যে কারণে বিশ্বভারতী প্রাঙ্গনে ‘বাংলাদেশ ভবন’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রবীন্দ্রনাথ গেয়েছেন,

‘আমাদের শান্তিনিকেতন,

সে যে সব হতে আপন

মোদের প্রাণের সঙ্গে প্রাণে সে যে মিলিয়েছে একতানে

মোদের ভাইয়ের সঙ্গে ভাইকে সে যে করেছে আপন,

সে যে শান্তিনিকেতন..৷’

শান্তিনিকেতন এ উপমহাদেশের জ্ঞান, শিল্প ও মুক্তিসাধনার এক তীর্থকেন্দ্র। বাংলাদেশের মানুষের কাছে শান্তিনিকেতন কিংবা বিশ্বভারতী শুধু শিক্ষা বা সাধনের ক্ষেত্রই নয়, বাঙালির রুচি ও সংস্কৃতির এক অনন্য ক্ষেত্রও হয়ে আছে। রবীন্দ্রনাথকে যদি বাঙালির জীবন নদীর প্রথম ও প্রধান প্রবাহ ধরা হয়, তাহলে বিশ্বভারতীকে ধরতে হবে তার মোহনা। এখানে যেন উন্মুক্ত বাঙালি জীবনের বিশালতা। বিশ্ববাংলার এক গভীর সান্নিধ্য এই শান্তিনিকেতন। শান্তি, সম্পর্ক আর সৌহার্দ্যের এই প্রাণকেন্দ্রেই ১৯২১ সালে রবীন্দ্রনাথ স্থাপন করেন বিশ্বভারতী।

আর এই বিশ্ব ভারতীতেই এবার আমাদের প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদাপূর্ণ উপস্থিতি আমাদেরকে অনেক বেশি গর্বিত করেছে। সবচেয়ে বড় সাফল্য সূচিত হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ভবন’- এর আনুষ্ঠানিক যাত্রায়। আমাদের চারদিকে ভারত। সেখানে আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সবকিছুর এক কেন্দ্র, দেশভূমির বাইরে চেতনার শক্তির এক বড় ক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো।

পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল ও বহু সংস্কৃতির দেশ ভারতের সঙ্গে আমাদের এখনকার সম্পর্ক তাৎপর্যময়। বলা যেতে পারে, আমাদের অগ্রগতি ও চেতনার হালনাগাদ সৌকর্য বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার অংশ হিসেবেই এই সম্পর্ক।

অবশ্যই বলতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী পদক্ষেপ ধারাবাহিকভাবে জয়লাভ করছে। বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসে ভারত প্রধানতম সহায়ক শক্তি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নজাল যে জায়গাগুলো থেকে গাঁথা হয়, তার এক নিবিড় আশ্রয়স্থল ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ।

পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি সড়কে, পুরনো ভবনে, পুরোনো মানুষদের মাঝে বাংলাদেশ গড়ে আছে অনন্য এক প্রতিবেশ। সেখানকার বিদগ্ধজনদের কাছে বাংলার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বিস্ময় হয়ে আছেন। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের গর্ব উপমহাদেশের মহান নেতা, বাংলাদেশের জাতির জনকের শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে জীবনের অনেক অধ্যায় কেটেছে পশ্চিমবঙ্গে।

একজন রাজনীতিক হিসেবে তার মনোজগৎ গড়ে ওঠার পেছনে পশ্চিমবঙ্গের অবদান অনেক। কলকাতা পার্ক সার্কাস এলাকার গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কের নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সড়ক। ওই সড়কেই বাংলাদেশের উপ হাইকমিশন অফিস।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ঐতিহাসিক এক ক্ষেত্র। দেশের বাইরে ওই ভবনেই প্রথম উত্তোলিত হয় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। যেকোন বাংলাদেশিই তার শেকড়ের পরিচয় পেয়ে যান ঠিক ওই জায়গাটিতে দাঁড়ালে। স্বাধীন বাংলা সরকারের অস্থায়ী কার্যালয়, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে শুরু করে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বহু স্মৃতিক্ষেত্র রয়ে গেছে পশ্চিমবঙ্গে। কিছু কিছু কালের গর্ভে অস্তিত্ব হারালেও কোনো কোনো স্মৃতি এখনও জীবন্ত। সেই স্মৃতিক্ষেত্রের সঙ্গে বাংলাদেশ এবার যুক্ত হয়েছে তার সতেজ, উন্নত ও সম্ভাবনাময় অস্তিত্ব নিয়ে।