মুকেশ আম্বানির বাড়ির সামনে বিস্ফোরকবাহী গাড়ি: রহস্য ক্রমেই দানা বাঁধছে

ভারতের সবচেয়ে ধনী শিল্পপতি ও রিলায়েন্স গোষ্ঠীর কর্ণধার মুকেশ আম্বানির মুম্বাইয়ের বাড়ির সামনে একটি বিস্ফোরক-বোঝাই গাড়ি উদ্ধার হওয়ার পর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রহস্য ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে।

ওই গাড়িটির মালিক হিসেবে যাকে চিহ্নিত করা হয়েছিল, গত শুক্রবার সেই ব্যক্তির মরদেহ পাওয়া যায় সমুদ্রের একটি খাঁড়িতে, যা মুম্বাই শহরতলিতে অবস্থিত।

তার স্ত্রী এখন অভিযোগ করছেন, যে পুলিশ কর্মকর্তা আম্বানি মামলার তদন্ত করছিলেন ওই গাড়িটি গত তিন মাস ধরে তার হেফাজতেই ছিল।

স্বামীর রহস্যময় মৃত্যুর জন্যও মুম্বাই পুলিশের দিকেই আঙুল তুলছেন তিনি।

এদিকে বিরোধীদের চাপের মুখে মহারাষ্ট্র সরকার আজ ওই বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা শচীন ভাজেকে তার পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে।

এই মামলাকে ঘিরে মুম্বাই পুলিশ বেশ চাপের মুখে আছে

এই গোটা বিতর্ক আর রহস্যের সূত্রপাত গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার বিকেলে।

মুকেশ আম্বানির প্রাসাদোপম বহুতল ‘অ্যান্টিলিয়া’ গত কয়েক বছরে মুম্বাইয়ের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ হয়ে উঠেছে, আর যথারীতি সেখানে গোটা পাড়াটাই চব্বিশ ঘন্টা কড়া নিরাপত্তায় মোড়া থাকে।

অথচ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি টানা বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে সেই বাড়ির সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল একটি স্কর্পিও এসইউভি, যার মধ্যে থেকে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক।

মুম্বাই পুলিশের মুখপাত্র এস চৈতন্য সেদিনই জানান, “পুলিশ ও বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াড ঘটনাস্থলে পৌঁছে গাড়ির ভেতর থেকে বেশ কিছু জিলাটিন স্টিক ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে।”

পরিবারের সঙ্গে মুকেশ আম্বানি

আম্বানির উদ্দেশে লেখা একটি চিঠিও ওই গাড়ির ভেতর পাওয়া যায়, যদিও তদন্তের স্বার্থে সেই চিঠির বিষয়বস্তু পুলিশ প্রকাশ করেনি।

পরবর্তী কয়েকদিনে এই মামলার তদন্ত এগিয়েছে ঝড়ের গতিতে – সেই সঙ্গেই রহস্য আরও জটিল হয়েছে।

স্কর্পিও গাড়িটির মালিক হিসেবে খুঁজে পাওয়া যায় থানের বাসিন্দা মনসুখ হিরনকে, যিনি গাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসা করেন।

অবশ্য ঘটনার কদিন আগেই তিনি গাড়িটি হারিয়ে গেছে বলে পুলিশে ডায়েরি করেছিলেন।

এরপর হঠাৎই গত ৫ই মার্চ মনসুখ হিরনের দেহ খুঁজে পাওয়া যায় থানের কাছে কালওয়া খাঁড়িতে – তার মরদেহে পরা ছিল কোভিড মাস্ক, মুখে গোঁজা ছিল বেশ কয়েকটা রুমাল।

বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা শচীন ভাজে (সবুজ শার্ট পরিহিত)। ২০০৬ সালের ছবি

মি হিরনের স্ত্রী সেদিনই অভিযোগ করেন, “পুলিশ এটাকে আত্মহত্যা বলে চালাতে চাইলেও আমার স্বামী আত্মহত্যা করতেই পারেন না। পুলিশ ওনার নামে মিথ্যা গুজবও ছড়াচ্ছে।”

“আমরা উপযুক্ত তদন্ত চাই, পুলিশি হেনস্থায় আমাদের পুরো পরিবার বিপর্যস্ত।”

এরপর মিসেস হিরন তার এফআইরে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা শচীন ভাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন – তিনি দাবি করেন ওই স্কর্পিও গাড়িটি গত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির শুরু পর্যন্ত মি ভাজের কাছেই ছিল।

শচীন ভাজে মুম্বাই পুলিশের একজন বড়কর্তা, তিনি এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট ও শাসক শিবসেনার ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত।

মনসুখ হিরানির স্ত্রীর গুরুতর অভিযোগ তিনি তা অস্বীকার করেছেন।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে

তিনি সাংবাদিকদের কাছে পাল্টা দাবি করেন, “একটা গাড়ি কারও কাছে থাকুক বা না-থাকুক, সেটা কোনও অভিযোগই হতে পারে না।”

মনসুখ হিরানির স্ত্রীর অভিযোগপত্র ভাল করে পড়ে তার প্রতিটির জবাব দিয়ে দেবেন বলেও জানিয়ে দেন শচীন ভাজে।

এদিকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ও বিজেপির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাডনবিস শচীন ভাজেকে অপসারণের দাবি তুলতে শুরু করেন মহারাষ্ট্র বিধানসভায় ।

“রাজ্যের উদ্ধব ঠাকরে সরকার কেন একজন বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ পুলিশ কর্মকর্তাকে বাঁচাতে চাইছে, কী তাদের স্বার্থ?”, সেই প্রশ্নও তোলেন মি ফাডনবিস।

মহারাষ্ট্রের বিরোধী দলনেতা, বিজেপির দেবেন্দ্র ফাডনবিস

“শচীন ভাজে এই মামলার তদন্ত করছেন না, এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অ্যান্টি টেররিজম স্কোয়াডকে”, গতকাল পর্যন্ত এই যুক্তিই দিয়ে এসেছিলেন মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ।

কিন্তু মনসুখ হিরনের পরিবার ও বিরোধীদের প্রবল চাপের মুখে বুধবার দুপুরে ক্রাইম ইনটেলিজেন্স ইউনিট থেকেও তাকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার।

তবে রহস্য তাতে আরও দানা বেঁধেছে, ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির বাড়ির বাইরে কারা বিস্ফোরক-বোঝাই গাড়ি রেখেছিল ও কেন – সে প্রশ্নটাই তাতে আরও ঘোলাটে হয়ে উঠেছে।