যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হবে-রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশ ও জাতির জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করার জন্য সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (৩ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী সেনানিবাসে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড (জাতীয় পতাকা) প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জাতীয় পতাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যে কোনো ইউনিটের জন্য একটি বিরল সম্মান ও গৌরবের বিষয়। কর্মদক্ষতা, কঠোর অনুশীলন এবং কর্তব্য নিষ্ঠার স্বীকৃতি হিসেবে যে পতাকা আজ আপনারা পেলেন তার মর্যাদা রক্ষার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে আপনারা সব সময় প্রস্তুত থাকবেন। পতাকা পাওয়ায় আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই।

বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। সালাম জানান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। এছাড়া জাতির প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর যে সকল সদস্য বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ স্বীকার করে কাজ করছেন তাদেরকেও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা সত্বেও একটি শক্তিশালী স্বশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার নির্দেশেই ১৯৭২ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমি। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে একটি শান্তিরক্ষা নীতি প্রনয়ণ করেন। তার সুদূরপ্রসারি এ প্রতিরক্ষা নির্দেশনার আলোকেই সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ ও দেশের বাইরে একটি অত্যন্ত সম্মানজনক অবস্থানে উন্নীত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পদাতিক বাহিনীর গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পাশাপাশি পদাতিক বাহিনীর দ্বিতীয় রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন আমরাই সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেছি। ১৯৯৯ সালে আমি বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট গঠনের ব্যাপারে ব্যাপারে নীতিগত অনুমোদন প্রদান করি। ২০০১ সালের ২১শে এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের পতাকা উত্তোলন করি। ২০১১ সালে আমি এ রেজিমেন্টকে মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় পতাকা প্রদান করি। বর্তমানে এই রেজিমেন্টে দুটি প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নসহ ৪৩টি ইউনিট রয়েছে।

একটি আধুনিক ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে তার সরকার বদ্ধপরিকর জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক বাহিনী গড়ে তুলতে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ প্রনয়ণ করে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর আওতায় সেনাবাহিনীর নতুন নতুন পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেড, ইউনিট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমরা তিনটি নতুন ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রথমবারের মতো প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। দেশের আকাশ প্রতিরক্ষাকে আরও সুসংহত করতে সংযোজিত হয়েছে এমএলআরএস ও মিসাইল রেজিমেন্ট। আধুনিক বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, হেলিকপ্টার, আর্টিলারি গান এবং মডার্ণ ইনফ্যান্ট্রি গেজেট সংযোজন করে সেনাবাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতাকে বৃদ্ধি করেছি।

দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী তার মূল কার্যক্রমের পাশাপাশি সব সময়ই জাতির গঠনমূলক কর্মকাণ্ডের নিজেদের নিয়োজিত করেছে। বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ তদারকি, যোগাযোগের জন্য কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প, ফেনির মহিপাল ফ্লাইওভার নির্মাণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বভার আপনাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সেনাসদস্যরা আত্মত্যাগ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনছে সম্মান ও মর্যাদা, যা বহিঃর্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে।

অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ, রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান, রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী-৩ আসনে র সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমান, রাজশাহী জেলা প্রশাসক এস এম আব্দুল কাদের, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেন, রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বজলার রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার রেনী।

এছাড়া ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড (জাতীয় পতাকা) প্রদান অনুষ্ঠানে সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে রোববার (৩ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে রাজশাহী পৌঁছান। বেলা পৌনে ১২টায় তিনি রাজশাহী সেনানিবাসের শহীদ কর্নেল আনিস প্যারেড গ্রাউন্ডে আসেন। পরে প্যারেড পরিদর্শন করেন। এরপর সেনাপ্রধানকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক এক করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭, ৮, ৯ এবং ১০ বীর’র ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড (জাতীয় পতাকা) প্রদান করেন।

স/আর