যে কারণে পবিত্র কোরআন চর্চায় বিশেষ মর্যাদা

মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল কোরআন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং সুপথপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য মহান আল্লাহর এই কালামকে আঁকড়ে ধরার বিকল্প নেই। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআনের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে উভয় জাহানের সফলতা ও সম্মানের অধিকারী হওয়া যায়।

কোরআন অনুসরণে দুনিয়া-আখিরাতে সম্মান : ওমর (রা.) বলেন, ‘তোমাদের নবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা এই কিতাব দ্বারা অনেক জাতিকে মর্যাদায় উন্নীত করেন আর অন্যদের অবনত করেন। অর্থাৎ যারা এই কিতাবের অনুসারী হবে, তারা দুনিয়ায় মর্যাদাবান এবং আখিরাতে জান্নাত লাভ করবে। আর যারা একে অস্বীকার করবে, তারা দুনিয়ায় লাঞ্ছিত এবং পরকালে জাহান্নামে পতিত হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৭৮২)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কতক লোক আল্লাহর পরিজন। সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তারা কারা? তিনি বলেন, কোরআন তিলাওয়াতকারীগণ আল্লাহর পরিজন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৫)

তাই প্রকৃত সফলতা অর্জনের জন্য কোরআন চর্চা করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য আবশ্যকীয়। যারা কোরআন চর্চায় আত্মনিয়োগ করবে, পবিত্র কোরআন-হাদিসে তাদের বিশেষ কিছু ফজিলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে সেগুলো তুলে ধরা হলো—

কিয়ামতের দিন কোরআনের সুপারিশ : দুনিয়ায় যারা কোরআন চর্চা করবে, মহান আল্লাহর হুকুমে কিয়ামতের দিন পবিত্র কোরআন তাদের জন্য সুপারিশ করবে।  রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সিয়াম ও কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম (রোজা) বলবে, হে রব! আমি তাকে দিনে খাবার গ্রহণ করতে ও প্রবৃত্তির তাড়না মেটাতে বাধা দিয়েছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার সুপারিশ কবুল করো। কোরআন বলবে, হে রব! আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ১৯৬৩)

কোরআন পাঠকারীর বিশেষ সম্মাননা : যারা দুনিয়ায় কোরআন শিখবে, সেইমতো আমল করবে, কোরআন হিফজ করবে, কিয়ামতের দিন তাদের বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (সা.) বলেছেন, কোরআন কিয়ামত দিবসে হাজির হয়ে বলবে, হে আমার প্রভু! একে (কোরআনের বাহককে) অলংকার পরিয়ে দিন। তারপর তাকে সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু! তাকে আরো পোশাক দিন। সুতরাং তাকে মর্যাদার পোশাক পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু! তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন। কাজেই তিনি তার ওপর সন্তুষ্ট হবেন। তারপর তাকে বলা হবে, তুমি এক এক আয়াত পাঠ করতে থাকো এবং ওপরের দিকে উঠতে থাকো। এমনিভাবে প্রতি আয়াতের বিনিময়ে তার একটি করে সওয়াব (মর্যাদা) বাড়ানো হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৯১৫)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (সা.) বলেছেন, (কিয়ামতের দিন) কোরআনের বাহককে বলা হবে, পাঠ করতে থাকো এবং ওপরে আরোহণ করতে থাকো এবং দুনিয়ায় যেভাবে ধীরেসুস্থে পাঠ করতে, ঠিক সেইরূপে ধীরেসুস্থে পাঠ করতে থাকো। যে আয়াতে তোমার পাঠ সমাপ্ত হবে সেখানেই তোমার স্থান।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৯১৪)

হাফেজদের ফেরেশতাদের মতো সম্মাননা : পবিত্র কোরআন হিফজ করা, চর্চা করা এতটাই ফজিলতপূর্ণ কাজ যে রাসুল (সা.) কোরআন হিফজকারীদের ফেরেশতাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘কোরআনের হাফেজ পাঠক লিপিকর সম্মানিত ফেরেশতার মতো। খুব কষ্টদায়ক হওয়া সত্ত্বেও যে বারবার কোরআন মাজিদ পাঠ করে, সে দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৯৩৭)

কোরআন শেখা সম্পদ উপার্জনের চেয়েও উত্তম : উকবাহ ইবনে আমির (রা.) বলেন, “একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) এলেন। তখন আমরা সুফফাহ বা মাসজিদের চত্বরে অবস্থান করছিলাম। তিনি বলেন, তোমরা কেউ চাও যে প্রতিদিন ‘বুত্বহান’ বা আকিকের বাজারে যাবে এবং সেখান থেকে কোনো পাপ বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা ছাড়াই বড় কুঁজ বা চুঁটবিশিষ্ট দুটি উটনী নিয়ে আসবে? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা এরূপ চাই। তিনি বলেন, তাহলে কি তোমরা কেউ মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কিতাবের দুটি আয়াত শিক্ষা দেবে না, কিংবা পাঠ করবে না? এটা তার জন্য ওইরূপ দুটি উটনীর চেয়েও উত্তম। এরূপ তিনটি আয়াত তিনটি উটনীর চেয়েও উত্তম এবং চারটি আয়াত চারটি উটনীর চেয়েও উত্তম। আর অনুরূপ সমসংখ্যক উটনীর চেয়ে ততসংখ্যক আয়াত উত্তম। (মুসলিম, হাদিস : ১৭৫৮)

কোরআনের মজলিসে রহমত বর্ষিত হয় : কোরআনের মজলিসে আল্লাহর বিশেষ রহমত বর্ষিত হয়, ফলে যারা কোরআন চর্চায় মগ্ন থাকে, তারা আল্লাহর রহমতে বেষ্টিত থাকে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (সা.) বলেছেন, যখন কোনো সমপ্রদায় আল্লাহর কোনো ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পরে তা নিয়ে আলোচনা করে, তখন তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হয়, তাদের রহমত ঢেকে নেয়, ফেরেশতাগণ তাদের ঘিরে রাখে, এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের কাছে তাদের প্রশংসা করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৫৫)

কোরআনের বাহককে নবীজির অগ্রাধিকার : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) ওহুদ যুদ্ধের শহীদদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন, তাঁদের মাঝে কোরআন সম্পর্কে কে অধিক জ্ঞাত? কোনো একজনের দিকে ইঙ্গিত করা হলে তিনি তাঁকে তাঁর সঙ্গীর পূর্বে কবরে রাখতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১৩৪৮)

তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত পবিত্র কোরআন শিক্ষা করা, বেশি বেশি কোরআন চর্চায় আত্মনিয়োগ করা, বিশেষ করে কোরআনের এই মাসে কোরআন তিলাওয়াতেই বেশি সময় ব্যয় করা। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ