মৌসুমি কসাইয়ের ছড়াছড়ি, ১৫ শতাংশ চামড়া নষ্টের আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, মাছ বিক্রেতা, সবজি বিক্রেতা, হোটেলের বয়, কলকারখানার শ্রমিকসহ তাদের একটি বড় অংশ কোরবানির দিন কসাইয়ের কাজ করেন। গরু বানিয়ে দিয়ে কিছু অর্থ উপার্জন ও মাংস সংগ্রহ করাই তাদের লক্ষ্য। এদের অনেকেই জানিয়েছেন, তাদের গরু কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই পরিবারের জন্য ঈদের দিন কসাইয়ের কাজ করে কিছু মাংস সংগ্রহ করে বাড়ি নিয়ে যাওয়াই উদ্দেশ্য তাদের।

এ ব্যাপারে শেওড়াপাড়ার চা বিক্রেতা মো. আরিফ  বলেন, প্রতিবছরই কোরবানির ঈদে গরু বানাই। আমরা চার থেকে পাঁচজন মিলে সারাদিনে ছয় থেকে সাতটি গরু বানিয়ে দেই। এতে কিছু অর্থ উপার্জন হয়। একইসঙ্গে যাদের গরু বানিয়ে দেই তারা খুশি হয়ে আমাদের মাংস দেন। পরিবারের জন্য সেই মাংস নিয়ে ঈদের দিন সন্ধ্যায় বাড়ি যাই। তবে এবারের ঈদে কাজ কম, অনেকেই কোরবানি দিচ্ছেন না, তিনটি গরু বানানোর অর্ডার পেয়েছি, দামও তেমন বাড়েনি।

প্রতিবছর কোরবানির ঈদের দুদিন আগে শহরে চলে আসি। আজ বহু বছর ধরেই কয়েকজন মিলে কয়টা গরু বানাই, এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি বলে জানালেন ধামরাই থেকে আসা দিনমজুর আবু মিয়া।

তিনি বলেন, তিনটি দেড় লাখ টাকার ওপরের গরু ১২ হাজার টাকা করে ও দুটি গরু এক লাখ টাকার নিচে ৬ হাজার টাকা করে দর-দাম হয়েছে। এছাড়া গরু বানানোর পর মাংস তো পাই।

মৌসুমি কসাইয়ের কারণে আমরা গরু বানানোর ন্যায্য দাম পাচ্ছি না বলে জানালেন মিরপুরের পেশাদার কসাই নাজমুল হোসেন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গরু বানানোর কৌশল রয়েছে, আমাদের দ্বারা মাংস নষ্ট হয় না। শুধু তাই নয়, চামড়াটাও নিখুঁত থাকে। চামড়া কেটে গেলে সেটার দাম অর্ধেকে নেমে আসে, ব্যবসায়ীরাও কিনতে চায় না, এতে গরিবের হক নষ্ট হয়।

পরিবারের সবাই মিলে এবং দুয়েকজন মৌসুমি কসাই সঙ্গে নিয়ে প্রতিবছরই আমরা কোরবানি সম্পন্ন করি বলে জানালেন তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা ওলিউর রহমান।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কোরবানি এলে পেশাদার কসাইয়ের ডিমান্ড বেড়ে যায়। তাছাড়া যে হারে পশু কোরবানি হয়, এত পেশাদার কসাই পাওয়া সম্ভব নয়।

কোরবানির দিন পেশাদার কসাই একটি গরু কাটতে হাজার প্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা করে নেয়। সেখানে মৌসুমি কসাইকে হাজার প্রতি ১০০ টাকা দিলে তারা খুশি হয়ে কাজ করেন।

জানা যায়, পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে এ বছর ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি পশু কোরবানি হবে, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ১১ হাজার বেশি। এ হিসেবে ঈদের সময় এত বিপুল সংখ্যক পশু জবাই হওয়ায় পেশাদার কসাইদের দিয়ে পশুর চামড়া ছাড়ানো সম্ভব হয় না। ফলে এ সময় বেড়ে যায় মৌসুমি কসাইদের চাহিদা। উপায় না পেয়ে মৌসুমি কসাইদের ওপর গরু বানানো নির্ভর করতে হয়।

তবে অদক্ষ কসাইয়ের কারণে প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে দক্ষ কসাই দিয়ে গরু বানানো উচিত। এতে বিপুল পরিমাণ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে চামড়া শিল্প বলে মনে করেন তারা।

এ ব্যাপারে মাদার হাই অ্যান্ড স্কিনের ইলিয়াস বলেন, অদক্ষ লোক দিয়ে পশু বানালে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়। একজন দক্ষ কসাই চামড়া নষ্ট করে না। মৌসুমি কসাই নিয়ে পশু বানালে অনেক সময় একটি চামড়ায় চার পাঁচ জায়গার পোচ লেগে যায়, সেক্ষেত্রে ওই চামড়াটা আর কোনো কাজে আসে না। আবার অনেক সময় মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী না দেখে চামড়াটা কিনে ফেলেন। এতে তিনি ক্ষতির মুখে পড়েন। এটা শুধু আনাড়ি লোক দিয়ে কাজ করালে এমনটি হয়। তাই সবার কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে কোরবানির পর পশুর চামড়াটা যতটুকু সম্ভব দেখে-শুনে ধীরে-সুস্থে আলাদা করা। এতে পশুর চামড়ার ক্ষতির পরিমাণটা কমবে বলে মনে করেন তিনি।