মৃতদেহ ছড়ানো যশোর রোডে সেদিন শুধু জয় বাংলা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রাজপথে মিছিল৷ রাজপথে উল্লাস৷ গলিপথ থেকে জনস্রোত আছড়ে পড়েছিল মহাসড়কে৷ যশোর রোড তারই সাক্ষী৷ সীমান্তের ওপারে এই রাজপথে ছড়িয়ে থাকা মৃতদেহের সারি দেখে বিশ্ব স্তম্ভিত৷ আর এপারে কাঙালের আর্ত চিৎকারে জয় বাংলা৷ সেই শব্দ ছড়িয়ে পড়েছে দুই বাংলার রাজপথ থেকে দুনিয়ার সর্বত্র৷

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর৷ ঐতিহাসিক এক মুহূর্ত৷ পূর্ব দিগন্তে সূর্য সেদিনও ছিল রক্ত লাল৷ ছড়িয়েছিল বিজয় বার্তা৷ পদ্মা পারে থুড়ি বুড়ি গঙ্গার তীরে বৃহত্তর বাঙালি জাতির লাসে ঢেকে থাকা রাজপথ জুড়ে চলছিল মিছিল৷ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে তখন স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ৷

যশোর রোড কত কথা বলে…
ভিড়ে ঠাসা রাস্তা৷ ঘিঞ্জি বসতি৷ দমদম ছাড়িয়ে বারাসত হয়ে বনগাঁ তারপর সীমান্ত পেরিয়ে বেনাপোল ছুঁয়ে যশোর৷ এপারে বাংলা, ওপারে বাংলা তখন একাকার৷ এপারে চলে আসা ছিন্নমূল উদ্বাস্তু জনগণের চোখে তখন জয়ের আনন্দাশ্রু৷ আর ওপারের মাটিতে চূড়ান্ত বিজয়ের বার্তা মিশেছে পদ্মা-গঙ্গা-মেঘনার জল৷ স্মৃতির পরশে এখনো টাটকা সেই সব মুহূর্ত৷ নাম ? কেউ দীনেশ, কেউ হারাধন, ষাটের কোঠা পেরিয়ে যাওয়া এরা প্রত্যেকেই দেখেছেন ঘটনাক্রম৷

একাত্তরের উত্তাল ডিসেম্বর৷ সময় পার হচ্ছিল যেন ঝড়ের বেগে৷ সেদিন যেন সবকিছু পাল্টে গিয়েছে৷ মুহূর্তে মুহূর্তে আসছে খবর৷ সঙ্গে প্রবল চিৎকার জয় বাংলা-জয় বাংলা৷ দমদম ছাড়িয়ে কলকাতার ইতিউতি৷ আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশিরা ‘নিজের দেশ’ ফিরে পাওয়ার আবেগে মেতে উঠেছিলেন৷ তাঁদের সেই আনন্দে ভাগ নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা৷ তাঁদের অনেকেরই চোখের কোনায় তখন বিজয়ের আনন্দ টলটল করছে৷ কারও স্মৃতিতে টাটকা খুলনা, ময়মনসিংহ, কেউ ভাবছেন ফেলে আসা যশোর, কারও মনে সিলেট,বরিশাল, কেউ চাটগাঁর কথা ভেবে নিজেকে মিলিয়ে দিয়েছিলেন আনন্দ উৎসবে-বিজয় পালনে৷ রক্ত নদী পার করে তারা এসেছে.. বলছে আমি ইয়াসিন, আমি মকবুল…

ওপারের অদম্য মুক্তিযুদ্ধে মিশেছিল এপারের ভালোবাসা৷ ৭১ সালের ভয়াবহ সংঘর্ষের সময় পূর্ব পাকিস্তান থেকে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসে কঙ্কালসার মানুষের ভয়ার্ত মিছিল দেখে কেঁদেছিলেন এপারের আপনজন৷ যশোর রোড জুড়ে চলেছিল সেই মিছিল৷

তারপর যুদ্ধের পালা৷ জলে-জঙ্গলে বেগুন খেত গোয়াল ঘরের কোনা থেকে এক অসম যুদ্ধ শুরু হল৷ সুশিক্ষিত পাক বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করা তখন পূর্ব বাংলার বাঙালি গেরিলাদের কাছে চ্যালেঞ্জ৷ মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনার সাহায্যে এসেছিল চূড়ান্ত বিজয়৷ টানা ন’ মাসের সেই লড়াইয়ের ফলে মৃতদেহের স্তূপে পরিণত হওয়া পূব বাংলার বাতাসে কলমী নদীর সোঁদা গন্ধ নেই৷ সেখানে ছড়িয়েছে মৃত্যুর পচা গন্ধ৷

ক্রমাগত পাল্টে যেতে থাকা যশোর রোডের দুপাশে ধরা আছে এমনই কথা৷ বিজয়ের কথা৷ এই মুহূর্তগুলো অক্ষয় থাকবে৷ সম্পর্কের বন্ধনে বাংলা মিশবে বাংলার সঙ্গে৷

তারপর এল সেই দিন৷ শত শত ক্লান্ত মুখ জীবন নিংড়ে একযোগে বলেছিলেন জয় বাংলা৷ আপ্লুত পশ্চিমবঙ্গবাসীর কণ্ঠে মিশেছিল সেই শব্দ৷ ধরে রেখেছে যশোর রোড সেইসব কথা৷ ভিড়ে ঠাসা রাস্তায় চায়ের দোকানে গুঞ্জরিত হয় সেই দিনগুলি৷ বাংলার বিজয়ের দিন৷ সেসব কথা ধরে রাখে যশোর রোড৷ কলকাতা 24