মিয়ানমারের অজুহাতেই বিলম্বিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমার থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এলেও শুধু গত বছরের আগস্টের পর থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছৈ কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে।

বিপুল সংখ্যক এ জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বারবার আশ্বাস দিয়েও দৃশ্যত কোনো কাজ করছে না দেশটি।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, তাদের আশ্রয়দানসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে  রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান করা শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আটকে রয়েছে মিয়ানমারের বিলম্বের নতুন অজুহাতে।

তিনি বলেন, জনবহুল বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে রাখার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। আমরা মানবিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তাদের আশ্রয় দিয়েছি।

‘আমার দেশে ১৬ কোটি মানুষের বসবাস। আমি অন্য কোনো ভার নিতে পারি না। আমার দেশ এটা বহন করতে পারবে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, শরণার্থী ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াতে চাই না। আমরা শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে তাদের নিজভূমে নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে ফেরত পাঠাতে চাই।

এর আগেও অবশ্য বিভিন্ন সময় মিয়ানমারের সঙ্গে এ ইস্যুতে চুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ প্রয়োগে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তবে এ বিষয়ে রয়টার্সকে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জাও হিতাই কোনো মন্তব্য করেননি। তবে সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, তারা সবকিছুতেই সম্মত হয়, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে অনুযায়ী, কাজ করেন না। এটাই সমস্যা। সবকিছুই প্রস্তুত হয়ে আছে কিন্তু সবসময় তারা নতুন অজুহাত খোঁজেন।

মিয়ানমার সরকার এর আগে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দেয়। এমনকি প্রাথমিক প্রত্যাবাসনের জন্য ট্রানজিট সেন্টার নির্মাণের কথাও বলেছে দেশটি। তবে সেভাবে কথা রাখছে না মিয়ানমার সরকার।

মিয়ানমারের বিলম্বের কারণে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে নোয়াখালীর জেলার হাতিয়ার ‘ভাসান চরে’ রোহিঙ্গাদের জন্য বসতি নির্মাণের প্রস্তুতি নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মূল ভূ-খণ্ডে তাদের (রোহিঙ্গা) জন্য স্থায়ী আবাস নির্মাণ সম্ভব নয়। তারা মিয়ানমারের নাগরিক। তাদের সেখানেই (মিয়ানমার) ফিরে যেতে হবে।

এদিকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ‘বড় আকারের’ হামলার জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট।

সম্প্রতি জাতিসংঘের প্রতিবেদনেও রাখাইনে গণহত্যার অভিযোগ তোলা হয়েছে। এজন্য সেনাবাহিনীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতও (আইসিসি) বলেছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত ঘটনা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কি-না, সেই বিষয়ে তারা তদন্ত করতে পারে।

বিশ্ব সম্প্রদায়ের এই চাপের কারণে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছালেও শুরু থেকেই এতে গড়িমসি করছে মিয়ানমার। ক’দিন আগে খোদ সু চিই বাংলাদেশকে দায়ী করে বলেন, বাংলাদেশের কারণেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগোচ্ছে না।

গত বছরের আগস্টে রাখাইনে সেনাবাহিনীর নিধনযজ্ঞ শুরু হলে প্রাণ বাঁচাতে সেখান থেকে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তারপর থেকে নিন্দা-সমালোচনার তোপে রয়েছে সু চি’র সরকার।