যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে মরিয়া ‘এসএমএস’ নেতারা

যুবলীগের দুর্দণ্ড প্রতাপশালী চেয়ারম্যান ছিলেন ওমর ফারুক চৌধুরী। ক্যাসিনোকাণ্ডে সংগঠন থেকে বাদ পড়া এই নেতা দায়িত্বে থাকাকালে তাঁর কথাই ছিল সংগঠনের গঠনতন্ত্র। অর্থের বিনিময়ে যখন যাকে ইচ্ছা কেন্দ্রীয় কমিটির পদ দিতেন। আর পদপ্রাপ্তির খবরটি সংশ্লিষ্ট নেতাকে তিনি জানিয়ে দিতেন মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে।

সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচিত নেতারা টাকার বিনিময়ে পদপ্রাপ্তদের ডাকতেন এসএমএস কমিটির নেতা বলে। শুদ্ধি অভিযানে ওমর ফারুক বাদ পড়ার পর এসএমএস কমিটির ওই সব নেতা এখন যুবলীগের কেন্দ্রীয় পদ পেতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। যুবলীগের একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে এমন তথ্য জানিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেন। সেই সময়ের মধ্যে কমিটি জমা দিতে পারছে না যুবলীগ। গত বছরের নভেম্বরে সংগঠনটির সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসের পর ১৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। যুবলীগকে সন্ত্রাস ও অপকর্মের ধারা থেকে ফেরাতে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশকে যুবলীগ চেয়ারম্যান করা হয়। সাংগঠনিক রাজনীতিতে যুক্ত না থাকা এবং একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পরশের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক করা হয় তৎকালীন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে। এরপর থেকে গত ১০ মাসেও সংগঠনটির বাকি ১৪৯ পদ পূরণ হয়নি।

জানা যায়, যুবলীগের কমিটির ১৪৯ পদ পূরণের জন্য আগ্রহী নেতাদের জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা দিতে বলা হয়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রায় দেড় হাজার সিভি জমা পড়ে। এর মধ্যে বিগত কমিটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানের নানা অপকর্মের সঙ্গী এসএমএস কমিটির নেতারাও আছেন। পদ পেতে তাঁদের অনেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়মিত সময় দিচ্ছেন।

একাধিক সূত্র জানায়, এসএমএস কমিটির নেতা হিসেবে পরিচিত রেকায়েত আলী খান নিয়ন, মুক্তাদির রহমান শিমুল, শ্যামল কুমার রায়, রওশান জামির রানা, শামসুল আরেফিন নাঈম, নাজমুল হোসেন জুয়েলসহ অন্তত ৩৫-৪০ জন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পদ পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। নানা অভিযোগে বিতর্কিত যুবলীগের বিগত কমিটির সহসম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন ও তারিক হাসান লিও, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান হোসেন, আসাদুল হক আসাদ, উপ-অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম দুর্জয়ও একই তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জন্মদিনে ফেসবুকে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের শুভেচ্ছা জানানোর একটি পোস্টার ভাইরাল হয়। পোস্টারটিতে সোহরাওয়ার্দীর বদলে শেরেবাংলার ছবি ব্যবহার করা হয়। জানা যায়, ভুল ছবি দিয়ে পোস্টারটি তৈরি করেছিলেন মোক্তার চৌধুরী কামাল। তিনিও যুবলীগের কেন্দ্রীয় পদ পেতে জোরালো চেষ্টা চালাচ্ছেন।

যুবলীগের সূত্রগুলো জানায়, এবারের কমিটি গঠনে বিতর্কিতদের না রাখার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে পদপ্রত্যাশীদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে বেশ কিছু নতুন মুখ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত থাকা পরিবার থেকেও কয়েকজন যুক্ত হতে পারেন।

মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ‘কমিটিতে যেন বিতর্কিত কেউ স্থান না পায় সে জন্য আমরা ব্যাপক যাচাই-বাছাই করছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিটি গঠনে ঠিক কত দিন লাগবে তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। কিছুদিনের মধ্যেই আমরা কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে পারব।’

যুবলীগের বিগত কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নেতারা অনেকেই বলছেন যে বিতর্কিতদের কমিটিতে রাখা হবে না। কিন্তু দেখা যায় অপকর্মে জড়িতরা এমনই চতুর যে নানাভাবে নেতাদের প্রভাবিত করে কমিটিতে ঢুকে যায়। এটি বন্ধ করতে না পারলে সংগঠনের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা সফল হবে না।’ সূত্র: কালের কণ্ঠ