যানজট-জলজটে চরম ভোগান্তি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

যানজট-জলজটে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে রাজধানীবাসী। গত রোববারের পর সোমবারও ঢাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে মূল সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। কোনো কোনো সড়কে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে যায়। দুই-তিন ঘন্টা পর কিছু সড়কের পানি সরে গেলেও অনেক সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়া বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে বেশিরভাগ সড়কেই সৃষ্টি হয় অসহনীয় যানজটের।

সোমবার সকাল ১১ টার পর থেকেই রাজধানীর আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। মধ্য দুপুরে দিনের আলোর পরিবর্তে ছেয়ে যায় নিকোষ কালো অন্ধকারে। এরপর শুরু হয় কানফাঠা শব্দের বজ্রপাতের পাশাপাশি ভারী বৃষ্টি। প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে এ বৃষ্টিপাত। এতে মূল সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই পানি জমে যায়। অনেক সড়কে সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার খোঁড়াখুড়ি চলার কারণে সৃষ্টি হয় কাদাপানির। এছাড়া সড়কগুলো সরু হয়ে যাওয়ার কারণে জনসাধারণের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

কমলাপুর থেকে শাহজাহানপুরগামী সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। বিকেল ৫টার সময়ও এ সড়কেও কয়েকটি স্থানে হাটু পানি জমে থাকতে দেখা যায়। ওই সড়কে একদিকে রাস্তা কেটে রাখা হয়েছে। অন্যপ্রান্তে সিমেন্টের বিশাল পাইপের সারি। এতে ওই সড়কে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। পানির মধ্য দিয়ে চলতে গিয়ে কয়েকটি সিএনজি ও প্রাইভেটকার অচল হয়ে যেতে দেখা যায়।

আরামবাগের সিএনজি পাম্প স্টেশন এলাকায় হাটু পানি জমে যায়। এ পানির মধ্য দিয়ে কোন গাড়ি গেলেই পানিতে নদীর ঢেউ জেগে ওঠে। বাসাবো আহমদবাগ এলাকার অলিগলিতে পানি জমে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই সড়কগুলোতে হাটু পানি জমে ছিল বলে এলাকার বাসিন্দারা জানান।
হাতিরঝিল সংলগ্ন নুর নগর জামে মসজিদের সামনের সড়কটি বৃষ্টি হলেই হাটু পানি জমে যাচ্ছে। এতে বিয়াম অডিটোরিয়াম থেকে হাতিরঝিল পর্যন্ত সড়ক দিয়ে চলাচলের কোন উপায় থাকে না। মসজিদ কমিটির সদস্য মো: রওশন আলী নয়াদিগন্তকে জানান, এ সড়কে কয়েকটি বাসা, বিয়াম স্কুল-কলেজ ও অডিটোরিয়াম, মসজিদ ও একটি মাদ্রাসা রয়েছে। বিয়াম অডিটোরিয়ামে মন্ত্রী-এমপিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ লোকজন চলাফেরা করেন। হাতিরঝিলের পাশেই সড়কটি। কিন্তু এ সড়কে তেমন নজর দেয়া হচ্ছে না। হাতিরঝিল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একটু সুনজর দিলেই এলাকাবাসীকে আর দুর্ভোগ পোহাতে হয় না।

সোমবারের বৃষ্টিতে বরাবরের মতোই মিরপুরবাসীকে অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল পথ নির্মাণ কাজ চলার কারণে সংশ্লিষ্ট সবগুলো সড়কেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এর পাশাপাশি সড়ক সরু হয়ে যাওয়ার কারণে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। গণপরিবহনে চলাচলকারীদের মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও আসতেই তিন-চার ঘন্টা লেগে যায়। বৃষ্টি হলেই কালশী সড়কে যেন পদ্মার ঢেউ উঠতে থাকে। সোমবার কালশী সড়কের আশেপাশের ফুটপাতও পানিতে তলিয়ে যায়। পথচারীদের চলাচলও কষ্টকর হয়ে ওঠে। এছাড়া সম্প্রতি রাস্তা কিছুটা উঁচু করার পর এখন আশেপাশের দোকানেও পানি ঢুকে যাচ্ছে। কালশী খাল দখল হয়ে যাওয়ার কারণে এখন পানি নিষ্কাষনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
শাকিল আহমেদ নামে এক বাসযাত্রী বলেন, দুপুর ১২ টায় মিরপুর-১০ থেকে ফার্মগেট আসার জন্য বাসে উঠি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্র পর্যন্ত আসতেই সাড়ে তিন ঘন্টা লেগে গেছে। শেওড়াপড়া, কাজীপাড়া সড়কে পানি আর পানি। রাস্তা থেকে পানি যাওয়ার কোন পথ নেই। গাড়ি চলাচল করলেই পানিতে প্রচণ্ড ঢেউ সৃষ্টি হচ্ছে।

এছাড়া ধানমন্ডির মিরপুর রোডের ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সহ আশোপাশের অনেক স্থানে সড়কে পানি জমে যায়। খিলগাঁও, মালিবাগ রেলগেট, রাজারবাগ, গ্রীনরোড, খিলক্ষেতসহ বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়।
কালবৈশাখীর ঝড়ে রাজধানীর বিজয়নগরে মাঝ সড়কে বিশাল আকৃতির একটি গাছ উপড়ে পড়ে। এতে বিজয়নগর থেকে পুরনো পল্টনমুখী সড়কের এক পাশে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় পল্টনমুখী যানবাহনগুলো আটকে পড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান বলেন, সকালে প্রচণ্ড ঝড় বয়ে যায়। আমরা দোকানের সাটার বন্ধ করে দিই। পরে ঝড় থেমে গেলে বাইরে এসে দেখি রাস্তার পাশে থাকা বিশাল আকৃতির এই গাছটি রাস্তার উপর পড়ে আছে। পরে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তারা এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে।

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম আসলেই ঢাকার পথঘাঠ পানিতে তলিয়ে যায়। সৃষ্টি হয় জলজটের। প্রতি বছরই মন্ত্রী-মেয়ররা নানা প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না রাজধানীবাসীর।