন একটা ঘটনা সামনে আসা সেই ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে ভাল হয়নি। পরোক্ষভাবে ব্যবসার পক্ষেও খারাপ। এইটা টলিউডও বুঝতে পারবে। আর মেয়েদের বলব আর ভয় পাবেন না, এগিয়ে আসুন। একইসঙ্গে আমরা পুরুষরাও চোখ কান খোলা রাখব, রুখে দাঁড়াব।”

সিনিয়র সাংবাদিক অন্তরা মজুমদার বিনোদন জগৎ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তার পর্যবেক্ষণ বলছে, “লক্ষণীয় বিষয় হলো যে যখন নারী শিল্পীরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন তখন ফোকাস প্রায়শই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের থেকে দূরেই থাকে। যেমন #মিটু আন্দোলনের সময় একাধিক প্রভাবশালী পরিচালকের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগগুলো দ্রুত গতি হারায়।”

“এই অভিযোগের পর কোনও বড়সড় প্রভাব পড়া ছাড়াই পরিচালকরা কিন্তু তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে অভিযোগকারিণীরা মিডিয়া থেকে খুব কম মনোযোগ পেয়েছেন। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরগুলোকে নীরব করে দেওয়া হয়, যা বিচারের জন্য লড়াই চালানো নারীদের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম।”

“কিন্তু প্রশ্নগুলো ক্রমাগত তুলে ধরতে হবে, সঠিক তদন্ত যাতে হয় তার জন্য চাপ দিতে হবে। যাতে অভিযোগকারিণীরা নিছকই প্রলাপ বকছেন একথা বলে কেউ পার না পেয়ে যায়।”

সূত্র: বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক