যেসব খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

যেসব খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
বর্তমানে দেশের এমন পরিস্থিতিতে মানুষের শারীরিক সুস্থতা সবচেয়ে জরুরি। তাই শুধুমাত্র করোনাভাইরাস নয়, যেকোন ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য রোগ প্রতিরোধমূলক খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেসব খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় সেগুলো হল –

তরল খাবার : যেকোন তরল ও কুসুম গরম খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তরল খাবার গ্রহণের ফলে দেহে ফ্লুইডের ঘাটতি পূরন হয় এবং দেহে শক্তি বৃদ্ধি পায়। তরল জাতীয় খাবার হল – স্যুপ, ক্লিয়ার স্টক, ফলের রস বা শরবত, ডিটোক্স জ্যুস, যেকোন চা ইত্যাদি।

মিক্সড ভেজিটেবল স্যুপ : মিক্সড ভেজিটেবল স্যুপে সমস্ত সবজি বিশেষ করে গাজর, পেঁপে, বরবটি, ফুলকপি ইত্যাদি থাকার কারনে এটি তরল থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এতে ভিটামিনস, মিনারেলস ও এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা শরীরে এনার্জি দেয়ার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম।

রসুন : রসুনে এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা ভাইরাস প্রতিরোধের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। রসুন হৃৎপিন্ডকে সুস্থ ও সতেজ রাখে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

গ্রিন টি : গ্রিন টি তে ক্যাটেচিন নামক এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা দেহের জন্য উপকারী এবং অন্যান্য চায়ের তুলনায় গ্রীন টি তে ক্যাটেচিনের পরিমান বেশি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে এবং দেহের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে।

আদা চা : আদা মশলার মধ্যে উচ্চমানের এন্টি-অক্সিডেন্ট। আদা চা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এই করোনাকালীন সময়ে আদা চা অনেক উপকারী।

মৌসুমী ফল : যেকোন মৌসুমী ফল দেহের জন্য উপকারী।  যেমন এসময়ে আম, জাম, কাঁঠাল, কাম্রাঙ্গা ইত্যাদি। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের মধ্যে যাদের ব্লাড সুগার বেশি তাদের মিষ্টি ফল এড়িয়ে চলতে হবে।

সবুজ শাক-সবজী : সবুজ শাক-সবজিতে ক্লোরোফিল নামক এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে। এতে ভিটামিন ও মিনারেলস আছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বরবটি, শিম, বেগুন, ধনেপাতা, সবুজ শাক, কঁচু শাক, পুই শাক, পালং শাক ইত্যাদি।

রঙিন শাক-সবজি : রঙিন শাক-সবজি বিশেষ করে লাল শাক-সবজিতে আছে বিটা ক্যারোটিন নামক এন্টি-অক্সিডেন্ট যা ভাইরাস প্রতিরোধ করে। লাল শাক, গাজর, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদিতে ভিটামিন-এ আছে যা চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ৩ বেলা শাক-সবজী রাখাবেন। এতে করে দেহ সুস্থ থাকার পাশাপাশি যেকোন রোগের মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে। তবে যারা সবজী খেতে পছন্দ করেন না তারা স্যুপ, খিচুড়ি, সবজী প্পরোটা খাবেন।

প্রোটিন জাতীয় খাবার : এই করোনাকালীন সময়ে WHO প্রোটিনের পরিমান বাড়িয়ে দিতে বলেছে। প্রানিজ প্রোটিনের মধ্যে ডিম, দুধ, মাছ, মাংস ইত্যাদি বিদ্যমান।

টমেটো : টমেটোর মধ্যে লাইকোপিন নামক এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা হৃৎপিন্ড ভালো রাখে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এতে ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ফোলেট ও ভিটামিন কে আছে যা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম। টমেটো সালাদ, টমেটো স্যুপ, তরকারিতে টমেটো দিয়ে রান্না করে খেতে পারবেন। তবে টমেটো রান্না করলে  ভিটামিন সি তাপে নষ্ট হয়৷

শশা : শশাতে ভিটামিন এ, বি, সি, ডি ও ই রয়েছে যা শরীর সুস্থ রাখে। ওজন নিয়ন্ত্রণে, ক্যান্সার প্রতিরোধে, ভাইরাস প্রতিরোধে শশা খুব উপকারী।

মাশরুম : মাশরুমে প্রোটিন ও এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মাশরুমের স্যুপ, গার্লিক মাশরুম শরীরের জন্য উপকারী।

কাল গোলমরিচ : কাল গোলমরিচে এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা যেকোন ভাইরাস প্রতিরোধের পাশাপাশি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। স্যুপ, মাংসের তরকারি বা বিভিন্ন রান্নায় কাল গোলমরিচের গুড়া ব্যবহার করা যেতে পারে।

হলুদ : হলুদ রান্নায় যেমন স্বাদ বাড়ায় তেমন হলুদে আছে অনেক পুষ্টিগুন। হলুদ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের পাশাপাশি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, লিভার ভাল রাখে। এমনকি জ্বর আসঅলে রোগী যদি দুধের সাথে হলুদের মিশ্রন পান করে তাহলে এটি এন্টিবায়োটিক হিসেবেও কাজ করে।

মধু : মধুতে এন্টি-অক্সিডেন্ট ও মিনারেলস বিশেষ করে জিংক আছে যা মুখের রুচি বাড়ানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।। যাদের সর্দি, কাশি, ঠান্ডা, জ্বর, খুশখুশ, গলা ব্যাথা ও টনসিল আছে তাদের জন্য মধু খুবই উপকারী।

পেয়াজ : পেয়াজে এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি হৃৎপিন্ডের জন্য উপকারী।

ওমেগা ৩ ও ওমেগা৬ ফ্যাটি এসিড : ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড জাতীয় খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি হার্টএট্যাকের ঝুঁকি কমায়। যেমন – সামুদ্রিক মাছ, কাঠবাদাম, ডিম, আখ্রোট, অলিভ ওয়েল, মাছের তেল ইত্যাদিতে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড আছে।

ভিটামিন-ডি : ভিটামিন-ডি যুক্ত খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁত মজবুত করে। ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার হল দুধ, পনির, দই, মাখন, সামুদ্রিক মাছ, কাঠবাদাম, পালং শাক, ডিম, মুরগীর মাংসের হাড়, নিহারি, শুটকি মাছ ইত্যাদি৷

ভিটামিন-কে : ভিটামিন-কে জাতীয় খাবার করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম। আমেরিকায় এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে তাদের বেশির ভাগ মানুষের দেহে ভিটামিন-কে এর অভাব ছিল। সবুজ শাক-সবজি,  টমেটো, শশা, ফুলকপি, ধনেপাতা, ব্রোকলি, পাতাকপি, শক্ত পনির ইত্যাদিতে ভিটামিন – কে আছে।

টক জাতীয় ফল : টকজাতীয় ফলের মধ্যে এসকরবিক এসিডনামক এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যেমন – আমলকীতে ভিটামিন-সি এর পরিমান ১০০%। লেবু, টমেটো, শশা, পেয়ারা, কামরাঙ্গা, কাচা মরিচ, ক্যাপ্সিকাম ইত্যাদিতে ভিটামিন সি আছে।

প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করলে শরীরের নানা ধরনের ক্ষতিসাধন হয়। এমন বেশ কিছু খাবার আছে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং এসময়ে এসকল খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন –

১. কার্বোনেটেড বেভারেজ
২. চিনি জাতীয় খাবার
৩. অতিরিক্ত লবন
৪. তৈলাক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার
৫. দুধ চা

লেখক : ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান, ফরাজি হাসপাতাল লিমিটেড

সূত্র কালের কন্ঠ

স/আ.মি