মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

 

শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয় বলে কারা সূত্র জানিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত ষষ্ঠ ব্যক্তির ফাঁসি রায় কার্যকর হলো।

 

কারাগারের জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক সাংবাদিকদের বলেন, রাত ১০টা ৩০ মিনিটে সময় ফাঁসি কার্যকর হয়। ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে পৌঁছে দেওয়া হবে।

 

এর আগে মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় কার্যকর করতে সকাল থেকেই শুরু হয় কর্মতৎপরতা। সকাল থেকেই গাজীপুরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। কাশেমপুর কারাগারের চারপাশে বসানো হয় বাড়তি চেকপোস্ট।

 

কারাগারের সামনে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্যে সিনিয়র জেল সুপার বলেন, রাত ১০টার পরই মীর কাসেম আলীকে ফাঁসির মঞ্চে তুলে গলায় ফাঁস পরানো হয়। আর এরপর ফাঁসি দিয়ে ঠিক রাত ১০টা ৩০ মিনিটে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

 

মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষনেতা ছিলেন এই মীর কাসেম আলী। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলের নির্যাতনকেন্দ্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনকে হত্যার দায়ে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয় তাকে। সেই দণ্ডই কার্যকর করা হলো শনিবার রাতে।

 

স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর এটি হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার ষষ্ঠ ফাঁসির রায় কার্যকর, যার মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা হলো চট্টগ্রাম অঞ্চলের এই মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতাকে। এর আগে ফাঁসি কার্যকর হওয়া অন্য পাঁচ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে চারজনই জামায়াতের এবং অন্যজন ছিলেন বিএনপির সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতা।

শনিবার রাতের মধ্যেই মীর কাসেম আলীর মরদেহ মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চালা ইউনিয়নের চালা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে তার পরিবার-পরিজনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। রোববার (০৪ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে সেখানকার কবরস্থানে তার নামাজে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে।

 

জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের (জমিয়তে তালাবা) পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মীর কাসেম একাত্তরে ছিলেন আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষনেতা। মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বিরোধিতাকারী জামায়াতের হয়ে তার নেতৃত্বেই চট্টগ্রাম অঞ্চলে নৃশংসতম নারকীয় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করে এই বাহিনী। বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল তালিকা প্রণয়নকারীদেরও একজন তিনি। আর ফাঁসি হওয়া পর্যন্ত ছিলেন জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য।

 

একাত্তরের মূল ঘাতক ও জামায়াতের শীর্ষনেতা এবং দেশের এই প্রভাবশালী ধনকুবেরের ফাঁসি কার্যকরের ঘটনায় দেশের জন্য তাই রচিত হলো আরও একটি নতুন ইতিহাস।

 

কারাগারে সিভিল সার্জন ও অ্যাম্বুলেন্স

কারাফটকে ৮টা ৪০ মিনিটে বাংলাদেশ পুলিশের তিনটি অ্যাম্বুলেন্স আনা হয়। পরে ৮টা ৫০ মিনিটে সিভিল সার্জন ডা. হায়দার আলী খান অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে কারাগারে প্রবেশ করেন।

 

কারাগারে আইজি প্রিজন্স

সন্ধ্যা ৭টার দিকে আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ কাশিমপুর কারাগারে প্রবেশ করেন।

 

ঢাকা ও গাজীপুরে বিজিবি মোতায়েন

মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকরের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুরে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে ছয় প্লাটুন এবং গাজীপুরে চার প্লাটুন।

 

স্বজনদের সাক্ষাৎ

বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে কারাগারে শেষ সাক্ষাৎ করতে আসেন মীর কাসেমের পরিবারের সদস্যরা। ৪২ জনের ওই দলের ৩৮ জন সদস্য মীর কাসেমের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান। প্রায় আড়াই ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে পৌনে ৭টায় কারাগার থেকে তারা বের হন।

 

কারাগারে অতিরিক্ত আইজি প্রিজন্স

দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে প্রথমে কারাগারে আসেন অতিরিক্ত আইজি প্রিজন্স কর্নেল ইকবাল কবির। পরে ডিআইজি প্রিজন্স গোলাম হায়দারসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কারাফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন।

সূত্র:রাইজিংবিডি