সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
জার্মানির মিউনিখ শহরে একটি ব্যস্ত বিপণিবিতানে হামলা চালিয়ে অন্তত আটজনকে হত্যা করেছে অস্ত্রধারীরা, যাকে সন্ত্রাসী হামলা বলছে দেশটির পুলিশ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মিউনিখের অলিম্পিয়া শপিং সেন্টারে এ হামলার পর জার্মানির তৃতীয় বৃহত্তম শহরটিতে গণপরিবহন চলাচল বন্ধের পাশাপাশি মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে লোকজনকে রাস্তায় বেরোতে নিষেধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
পুলিশের এক মুখপাত্র বলেছেন, হামলার পর তিন বন্দুকধারী পালিয়ে গেছে। পুলিশ তাদের খোঁজে থাকায় শহরটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
“আমরা মিউনিখের বাসিন্দাদের বলছি, গুলিবর্ষণকারীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে, যারা বিপজ্জনক। আমরা লোকজনকে ঘরের মধ্যে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি,” বলেন তিনি।
হামলাকারীদের একজন নিহত হয়েছেন বলে মিউনিখের সংবাদপত্র টি জেড জানিয়েছে। জার্মানির সংবাদ সাময়িকী ফোকাস বলছে, এক বন্দুকধারী নিজের মাথায় গুলি করেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এ দুই সংবাদের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পুলিশ বলেছে, হামলায় আটজন নিহত হয়েছেন এবং অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষ আহত হয়েছেন। তারা এটাকে সন্ত্রাসী ঘটনা হিসেবে দেখছেন। নবম একটি মৃতদেহও পাওয়া গেছে এবং সেটি কোনো হামলাকারীর কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
হামলার পর যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জার্মানিতে অবস্থানরত নাগরিকদের মিউনিখের ওই এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন হামলায় দুঃখ প্রকাশ করে জার্মানিকে যে কোনো ধরনের সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন।
হামলার নিন্দা জানিয়ে জার্মানিকে সব ধরনের সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
হোয়াইট হাউজে এক বৈঠকের আগে তিনি বলেন, “আমরা জানি না, সেখানে আসলে কী হচ্ছে। তবে যারা আহত হয়েছেন, তাদের জন্য আমাদের হৃদয় কাঁদছে।
“তাদের যেসব সহযোগিতার দরকার হতে পারে তা দিতে আমরা অঙ্গীকার করছি।”
হামলার পর শহরে স্পেশাল ফোর্স মোতায়েন করা হয়। প্রাণ বাঁচাতে কয়েকজন অলিম্পিয়া শপিং সেন্টারে লুকিয়ে থাকেন, যাদের পরে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
“অনেক গুলি হয়েছে। ঠিক কতোগুলো গুলি হয়েছে তা আমি বলতে পারছি না, তবে এ সংখ্যা বহু, ” বিপণিবিতানের একটি স্টোর রুমে লুকিয়ে থেকে টেলিফোনে রয়টার্সকে বলেন এক দোকান কর্মী।
মাত্র আট দিনের মধ্যে পশ্চিম ইউরোপে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে এটি তৃতীয় দফায় হামলা চালানো হল। এর আগে জার্মানির ভুর্সবুর্গ এবং ফ্রান্সের নিস শহরে হামলার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস।
পুলিশের এক মুখপাত্র বলেছেন, ইসলামি জঙ্গিরা এ হামলা চালিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার ছিল নরওয়েতে আন্দ্রেস বেহরিং ব্রেইভিকের গুলি চালিয়ে ৭৭ জনকে হত্যার পঞ্চম বার্ষিকী। ইউরোপ ও আমেরিকার ডানপন্থি জঙ্গিদের কাছে ব্রেইভিক বীরের মর্যাদা পায়।
আইএস সমর্থকদের উল্লাস
কেউ হামলার দায় স্বীকার না করলেও সোস্যাল মিডিয়ায় আইএস সমর্থকরা উল্লাস প্রকাশ করেন।
“আল্লাহ শুকরিয়া, আল্লাহ আমাদের ইসলামিক স্টেটের লোকদের সমৃদ্ধি দাও,” বলা হয়েছে এক টুইটে।
আরেক টুইটে বলা হয়, “ইসলামিক স্টেট ইউরোপে বিস্তৃত হচ্ছে।”
দুই প্রত্যক্ষদর্শী এন-টিভি টেলিভিশনকে বলেন, সান্তা ক্লজের পোশাকে এক ব্যক্তিকে হামলাস্থল থেকে জনতার সঙ্গে চলে যেতে দেখেছেন তারা। একজন বলেন, সোনালী চুলের ওই ব্যক্তির হাতে অস্ত্র ছিল না, তবে একটি স্যুটকেস ছিল।
অনলাইনে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে ম্যাকডোনাল্ডসের একটি শাখার বাইরে কালো পোশাক পরা এক ব্যক্তি বন্দুক উঁচিয়ে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়ছে। তবে ওই ভিডিওর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
বিপণিবিতানের একটি দোকানের কর্মী হারুণ বাল্টা বলেন, “আমরা এখনও মলের মধ্যে আটকে আছি। বাইরের কোনো খোঁজ-খবরও পাচ্ছি না। উদ্ধার পেতে আমরা পুলিশের অপেক্ষায় আছি।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিপণিবিতানের ভিতরে এবং কাছাকাছি দুটি রাস্তায় গুলিবর্ষণ করতে দেখেছেন তারা।
হামলার পর মিউনিখের প্রধান রেলস্টেশন থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। বিআর টেলিভিশন জানিয়েছে, মিউনিখের উত্তরের অনেক মহাসড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং লোকজনকে সেগুলোতে থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে।
মিউনিখের অলিম্পিক স্টেডিয়ামের ঠিক পাশেই এই বিপণিবিতান, যেখানে ১৯৭২ সালে অলিম্পিক গেমসের সময় ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠী ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর ১১ ইসরায়েলি অ্যাথলেটকে জিম্মি করার পর হত্যা করেছিল।
জার্মানির ভুর্সবুর্গে শরণার্থী এক আফগান কিশোর ট্রেনের ভেতরে ছুরি ও কুড়াল নিয়ে হামলা চালিয়ে চার যাত্রীকে আহত করার এক সপ্তাহ পর এ শুক্রবারের হামলা হল।
হামলার আগে জার্মানির বিচারমন্ত্রী হাইকো মাস একটি পত্রিকাকে বলেন, “আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে এটা স্পষ্ট যে, জার্মানি এখনও হামলার টার্গেট হয়ে আছে।”
গত ১৪ জুলাই বাতিল দিবসে ফ্রান্সের নিস শহরে একটি উৎসবে এক তিউনিসীয় নাগরিক দ্রুতগতির ট্রাক উঠিয়ে ৮৪ জনকে হত্যার পর জার্মানিতে পরপর দুটি হামলার ঘটনা ঘটল। নিসের ওই হামলার দায় স্বীকার করেছিল আইএস।
সূত্র: বিডি নিউজ