মেসির সমালোচনা, নেইমার-রোনালদোর প্রশংসায় ম্যারাডোনা

সিল্কসিটিনিউজ ক্রীড়া ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত শতবর্ষী কোপা আমেরিকায় স্বদেশী তারকার সমালোচনা করেছিলেন। ফুটবলার হিসেবে লিওনেল মেসির ব্যক্তিত্ব নিয়ে আবারো প্রশ্ন তুললেন দিয়েগো ম্যারাডোনা! এমনকি, মেসি ও ক্রিস্টিয়ানোর মধ্যে কে সেরা এ অনন্ত বিতর্কে পর্তুগিজ তারকাকে ছাপিয়ে নিজের উত্তরসূরিকে বেছে নেননি। অবশ্য এমন প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় চুপ থেকে বরং ভিন্ন গুণাবলীর জন্য দু’জনেরই প্রশংসা করেছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর।

 

গত আট বছর ধরে বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের খেতাব ফিফা ব্যালন ডি’অর মেসি ও রোনালদোর দখলে। পাঁচবারই ওঠে বার্সেলোনার প্রাণভোমরার হাতে। এ দু’জনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এই দশক জুড়েই ফুটবল বিশ্বে আধিপত্য করছে।

 

‘পরবর্তী ম্যারাডোনা’ উপমার অভিশপ্ত ছায়া থেকে বেরিয়ে নিজেকে কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মেসি। বার্সার জার্সিতে ১২ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে আটটি লা লিগা ও চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে এখনো বড় কোনো শিরোপা না পাওয়ার হতাশায় পুড়ছেন বিশ্ব ফুটবলের এ ক্ষুদে জাদুকর।

আলবিসেলেস্তেদের হয়ে চারটি ফাইনালেই হারের যন্ত্রণার শিকার হন মেসি। সবশেষ ২০১৪ বিশ্বকাপের পর টানা দুই বছরের দু’টি কোপা আমেরিকা ট্রফির জেতার কাছে এসেও না পাওয়ার বেদনায় আন্তর্জাতিক ফুটবল খেকেই অবসর নিয়ে নিয়েছিলেন। যদিও বেশিদিন দূরে থাকতে পারেননি। সিদ্ধান্ত পাল্টে ফিরে আসেন জাতীয় দলে।

 

অন্যদিকে, ম্যানইউর হয়ে চারবার ও রিয়ালকে তিনবার চ্যাম্পিয়নস লিগ এনে দিয়েছেন রোনালদো। চলতি বছর তার নেতৃত্বে পর্তুগালের ইউরো জয়ে এবারের ব্যালন ডি’অর পাওয়ার দৌড়ে মেসির চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে সিআর সেভেন। তবে দু’জনের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়ার তেমন কিছুই খুঁজে পাচ্ছেন না ম্যারাডোনা।

 

স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক ‘মার্কা’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ম্যারাডোনা বলেন, ‘বাকিদের চেয়ে এ দু’জন সেরা। মেসি রোনালদোর চেয়ে ভালো নয় এবং ভাইস ভার্সা (বিপরীতভাবে, অর্থাৎ রোনালদোও মেসির চেয়ে ভালো নয়)। রোনালদো সব সময়ই ফুটবলের প্রতি অসাধারণ ‍আবেগ প্রদর্শন করছে। সত্যি বলতে, এটা পুনরাবৃত্তি করাটা আমাকে বিরক্ত করছে যে, একজন ফেনোমেনন হতে মেসির বিশ্বকাপ জিততে হবে না।’

ফুটবলে মেসির ব্যক্তিত্ব নিয়ে বেশ সমালোচনাই ঝরে ম্যারাডোনার কণ্ঠে, ‘যদি তোমার ব্যক্তিত্ব না থাকে এবং জাতীয় সংগীত গাওয়া থেকে বিরত থাকো তবে তোমার একা থাকা উচিত। এই ছেলেটার (মেসি) গ্রীষ্মের সময় ন্যাশনাল টিম থেকে অবসর নেওয়ার সব ধরনের অধিকার ছিল। পরে সে আবারো ফিরে এসেছে এবং সমালোচিত হয়েছে।’

 

এদিকে, অলিম্পিক হিরো নেইমারকে প্রশংসার জোয়ারে ভাসিয়েছেন ম্যারাডোনা। তার চোখে, খুব শিগগিরই নিজেকে মেসি-রোনালদোর লেভেলে নিয়ে যেতে পারবেন ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন, ‘আমি জানি রিভালদো, রোনালদিনহো ও কাকার পর নেইমারের আবির্ভাবের কথা বলবে ব্রাজিল যে নিজের খেলায় সবাইকে মুগ্ধ করছে। আমি তার খেলা পছন্দ করি কারণ তাকে ২০০ বার কিক করা হলেও সে সবসময়ই প্রতিপক্ষের দিকে ড্রিবলিং অব্যাহত রাখবে।’

 

ব্যালন ডি’অর নিয়েও কথা বলেন ম্যারাডোনা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্যে সেরার আসনে বসতে রোনালদোই ফেভারিট। সে যাই হোক, ৮৬’র বিশ্বকাপের নায়ক এই অ্যাওয়ার্ডটি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমার কাছে, ব্যালন ডি’অর মোটেও যথার্থ নয়। যেমন ২০১৪ সালে মেসি ও রোনালদোর সঙ্গে ম্যানুয়েল নয়্যার ফাইনালিস্ট তালিকায় ছিল। জার্মান গোলরক্ষকের তা জেতা উচিৎ ছিল, কারণ সে মাত্রই বিশ্বকাপ জিতেছিল।’

মেসি ও রোনালদোর অাধিপত্যের পর এ সিংহাসনে বসার সম্ভাব্য যোগ্য দাবিদার নেইমার। এ ব্যাপারটিতে ম্যারাডোনার ভাষ্য, ‘রোনালদো ও মেসি আর দু’টি ঘোড়ার দৌড়ে সীমাবদ্ধ নেই, এখানে চূড়ান্ত জয়ের (ব্যালন ডি’অর) মিশনে তিনজন দৌড়াচ্ছে।’

সূত্র: বাংলা নিউজ