মৃত মায়ের পাশে দু’দিন ধরে অভুক্ত শিশু, ছুঁয়ে দেখেনি কেউ

করোনাভাইরাসের আতঙ্কে মৃত মায়ের পাশেই দিন দুয়েক ধরে অভুক্ত হয়ে পড়ে থাকল দেড় বছরের শিশু। ভারতের মহারাষ্ট্রের পুণের এই ঘটনায় মহামারির ভয়াল ছবি আবারো ফুটে উঠল।

অভিযোগ উঠেছে, ওই নারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সন্দেহ করেই সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে তার সাহায্যের জন্য ছুটে আসেনি কোনো প্রতিবেশী।

পুলিশ বলছে, মৃত নারী পুণের পিমরি চিঞ্চবাড় এলাকার বাসিন্দা। সোমবার তার ঘর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে দেখে শেষ পর্যন্ত প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেয়।

পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে ওই নারী মরদেহ উদ্ধার করে। ঘরের নারীর দেহের পাশে শিশু ছিল। তার স্বামী উত্তরপ্রদেশে কাজের খোঁজে গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের ধারণা, গত শনিবার ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সঠিক সময় জানা যাবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

পাশাপাশি, ওই নারী আদৌ করোনা আক্রান্ত ছিলেন কি না, সেটাও জানা যাবে। তবে করোনা সংক্রমণের ভয়ে প্রতিবেশীদের কেউ ওই শিশুটিকে কোলে নিতে চায়নি। যদিও নারীর দেহ নিয়ে যাওয়ার সময় শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়েছেন নারী কন্সটেবল সুশীলা গোভলে এবং রেখা ওয়াজে।

সুশীলা বলেন, আমারও তো দু’টো বাচ্চা রয়েছে। একজন ৮ আর অন্যজন ৬ বছরের। বাচ্চাটাকে দেখে মনে হলো যেন আমার নিজের। বাচ্চাটার এত খিদে পেয়েছিল যে চটপট দুধ খেয়ে নিয়েছে।

সুশীলার সহকর্মী রেখা জানান, নারীর করোনায় মৃ্ত্যুর সন্দেহ করা হলেও আশ্চর্যজনকভাবে তার বাচ্চাটি প্রায় সুস্থই রয়েছে। তবে সামান্য জ্বর থাকায় সরকারি হাসপাতালে বাচ্চাটির করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে।

রেখা আরো বলেন, বাচ্চাটিকে ডাক্তার দেখানোর সময় ওর একটু জ্বর ছিল। ডাক্তার ওকে ভাল করে খাওয়াতে বলেছেন। আমরা পানি আর বিস্কুট খাওয়ানোর পর বাচ্চাটি ভালই রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে করোনা টেস্টও করিয়েছি।

পুণে পুলিশের অপরাধ দমন শাখার ইন্সপেক্টর প্রকাশ যাদব জানান, বাচ্চাটির রিপোর্টে করোনা ধরা পড়েনি। আপাতত তাকে সরকারি ক্রেশে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

এদিকে ভারতে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে এক কোটি ৯১ লাখ ৫৭ হাজার ৯৪ জন এবং মারা গেছে দুই লাখ ১১ হাজার ৮৩৫ জন।

দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে চার লাখ দুই হাজার ১১০ জন এবং মারা গেছে তিন হাজার ৫২২ জন। এর আগের দিন ২৯ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তিন লাখ ৮৬ হাজার ৮৮৮ জন এবং মারা গেছে তিন হাজার ৫০১ জন।

দেশটিতে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছে এক কোটি ৫৬ লাখ ৭৩ হাজার তিন জন এবং বর্তমানে আক্রান্ত অবস্থায় রয়েছে ৩২ লাখ ৭২ হাজার ২৫৬ জন।

সে দেশে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হওয়ার হার ৯৯ শতাংশ এবং মারা যাওয়ার হার এক শতাংশ। দেশটিতে বর্তমানে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় রয়েছে আট হাজার ৯৪৪ জন এবং বাকিদের অবস্থা স্থিতিশীল।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ