মৃত্যু গোপন করছে বিভিন্ন দেশ, বিশ্বে করোনায় প্রাণহানি সাড়ে ৪ লাখ

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে সাড়ে ৪ লাখের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তবে এ পরিসংখ্যান সঠিক নয় বলছে বিবিসির একটি গবেষণা। এতে বলা হয়, বিভিন্ন দেশ মৃতের সংখ্যা গোপন করছে। আরও অন্তত ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ মারা গেছেন কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে, যাদের নাম মৃতের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।

যুক্তরাজ্যে অন্য বছরের তুলনায় একই সময়ে ৪৩ শতাংশ বেশি মানুষ মারা গেছেন। ৬৪ হাজার ৫০০ মানুষ বেশি মারা গেছেন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে। দেশটিতে সরকারি হিসাবে করোনায় মৃত্যু ৪২ হাজারের কিছু বেশি।

স্পেনে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ মানুষ বেশি মারা গেছেন। প্রায় ৪২ হাজার ৯০০ মানুষ বেশি মারা গেছেন দেশটিতে। এ পরিসংখ্যান ২ মার্চ থেকে ১৭ মে পর্যন্ত। একই সময়ে করোনা সংক্রান্ত রোগে আনুষ্ঠানিক মৃতের সংখ্যা ২৭ হাজার ৭০৯ জন।

বেলজিয়ামে ৩৭ শতাংশ বেশি মানুষ মারা গেছেন। স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৮১০০ জন বেশি মানুষ মারা গেছেন এ করোনার সময়ে। আনুষ্ঠানিকভাবে ৯ হাজার ৬০০-এর বেশি মানুষ মারা গেছেন দেশটিতে।

ইতালিতে মৃত্যুর সংখ্যা ৪০ শতাংশ বেশি। প্রায় ৪২ হাজার ৯০০ ব্যক্তি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মারা গেছেন। সরকারি পরিসংখ্যানে করোনায় দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৩৪ হাজারের বেশি। ব্রাজিলেও স্বাভাবিক সময় থেকে মারা গেছে ৩৮ শতাংশ বেশি, যা ১৯ হাজার ৩শ’ জন। সরকারি হিসাবে ৪৬ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন লাতিন আমেরিকার দেশটিতে।

স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৯৭ হাজার ৩০০ মানুষ বেশি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে, যা ১৬ শতাংশ বেশি। এখন পর্যন্ত দেশটিতে সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে ১ লাখ ১৯ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

রাশিয়ায় স্বাভাবিকের তুলনায় ৩০ শতাংশ মানুষ বেশি মারা গেছেন, যা সংখ্যায় ৯ হাজার ১০০। রুশ কর্তৃপক্ষ করোনায় মৃতের সংখ্যা জানিয়েছে ৭ হাজারের সামান্য বেশি। ইন্দোনেশিয়ায় মৃত্যু বেড়েছে ৫৫ শতাংশ, যা ৪ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি। আনুষ্ঠানিকভাবে ৫১৭ জন করোনায় মারা গেছেন দেশটিতে।

এদিকে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৪ লাখ ৬৮ হাজার ৯২৮ জন। মারা গেছেন ৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। অবস্থা আশঙ্কাজনক ৫৪ হাজার ৪৭৮ জনের।

সুস্থ হয়েছেন ৪৪ লাখ ৩৯ হাজার ৯২৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫৪, মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ২৬৪ জনের।

বিশ্ব তালিকায় শীর্ষে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ২২ লাখ ৩৪ হাজার ৪৭১, মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৪১ জনের। দ্বিতীয় স্থানে ব্রাজিল, দেশটিতে আক্রান্ত ৯ লাখ ৬০ হাজার ৩০৯, মারা গেছেন ৪৬ হাজার ৬৬৫ জন। তৃতীয় স্থানে থাকা রাশিয়ায় রোগী ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৩০১, মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৪৭৮ জনের। চতুর্থ স্থানে ভারত।

দেশটিতে আক্রান্ত ৩ লাখ ৬৭ হাজার ২৬৪, মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ২৫২ জনের। এরপর যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ২ লাখ ৯৯ হাজার ২৫১, মৃত্যু হয়েছে ৪২ হাজার ১৫৩ জনের। স্পেনে আক্রান্ত ২ লাখ ৯১ হাজার ৭৬৩, মারা গেছেন ২৭ হাজার ১৩৬ জন। ইতালিতে আক্রান্ত ২ লাখ ৩৭ হাজার ৮২৮, মারা গেছেন ৩৪ হাজার ৪৪৭৮ জন।

যুক্তরাষ্ট্রে আর লকডাউন হবে না -ট্রাম্প: যুক্তরাষ্ট্রে আর লকডাউন ঘোষণা করা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমরা আবার দেশ বন্ধ করব না। আমাদের তা করার দরকার পড়বে না।

এর আগে হোয়াইট হাউসের অর্থনীতি উপদেষ্টা ল্যারি কুডলো ও রাজস্ব বিভাগের সচিব স্টিভেন এমনুচিন বলেছিলেন, আর হয়তো অর্থনৈতিক শাটডাউন করবে না যুক্তরাষ্ট্র। তাদের মন্তব্যের পরপরই ট্রাম্পের লকডাউন না দেয়ার ঘোষণা এল।

রাশিয়ায় মানব শরীরে ভ্যাকসিনের প্রয়োগ: রাশিয়ায় মানব শরীরে পরীক্ষামূলকভাবে করোনভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ হয়েছে। মস্কোর গ্যামেলিয়া রিসার্চ ইন্সটিটিউটে এ পরীক্ষা চালানো হয়।

করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য স্বেচ্ছাসেবকের দুটি দল গঠন করা হয়েছে। প্রতি দলে ৩৮ জন করে রয়েছেন। এক দলের ওপর পাউডার ফর্মে করোনা ভ্যাকসিন এবং অন্য দলের ওপর তরল আকারে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে।

হিউম্যান ট্রায়াল চালাবে কিওরভ্যাক: এ মাসেই করোনা টিকার হিউম্যান ট্রায়াল চালাবে জার্মান প্রতিষ্ঠান কিওরভ্যাক। এ নিয়ে দেশটির দ্বিতীয় কোনো কোম্পানি মানবদেহে করোনার টিকা পরীক্ষার অনুমতি পেল।

বুধবার জার্মানির টিকা পরীক্ষা ও অনুমোদন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান পাউল এয়ারলিশ ইন্সটিটিউট এ তথ্য জানিয়েছে। এর আগে এপ্রিলে মার্কিন কোম্পানি ফাইজারের সঙ্গে কাজ করা জার্মানির ‘বায়নটেক’ কোম্পানিকেও এমন অনুমতি দেয়া হয়। ১৬৮ স্বেচ্ছাসেবীর ওপর পরীক্ষা চালাবে কিওরভ্যাক। এ মাসেই ১৪৪ জনকে টিকা দেয়া হবে। প্রাথমিক ফল সন্তোষজনক হলে সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে আরও বড় পরিসরে পরীক্ষা শুরু হবে।

রোগীদের জন্য প্রয়োজনে নিজের বাড়ি দিয়ে দেব -মমতা : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও গুরুতর অসুস্থ নন এমন রোগীদের জন্য ‘সেফ হাউস’ চালু করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সেখানে দিনে দু’বার চিকিৎসকরা গিয়ে রোগীদের দেখে আসবেন। শুধু যারা গুরুতর অসুস্থ তাদেরই হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।

বুধবার এ ঘোষণা দিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি জানান, রাজ্যজুড়ে ১০৪টি সেফ হাউস চালু করা হবে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে প্রয়োজনে সেফ হাউস আরও বাড়ানো হবে। এ কাজে প্রয়োজনে নিজের বাড়িটিও দিয়ে দিতে পারেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।

করোনায় মারা গেলেন আমাজনবন্ধু আদিবাসী নেতা: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মারা গেছেন পৃথিবীর ফুসফুস হিসেবে পরিচিত আমাজন জঙ্গলের অন্যতম রক্ষাকর্তা, পরিবেশবন্ধু ও পরিচিত আদিবাসী নেতা পাউলিনহো পাইয়াকান। মঙ্গলবার ব্রাজিলের রেডেনকাও শহরের একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। আমাজন বনের কায়াপো আদিবাসী গোত্রের নেতা ছিলেন পাইয়াকান।

১৯৮০ সালে বিশ্বের তৃতীয় দীর্ঘতম ব্রাজিলের বেলো মন্টে হাইড্রোইলেকট্রিক ড্যাম প্রজেক্টের প্রতিবাদ করে বিশ্বের নজরে আসেন এ আদিবাসী নেতা। তার সক্রিয় ভূমিকার কারণেই বিশ্বের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো পরিবেশ বিধ্বংসী এ বাঁধ নির্মাণের বিপক্ষে সোচ্চার হয়। পরে তীব্র আন্দোলনের কারণে দীর্ঘতম এ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় বিশ্বব্যাংক। তবে থামানো যায়নি এ বাঁধের নির্মাণকাজ।