যে তিন কাজে মহানবী (সা.) নিরুৎসাহিত করেছেন

ইসলাম ‘শান্তির ধর্ম’। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘সহজ করো, কঠিন করো না; সুসংবাদ জানিয়ে আহ্বান করো, ভীতি প্রদর্শন করে তাড়িয়ে দিয়ো না।’ (বুখারি)

এমন বাস্তবতায় ইসলামের দৃষ্টিতে ভিক্ষাবৃত্তি, ঋণগ্রহণ, বিবাহবিচ্ছেদ নিন্দনীয় বৈধ বিষয়। সমাজের কেউ কি সাধারণত ভিক্ষা করা, ঋণ নেওয়া, বিবাহবিচ্ছেদ পছন্দ করে? সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ করে না।

ভিক্ষাবৃত্তি : ইসলাম ‘বৈধ-পবিত্র’ অর্থোপার্জনে উৎসাহ দেয়। ইবাদতের সঙ্গে আর্থিক সামর্থ্য জড়িত এবং ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হালাল জীবিকা। সবার ‘রিজিকদাতা’ মহান আল্লাহ মানুষের জন্য ব্যবস্থা করেছেন ‘রিজকান কারিমা’ (সম্মানজনক জীবিকা) এবং এর অর্জন কৌশল হতে হবে ‘হালালান তাইয়্যেবা’ বা  বৈধ ও পবিত্র (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৮)

এ কথা সত্য যে ভিক্ষাবৃত্তি সম্মানজনক জীবিকা নয়। ইসলামী শরিয়তের বিধান মতে, ভিক্ষা কখনো মুমিন ব্যক্তির পেশা বা বৃত্তি নয়। প্রিয় নবী (সা.) পরমুখাপেক্ষিতাকে শুধু ‘সর্বনাশা অভাব ও অপমানজনক দেনা’র ক্ষেত্রে অনুমোদন করেছেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর সতর্কবাণী হলো—‘যে অভাবের কথা মানুষের কাছে প্রকাশ করে তার অভাব দূর হবে না; বরং যে তা আল্লাহর কাছে নিবেদন করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।’ (আবু দাউদ)। প্রিয় নবী (সা.) আরো বলেন, ‘শক্তিসম্পন্ন ও সুস্থ-সবল ব্যক্তির পক্ষে ভিক্ষা করা হালাল নয়।’ (তিরমিজি)।

ইসলাম কর্মহীন ও বেকারত্ব সমর্থন করে না বলেই প্রিয় নবী (সা.) সাহায্যপ্রার্থীকে ‘বনে গিয়ে কাঠ কেটে’ সাবলম্বিতা অর্জনের পথ দেখিয়েছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ২০৭৫)

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ বাড়ানোর জন্য মানুষের কাছে সম্পদ ভিক্ষা করে, সে আগুনের ফুলকি ভিক্ষা করছে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২২৮৯)

প্রিয় নবী (সা.) আরো বলেন, ‘মানুষ সর্বদা লোকের কাছে ভিক্ষা করে পরিণামে (কিয়ামতের দিন) তার মুখমণ্ডলে গোশত থাকবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২২৮৬)

ঋণগ্রহণ : প্রিয়নবী (সা.) ‘ঋণ, রোগ, শত্রু’ এ তিন জিনিসকে ক্ষুদ্র ও সামান্য মনে করে অবহেলা করতে নিষেধ করেছেন। এ জন্য নিতান্তই বাধ্য হলেও ঋণগ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ইসলামে ‘করজে হাসানা’ তথা সুদ ও শর্তহীন ঋণগ্রহণকে সমর্থন করা হয়। এ জন্যই ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে অর্থসংশ্লিষ্ট ইবাদত (হজ, জাকাত, কোরবানি, ফিতরা) স্থগিত রেখে ঋণ পরিশোধের তাগিদ দেওয়া হয়। এমনকি সুরা তাওবার ৬০ নম্বর আয়াতে বর্ণিত জাকাতগ্রহীতার আটটি খাতের একটি ‘অসহায় ঋণগ্রস্ত’।

পাওনাদারের পাওনা হাক্কুল ইবাদ তথা বান্দার অধিকার। পাওনাদারের পাওনা পরিশোধ না করলে মহান আল্লাহও ঋণগ্রহীতাকে ক্ষমা করবেন না।

জান্নাত পিয়াসী মুমিনদের ঋণের ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকা জরুরি। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির মৃত্যু হবে অহংকার, খিয়ানত এবং ঋণ থেকে মুক্ত হয়ে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৫৭২; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪১২)। অর্থাৎ ঋণগ্রস্ত হয়ে মারা গেলে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তা ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) মৃত ব্যক্তির সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টনের আগে মৃতের ঋণ পরিশোধ করার ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়েছেন। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৭২২৭)

আর হাদিস থেকে জানা যায় যে আল্লাহর পথে শহীদ হওয়া ব্যক্তিও তার ঋণের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ২২৪৯৩)

বিবাহবিচ্ছেদ : দুটি মন ও পরিবারের মেলবন্ধনে সংসার সুখের স্বর্গ এবং তা বজায় রাখা ইবাদততুল্য। কিন্তু তা একেবারেই অসম্ভব হলে বিবাহবিচ্ছেদ একটি উপায় মাত্র। পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণার জন্য ‘তালাক’ নামক একটি সুরা আছে। এ ছাড়া সুরা বাকারা, নিসা, নূর, মুজাদালা প্রভৃতি সুরায় বিবাহবিচ্ছেদসংক্রান্ত বিভিন্ন পারিভাষিক বিশ্লেষণ আছে।

পারিবারিক বৈরী পরিবেশে শান্তি-স্বস্তির নির্দেশনা দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যেসব নারীর অবাধ্যতা আশঙ্কা করো, তবে তাদের উপদেশ দাও; শয্যাসঙ্গী হতে বিরত রাখো এবং তাদের শাসন করো (সামান্য প্রহার)। যদি তারা অনুগত হয়ে যায় তবে তাদের জন্য অন্য কোনো বিকল্প খুঁজবে না…আর যদি উভয়ের মধ্যে বিরুদ্ধভাব প্রবল মনে করো, তবে পুরুষ ও নারীর পক্ষে একজন করে স্বজনকে মীমাংসাকারী মেনে সমাধানে উদ্যোগী হও। যদি তারা সমাধানে ইচ্ছুক হয়, তাহলে আল্লাহও তাদের প্রতি অনুকূল হবেন…।’ (ভাবানুবাদ, সুরা নিসা, আয়াত : ৩৪-৩৫)

ইসলামী শরিয়তে অতি প্রয়োজনে তালাকের অবকাশ থাকলেও বিষয়টি অপছন্দনীয়। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপ্রিয় বস্তু হচ্ছে তালাক।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৭৭)

তাই নারী-পুরুষ উভয়ের কর্তব্য তালাক থেকে দূরে থাকা। তালাক দেওয়ার ক্ষমতা যেহেতু পুরুষের, তাই পুরুষকে ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে খুবই সংযমী হতে হবে। অন্যদিকে নারীর ব্যাপারেও হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে নারী স্বামীর কাছে বিনা কারণে তালাক প্রার্থনা করে, তার জন্য জান্নাতের সুঘ্রাণ পর্যন্ত হারাম।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২০৫৫)

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ