যশোরে ‘ভেজাল’ মদপানে চার দিনে ১৭ জনের মৃত্যু

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

যশোরে ‘ভেজাল’ মদপানে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় ‘ভেজাল’ মদপানে গত চার দিনে ১৭ জনের মৃত্যু হলো।

সবশেষ নিহত দুজন হলেন- শহরতলির আরবপুর গোরাপাড়ার ওই পাড়ার মৃত কেষ্টপদ দাসের ছেলেপোল্লাদ (৪৫)। একই এলাকার মৃত অজিত দাসের ছেলে প্রশান্ত দাস (৩৮)।

স্থানীয়রা জানান, গোরাপাড়ার মৃত দুজন সোমবার দুপুরে এক সঙ্গে বাড়িতে বসে মদ পান করে। রাতে প্রশান্ত দাসের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার বিকেলে পোল্লাদ মারা যায়।

যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ তাসমীম আলম দুজনের মধ্যে প্রশান্ত দাসের মদপানে মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অন্যদিকে যশোর আড়াইশ’ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. রুবেল হাওলাদার মদপানে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

করোনাভাইরাসের মধ্যে যেখানে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, সেখানে বিষাক্ত মদপানে যশোরে গত চার দিনে ১৭ জনের মৃত্যু হলো। এই ঘটনায় তোলপাড় চলছে প্রশাসনে।

যশোরে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির মদ সরবরাহ বন্ধ থানায় এক শ্রেণির মাদক কারবারি গোপনে রেক্টিফাইড স্পিরিট ও বাজারে বিক্রির জন্য সরবরাহকৃত বিভিন্ন কোম্পানির হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে চোলাইমদ তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছে। ফলে এই মদ পান করে অসুস্থ হয়ে ১৭ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে।

চোলাইমদ বিক্রি ও তা পান করার ফলে মৃত্যুর ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় পাঁচটি মামলা হয়েছে।

এর আগে রবিবার সকালে মারা গেছেন যশোর শহরের চোরমারা দিঘিরপাড়ের কোরবান গাজীর ছেলে ট্রাক চালক ওজিয়ার রহমান (৪২) এবং বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকার দামোদর শাহানির ছেলে বিকাশ শাহানি (৩৮)।

শনিবার বিকেলে চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যান উপজেলার ভাস্কর্যের মোড়ের ট্রাক চালক খলিলুর রহমান এবং শহরের সরদারপাড়া বুনো পাড়ার রাঙ্গি। রাঙ্গি মারা যান শনিবার রাত ৯টার দিকে। দুজনেই অ্যালকোহল পানে বিষক্রিয়ায় মারা যান বলে চিকিৎসকরা জানান।

এছাড়া আগে আরও যারা মারা গেছেন তারা হলেন- যশোর সদর উপজেলার শেখহাটি কালিতলার আরশাদ আলীর ছেলে শাহিন হোসেন (৩৫), চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ক্ষিতিবদিয়া গ্রামের শাহজাহান সরদারের ছেলে ইনামুল হোসেন (৩৯), ঝিকরগাছা উপজেলার কাটাখাল এলাকার মৃত আবু তালেবের ছেলে সাহেব আলী (৬৫), মণিরামপুর উপজেলার মদনপুর গ্রামের মনা হালদারের ছেলে তপন হালদার (৪০), যশোর শহরের গরিবশাহ মাজার এলাকার শরিফ উদ্দিন ওরফে মনি বাবু (৪৫), ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের সাবু (৪৬), যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার নান্টু মিয়া (৩৫), সদর উপজেলার ঝুমঝুমপুর মান্দারতলা এলাকার ফজলুর রহমান চুক্কি (৫০), চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলার বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান (৪৫), মণিরামপুর এলাকার মোক্তার ও মমিন নামে অপর দুজন।

যশোরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, কেরু অ্যান্ড কোম্পানির কিছু কর্মচারীর যোগসাজশে অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছিল চোলাই মদ।

তিনি বলেন, আমরা অবৈধ মদের দোকানগুলো সিল করে দিয়েছি। মহামারীর মধ্যে কীভাবে চলছিল এসব দোকান সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন জানান, আমরা মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।

এদিকে যশোর জেলার বিভিন্ন স্থানে ভেজাল অথবা বিষাক্ত মদপানে একের পর এক মাদকসেবীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

জেলা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মো. বাহাউদ্দিন জানান, গত ২৭ এপ্রিল ইন্সপেক্টর মো. মনিরুজ্জামান ও ইন্সপেক্টর বাপন সেনকে নিয়ে গঠিত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

সূত্র: দেশ রুপান্তর